Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গুচ্ছকবিতায় অঞ্জলি দে নন্দী, মম

maro news
গুচ্ছকবিতায় অঞ্জলি দে নন্দী, মম

দুকাল

বৃষ্টি রানী পড়ে মেঘের ছড়াপাত। আকাশ থেকে ঝরে বজ্রপাত। নদী, পুকুর, সাগর পড়ে বাদলের ধারাপাত। ব্যাঙেরা গায় গান। মাছেদের তাজা তাজা তাজা প্রাণ। মুকুট শিরে আনারসের বড়ই মান! কলার ভেলা ভাসিয়ে জলে দুষ্টু যত ছেলের দলে যেথা খুশি সেথা চলে। খুব মজা হয় জন্মাষ্টমীর রাতে! কাঁশর, ঘন্টা বাজায় সবাই একসাথে। আট কলাই ভাজা হাতে হাতে হাতে। বর্ষাকালে সন্ধ্যায় গোয়ালে গোয়ালা যত ধোঁয়া দিয়ে তারায় মশা কত কত কত... গাভীদের তারা যত্ন করে মাতার মত। বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে লাটাই ও ঘুড়ি কিনে ওরা ওড়ায় যত দামাল ছেলে। রংবেরঙের পতং আকাশে ভাসে। ভোকাট্টার লড়াই খেলে খেলে খেলে ওরা মনের খুশিতে হাসে। ওই দিনই আবার ওরা অরন্ধনের বাসি প্রসাদ খেতেও বড় ভালোবাসে। শরৎকালে মনরোম নীলিমার 'পরে আনমনা টুকরো মেঘেদের ইধার উধার ঘোরা। আর শিল্পীগণ মা শ্রী দুর্গা দেবীর মূর্তি গড়ে, অন্তরের ভক্তি ও নিপুনটা উজাড় করে। বর্ষায় শ্রী দেবী বিপত্তারিণী মায়ের তাগায় জীবন থেকে বিপদ দূর ভাগায়। ব্রতের বিশ্বাস মনে শুদ্ধতা জাগায়।

চিত্তপটে চিত্রগুপ্তের চিত্র

মিষ্টার চিত্রগুপ্ত। মনে আছে এক বাসনা তাঁর সুপ্ত। চিরকালই মর্তের সবায়ের কাছে তিনি বড্ড খারাপ! শুধু প্রাণ নেওয়াই তাঁর কাজ। তাই হৃদয়ে তাঁর এক নব ভাবনা এলো আজ। প্রাণ হরণ করে উনি আর করবেন না পাপ। পূজিত হবেন তিনিও মর্তের ঘরে ঘরে ঘরে। তাই উনি বদলে ফেললেন চির ভুল মৃত্যু আইন। ঘোষণা করলেন তিনি মর্তলোকে, মৃত্যুর পরে, আমার সামনে এসে যে দেবে ফাইন, ফের জীবন্তরূপে মর্তে ফিরবে সে, পুনঃ প্রত্যাবর্তনের হাসি হেসে হেসে হেসে। হ্যাঁ, কি সে জরিমানা-ফাইন? সেটা হল-এসে তাঁর যমলোকে, মৃতের প্রেতাত্মাকে নাচতে হবে। তা হতে হবে, ফ্যান্টাস্টিক, ফাইন আর্ট, একদম ফাইন! এরপরে, মর্তের সব মানুষ সারা জীবন ধরে শুধু নাচই প্র্যাকটিস করলো। হতে হবে যে তা একদম ফাইন! চিত্রগুপ্ত মহাশয়ের নব আইন। তা মানুষকে অমর করলো। আর তাই সব্বাই তাঁকে মর্তের ঘরে ঘরে ঘরে অমরত্বের দেবতা বলে পুজো করলো। সব্বাই অন্তরের মানস পটে তাঁর ছবি আঁকে। অর্চনা করে ভক্তিভরে তাঁকে জল পূর্ণ পুণ্য ঘটে। আগের মৃত্যু দুঃখের মর্তলোক এখন ত্যাগ করে ব্যাথা, বেদনা, শোক, শুধুই আনন্দ, খুশি, সুখের পথে চলে।

 বৃষ্টি ও আমি

ঝমঝমিয়ে ঝরছে বৃষ্টি। বাদল হাওয়া মাদল বাজায়। আকাশ শুধুই মেঘ সাজায়। মেঘের বুকে হচ্ছে সৃষ্টি ঝলকানি বিদ্যুৎ ছটা। গুড়ুম গুড়ুম গুড়ুম আওয়াজ। পড়ছে ঝকাস বাজ। প্রকৃতিতে আঁধার ঘনঘটা। নদীর বান জলে ভেসে চলে দলে দলে দলে কচুরি পানা। ফেনা যত ঢেউয়ের পরে করে করে আর করে কুচকাওয়াজ। মৎসের আশায় ধীবরের জাল টানা। উচ্চ ঘরে কাঁচের জানালার ভিতর দিয়ে আমার আঁখি দেখে আশ মিটিয়ে। সিক্ত পাখি কত গায়ে গা ঠেকিয়ে বসে আছে সিঁটিয়ে। বৃষ্টির দর্শক আমি একাই কি হে! কান্ড এ কি এ? অবিরাম ঝরছে, সারা দিনরাত। ব্যাঙের গ্যাঙর গ্যাং গীত ধ্বনি দিচ্ছে বৃষ্টির নৃত্যে সাথ। আমার একাকীত্ব আমার অদৃষ্ট। এ তো নয় আর বৃষ্টির সৃষ্ট।

ওপরের দে-বাবু

আমাদের চার তোলার, ওপোরের ঘরে, ভাড়া থাকেন দে-বাবু। একাই থাকেন। খান নিজের হাতেই রান্না করে। ব্যাচেলার, উনি। বড় গুনি! শখ আছে, ফোটো তোলার। সংগীতজ্ঞ, বিখ্যাত, উনি! ভোরে গলা সাধেন। মধুর-মধুর, গান বাঁধেন। আমি ছাদ থেকে শুনি। উনি ক-দিন ধরে, খুব কাবু, জ্বরে। কম্বলে, গা ঢাকেন। দরজা, জানলা, সদাই বন্ধ রাখেন। ওষুধ খাচ্ছেন, পাড়ার ডাক্তার, এম. বি. বি. এস., ভোলার। পথ্য, জলসাবু। নিজেই বানাচ্ছেন, ডুবিয়ে ডুবিয়ে, ডাবু........ নমক মিশিয়ে খাচ্ছেন। কাঁচের গ্লাসে ঢেলে, ঢেলে...... অবশেষটা, দিচ্ছেন বেসিনে ফেলে। আমি গেলাম তাঁর কাছে। বোল্লাম, আমাদের নিচের ঘরে চলুন! উনি বোল্লেন, না না, এই তো বেশ আছি! আমি বোল্লাম, না না না, শুনবো না, কোনোই মানা! আমার সাথে চলুন! উনি বোললেন, যাই, তবে চলুন! উনি রইলেন, আমার ঘরে, কাছাকাছি। ক'দিন পরে, উঠলেন, উনি, সেরে। আবার চোলে গেলেন, ওপোরে। আবার গাইলেন, গলা ছেড়ে। আর এখন আবার, দরজা, জানলা খুলে রাখেন। আমি আবার কানপেতে শুনি....... আমাকে উনি, নন্দী-ভাইয়া বলে ডাকেন। প্রিয় উনি, খুব, আমার বাবার!
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register