[ডিনার...মিডনাইটস্ প্রাইড]
" আমি স্রোতস্বিনী মল্লিক.... আমি এতদিন লন্ডনে থাকতাম....আমার গ্র্যান্ডমম্ ভূমিসূতা বসুমল্লিক... আমার গ্র্যানী একজন সায়েন্টিস্ট কাম অন্ত্র্যাপ্রেন্যুয়...আর্দি ম্যাজিক ব্র্যান্ডের ওনার...."
"খুব ভালো স্রোতস্বিনী... এবার তোমার পেরেন্টের কথা বলো ডিয়ার..."
প্রিস্টেস অগ্নিরূপার প্রশ্নটা যেন তীরের মতো এসে আমার গায়ে বিঁধলো... এই একটা প্রশ্ন সারাজীবন আমাকে তাড়া করে বেড়িয়েছে....আর আমার মনের ভিতরটা এক বিষাক্ত লাভা উদগীরণে জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে গেছে.... আজ ইসপ্যামাতে এসেও আমি রেহাই পেলাম না....সেই একই পরিস্থিতির সামনে এসে দাঁড়ালাম...তবে তাই হোক...আমিও পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়ানোর জন্য মনকে প্রস্তুত করলাম...
" আমার মা..... দেবলীনা বসুমল্লিক.... একজন সুপারমডেল....কাম এ্যাকটর....আর আমার বাবা... আমি আসলে... মানে.... আমার মা সিঙ্গল পেরেন্ট...
আমার বাবা কে.... তার নাম কি....আমি সেটা জানি না...
স্পষ্ট বুঝতে পারলাম.....এক নিমেষে হলের প্রত্যেকে এবং স্টেজের উপরের সবাইও আমার দিকে তাকিয়ে স্থির হয়ে গেল.....আলোহা দের গ্রূপটাতে একটা অস্থিরতা... মুভমেন্ট....কিছুটা ফিসফিস্ হচ্ছে বুঝতেই পারলাম... আমি নিশ্চিত... একটু আগের ঘটনাটা না ঘটলে, মিট্টির থেকে বাজে পরিণতি যে আমারও হোতো তা আর বোঝার অপেক্ষা রাখে না... আমার সদ্য হওয়া বন্ধুরাও আমার দিকে একটু অবাক হয়েই চুপচাপ তাকিয়ে আছে। তবে আমার এসব অভ্যাস আছে.....
"ইটস ওকে ডিয়ার...এবার তুমি তোমার গিফ্ট টা ট্রে তে রাখো....আমরাও দেখি তুমি কোন গডেসের ব্লেসিং পেলে...."
আবার ঝামেলা.... আমি কি বলি?? আর কিই বা রাখি... আমার কপালে যে সবই অন্যরকম...আমি তো আর সবার মতো একটা গিফট পাইনি!!!!
"ম্যাম্... আমি মানে.... আমি..."
"কি হলো? তুমি কি ব্যাগ টা আনতে ভূলে গেছো??তাহলে তোমাকে আবার যেতে হবে...."
প্রিস্টেস অগ্নিরূপার স্বর সামান্য অধৈর্য্য....
"না ম্যাম আমি.... আমি...." বলতে বলতেই আমি আমার ব্যাগ টা ট্রের উপর রেখে দিলাম...যা থাকে কপালে...যত উল্টোপাল্টা আমার সাথে হলে আমি কি করবো.....
প্রথমে ব্যাগ টা থেকে একটা হাল্কা আলোর আভা বেরিয়ে এল...তারপর....প্রথমে বেরোলো গডেস্ হেকেটির গিফট...গোল্ডেন চ্যাপলেট বা মাথা ঘিরে পরার মুকুট.....তার পর একে একে গডেস কুরুকুল্লার পদ্মফুল....গডেস্ নিক্সের সাদা পাথরওয়ালা আংটি..আর সবশেষে বেরোলো গডেস মহাকালীর আশীর্বাদ...সেই টকটকে লাল জবা বা হিবিসকাস্ ফুল.... আমার মাথার উপরে চারপাশে গোল হয়ে চক্রাকারে ঘুরতে লাগলো গিফট গুলো...
