সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব – ৩৫)

দেবমাল্য

রণোই তাকে বলেছিল রাজীবের কথা। স্টার আনন্দে কাজ করে। প্রচুর লোকের সঙ্গে জানাশোনা আছে। প্রায় প্রতিদিনই বিকেলের দিকে একেবারে নিয়ম করে এস পি-র ঘরে আড্ডা মারতে যায়। ওই থানার বড়বাবুর সঙ্গেও খুব খাতির। ও যদি একবার বলে দেয়…

দেবমাল্য জিজ্ঞেস করেছিল, কোথায় থাকে?

— এই তো কাছেই। বাবুলবোনা রোডে। আমাদের বাড়ির কয়েকটা বাড়ির পরেই। ভেতর দিয়ে হেঁটে গেলে দশ মিনিটও লাগবে না।

— তাই? তা হলে চলো।

‘চলো’ বলেছিল ঠিকই, কিন্তু মনের মধ্যে খিচখিচ করছিল একটা সংশয়। সে-ও এই পুলিশ অফিসারটির মতো খারাপ ব্যবহার করবে না তো! মাথা মুছতে মুছতে রাজীবকে ঘরে ঢুকতে দেখেই তার সেই সংশয় মুহূর্তের মধ্যে উবে গেল।

কাউকে কাউকে দেখে ওর এ রকম হয়। চেহারা দেখেই বুঝতে পারে লোকটা কেমন। একবার একটা বারো-তেরো বছরের ছেলেকে থামের সঙ্গে বেঁধে কালীবাবুর বাজারের ফলপট্টির লোকেরা খুব মারছিল। টাল দিয়ে রাখা কাঁঠাল থেকে সে নাকি একটা কাঁঠাল চুরি করে পালাচ্ছিল। কে নাকি হাতেনাতে ধরেছে।

ও তখন সবেমাত্র কারখানায় ঢুকেছে। কারখানার পাশেই ফলপট্টি। খবর পেয়ে ও গিয়ে দেখে, মার খেয়ে খেয়ে ছেলেটা একেবারে নেতিয়ে পড়েছে। থামের সঙ্গে মোটা মোটা দড়ি দিয়ে বাঁধা না থাকলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ত। তখনও কেউ কেউ চড়চাপড় মারছে। চুলের মুঠি ধরে টানছে। ছেলেটিকে দেখে ওর মনে হয়েছিল, ছেলেটি আর যা-ই হোক, চোর নয়।

ওখান থেকে সরে এসে, খানিকটা দূরে গিয়ে নিজের নাম গোপন করে থানায় ফোন করেছিল ও। আর তার কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ এসে ছেলেটিকে উদ্ধার না করলে যে কী হত, কে জানে! পরে জানা গিয়েছিল, ছেলেটি ভদ্রঘরের ছেলে। ওদের বাড়িতে অনেকগুলো খরগোশ আছে। তারা আবার কলমিশাক ছাড়া কিছু খেতে চায় না। অথচ ঝুড়িতে আর একটাও কলমিশাক নেই। তা হলে ওরা কী খাবে! তাই স্কুল থেকে এসেই জামাপ্যান্ট ছেড়ে মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ও কলমিশাক আনার জন্য বাজারে গিয়েছিল। বাড়ির কাছেই বাজার।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।