Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গারো পাহাড়ের গদ্যে জিয়াউল হক

maro news
গারো পাহাড়ের গদ্যে জিয়াউল হক

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রেজাউল করিম

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রেজাউল করিম, এফ.এফ. ভারতীয় তালিকা নম্বর-৪৭৬১৮, গেজেট নম্বর যশোর সদর-০৪৪, লাল মুক্তিবার্তা নম্বর-০৪০৫০১০১২১, সমন্বিত তালিকা নম্বর-০১৪১০০০২০৯৪, মোবাইল নম্বর-০১৭২৮০৭৭৭১১, পিতা ঃ মনসুর আলী, মাতা ঃ আকুরা বেগম, স্থায়ী ঠিকানা ঃ গ্রাম ও ডাকঘর ঃ হালসা, উপজেলা ঃ যশোর সদর, জেলা ঃ যশোর। বর্তমান ঠিকানা ঃ ঐ। ৪ ছেলে ২ মেয়ের মধ্যে রেজাউল ইসলাম ছিলেন বাবা মায়ের জ্যেষ্ঠ সন্তান। ১৯৭১ সালে তিনি যশোর জেলার ঝিকড়গাছা থানার মশিউর রহমান ডিগ্রি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। ১৯৭০ সালের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনের সময় রেজাইল করিম তাদের এলাকার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রাথীর পক্ষ্যে নির্বাচনী প্রচার কাজে অংশগ্রহণ করেন। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করার পরও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান তাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় দেশের বিপ্লবী জনতা রাস্তায় নেমে এসে সরকারের বিরুদ্ধে প্রচন্ড গণআন্দোলন শুরু করেন। সমগ্র বাঙালি জাতি তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার জন্য ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের এক বিশাল জনসভায় ভাষণ প্রদান করেন। তিনি তার ভাষণে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলে শত্রুকে মোকাবেলা করার আহবান জানানোর সাথে সাথে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। সারা দেশে শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনে রেজাউল করিমও যে কোন মূল্যে দেশকে শত্রুমুক্ত করার শপথ গ্রহণ করেন। দেশের এই উত্তপ্ত পরিষ্টিতি সামাল দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ঢাকায় এসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনায় মিলিত হন। ৬ বার বৈঠকে বসার পরও আলোচনার কোন অগ্রগতি না হওয়ায় ২৪ মার্চ বিকেল বেলার সেনাবাহিনীকে বাঙালিদের উপর আক্রমণের নির্দেশ প্রদান করে তিনি ঢাকা ছেড়ে পশ্চিম পাকিস্তানে পাড়ি জমান। তার নির্দেশ মোতাবেক ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনারা সারা বাংলাদেশের উপর আক্রমণ করে মানুষ হত্যা শুরু করে। ২৬ মার্চ সকাল থেকেই যশোর এলাকার বিপ্লবী জনতা বাঁশের লাঠি এবং অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র সজ্জিত হয়ে যশোর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করে সেখানে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেন। রেজাউল ইসলাম তার চাচার বন্দুক নিয়ে এই ঘেরাওতে অংশগ্রহণ করেন। শত্রুসেনাদের গুলির মুখে অবশেষে জনতার অবরোধ ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। ২৮ মার্চ শত্রুরা যশোর শহরে প্রবেশ করে শহর প্রতিরোধে অংশগ্রহণ করা জনতার উপর গুলি করে বেশ কিছু সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। রেজাউল ইসলাম তখন গ্রামে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন। মে মাসের শেষের দিকে পূর্ব শপথ অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের জন্য তিনি দেশ ছেড়ে ভারতের পথে যাত্রা করেন। তারপর বাংলাদেশের বর্ডার পার হয়ে ভারতের ২৪ পরগনা জেলার টালিখোলা ইয়ুথ ক্যাম্পে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন। সেখানে কিছু দিন অবস্থান করার পর তাদের চাঁপাবাড়িয়া ইয়ুথ ক্যাম্পে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে আরও কিছু দিন অবস্থান করার পর মুক্তিযুদ্ধের উচ্চতর প্রশিষক্ষণের জন্য বাছাই করে রেজাউল করিমদের বিহার রাজ্যের চাকুলিয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়। সেখানে ৩০ দিন প্রশিক্ষণ শেষে তাদের কল্যাণি, দত্তফুলিয়া হয়ে বয়রা সাব-সেক্টরে প্রেরণ করা হয়। বয়রা থেকে আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধার একটা গ্রুপ গঠন করে রেজাউল করিমদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ প্রদান করা হয়। তারপর তাদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রেরণ করা হয়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে এই মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপটি যশোর ক্যান্টনমেন্টের উত্তর পশ্চিম পাশের গাবিলা গ্রামে সেল্টার গ্রহণ করেন। সেখান থেকে তারা প্রথম চুরামনকাঠি বাজারের পাশের টেলিফোন লাইন কেটে শত্রুসেনাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। তারপর তারা এক্সপ্লোজিভ বিস্ফোরণ ঘটিয়ে যশোর-কুষ্টিয়া ট্রেন লাইলেন হায়বতপুর ব্রিজের নিকট লাইন ধ্বংস এবং পাশের ৩৩,০০০ ভোল্টের বিদ্যুতের খুঁটি উড়িয়ে দেন। পরের দিন পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা তাদের সেল্টারে পাশের সাজিয়ালী গ্রাম আক্রমণ করে লুটপাট শুরু করলে এলাকায় অবস্থানরত ২ গ্রুপের মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করে শত্রুদের বিতাড়িত করতে সক্ষম হন। এই আক্রমণে ৫ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। তারপর রেজাউল করিম আলাউদ্দিনের গ্রুপ ছেড়ে মোশাররফ হোসেনের গ্রুপে যোগদান করে ঝিকরগাছা থানার ধূলিয়ানী গ্রামে সেল্টার গ্রহণ করেন। ৩ ডিসেম্বর নিয়মিত যুদ্ধ শুরু হলে রেজাউল করিম উজিরপুর থেকে বুরুন্ডি যাওয়ার পথে ভারতীয় সেনাদের মাইন অপসারণে সহযোগিতা করেন। সেখানে তুমুল ট্যাংক যুদ্ধের পর পাকিস্তানি সেনারা পরাজিত হয়ে যশোর ক্যান্টনমেন্টে থেকে খুলনার দিকে পালিয়ে যায়। তার মাত্র কয়দিন পর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। রেজাউল করিমদের মতো লক্ষ মুক্তিসেনা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলেন। তাইতো তাদের জানাই লক্ষ কোটি সংগ্রামী সালাম।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register