"ওঃ গডেস্...এ আমি কি দেখছি..!!!!... একসঙ্গে চারটে ব্লেসিং গিফ্টস্!!!"
প্রিস্টেস অগ্নিরূপার কাঁপা কাঁপা বিস্মিত গলা.....
আমি দেখলাম হলে উপস্থিত প্রত্যেকটি প্রাণী উঠে দাঁড়িয়েছে....স্টেজে বসে থাকা প্রত্যেক প্রিস্ট এবং প্রিস্টেস সহ.... শুধু অনিন্দিতা ব্যতিক্রম....
প্রফেসর হাসান আমার কাছে এগিয়ে এলেন....
"এ কি কান্ড করেছ স্রোত !!!!...ইসপ্যামার ইতিহাসে এই প্রথম..... একসঙ্গে চারজন গডেসের ব্লেসিং গিফ্ট!!!"... আমি বোকার মতো মুখ করে কি বলবো কিছুই বুঝতে না পেরে একটু হাসলাম... তারপর চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম....
"আমরা তোমার জন্য গর্বিত.... আমি নিশ্চিত.... আমরা একজন অসাধারণ ইসপ্যামিয়ন পেতে চলেছি..." প্রিস্টেস রোশনাই জাহানের খুশীভরা গলা......
"এ ও কি সম্ভব....!! এযে অবিশ্বাস্য".... পিছন থেকে প্রিস্টেস তাশির অবাক হওয়া গলা.......
আমি দেখলাম.... আমার বন্ধুরাও অবাক হয়ে খানিকটা সম্ভ্রমের চোখেই আমার দিকে তাকিয়ে আছে...
"বাঃ খুব ভালো ব্যাপার... আমি খুবই আনন্দিত... সত্যিই এমন একটা ব্যাপার....বেশ ভালো... আগে আর কবে হয়েছে... নিশ্চয়ই হয়ে থাকবে ....সেটা জানা নেই...যাক গে দেরিও হয়ে যাচ্ছে... স্রোতস্বিনী তোমার মেন্টর স্বয়ং আমিই হবো....হ্যাপি তো ডিয়ার??"
" কি বলছো তুমি মিরান্ডা.. তুমি হাই প্রিস্টেস....ইসপ্যামার হিস্ট্রি তোমার পড়া নেই?? আগে আবার কবে এরকম ঘটনা হয়েছে !!!..???"
"উফ্ আদিল্ আমিও তো তাই ই বলছি...প্লিজ্ হাই প্রিস্টেস কে মিসকোট্ কোরো না..."
আর কেউ কিছু বলার আগেই আমি নিজেকে বলতে শুনলাম...." ম্যাম প্লিজ আমি একটা কথা বলতে পারি...?"
"নিশ্চয়ই বলো..." প্রিস্টেস অগ্নিরূপা স্নেহভরা কন্ঠে আশ্বস্ত করলেন..."
" ম্যাম....মেন্টর সিলেকশনের ব্যাপারে আমি কি কোনো কথা বলতে পারি???"
মিরান্ডা আর হাসানের বাক্য বিনিময় স্তব্ধ হয়ে গেল সহসা.... বাকিরাও নিশ্চুপ....
" নিশ্চয়ই বলতে পারো....ইসপ্যামা ফ্রি উইলে বিশ্বাস করে সবসময়ই...."
"তাহলে ম্যাম প্লিজ্ ....কাইন্ডলি.... প্রিস্টেস অনিন্দিতা কি আমার মেন্টর হতে পারেন???"
প্রিস্টেস অগ্নিরূপা হাসিমুখে ম্যাডাম অনিন্দিতার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন....তার আগেই...
" না ".... অনিন্দিতার দৃঢ় গলার স্বরেই আমি বুঝে ফেললাম...বড়ো একটা ভূল করে ফেলেছি.... কিন্তু এখন আর সেটার মাশুল দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই....
"স্রোতস্বিনী..... তোমার সাথে একটা অন্যরকম ঘটনা ঘটেছে মানেই তুমি নিজেকে এত বড় কিছু ভেবে ফেলো না.....হাই প্রিস্টেস নিজে থেকে তোমার মেন্টর হতে চেয়েছেন....এই সম্মানের মানে বোঝো??...আর তুমি সেটা সবার সামনে ডিনাই করছো??... তোমার অভব্য ব্যবহারে অত্যন্ত হতাশ হলাম... "
"ঠিক আছে অনিন্দিতা....একটা সামান্য ফ্লেজলিং ই তো......ও যদি তোমার সাথেই কমফর্টেবল ফিল করে..."
মিরান্ডার হিমশীতল কন্ঠস্বরে আমার পেটের মধ্যে অনেকগুলো প্রজাপতি উড়ে বেড়াতে লাগলো...
" আমাকেও তো বুঝতে হবে মিরান্ডা.... আমি ওর সাথে কমফর্টেবল কি না... আমি ওর মেন্টর হতে চাই কিনা....তবে ম্যানার্স টা যে ও একদমই জানে না...সেটা বোঝাই যাচ্ছে... স্রোতস্বিনী... তোমার মেন্টর....হাই প্রিস্টেস...ম্যাডাম মিরান্ডা কে স্যরি বলো... "
চোখের ভরে আসা জল কে অদ্ভুত কায়দায় চোখের ভিতর ফেরত পাঠিয়ে দিয়ে (এটা আমি খুব ভালোই পারি)... মিরান্ডা ম্যামের দিকে তাকিয়ে কোনমতে বললাম... "স্যরি ম্যাম...আ্যায়াম সো স্যরি"
"আরে, ঠিক আছে...ওক্কে.."...মিরান্ডা ম্যামের ঠান্ডা বরফের ছুরির মত গলার স্বর... পাতলা ঠোঁটের কোন্ মুচড়ানো হাসি আর ঠান্ডা বিরক্ত চাউনি আমাকে পরিষ্কার জানিয়ে দিল.... কিচ্ছু ঠিক নেই.....
আমি ইসপ্যামা তে আসতে না আসতেই যে ভুল করলাম... জানি না... এর মাশুল আমাকে কি ভাবে দিতে হবে... কিন্তু এখন তো আর আমার কিছু করার নেই.......
"ওক্কে বয়েজ এ্যান্ড গার্লস এবার ডিনার টাইম...চলো সবাই আমরা পাশের গ্র্যান্ড ডাইনিং হলে গিয়ে গালা ডিনার এনজয় করি.... নতুন ফ্লেজলিং রা... তোমরা ডিনার খাওয়া হয়ে গেলে আমার পার্সোনাল বোর্ডরুমে এসে মিট করবে... সিলভিয়া তোমাদের নিয়ে আসবে....আলোহা ডিয়ার তুমি এবং তোমার 'মিডনাইটস্ প্রাইড' গ্রূপে যারা যারা আছো তারাও ওদের সাথে আসবে....... প্রফেসরস্ ...অল প্রিস্টস্ এ্যান্ড প্রিস্টেস আপনারাও চলে আসবেন প্লিজ...এখন সবাই চলুন ডিনারের জন্য...."
মিরান্ডা ম্যামের কথার সাথে সাথেই সব ছেলে মেয়েরা পাশের ডিনার হলের দিকে যেতে শুরু করলো..... আমি মাথা নীচু করে আমার বন্ধুদের কাছে ফিরে এলাম....
"আরে ঠিক আছে....ছাড়্ তো....মন খারাপ করবিনা একদম.....তোর ইচ্ছে করেছে তুই বলেছিস...." প্যাম আমাকে স্বান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করলো....
" তার মানে মুখে যতই বলুক....ফ্রি উইলের কথা...আদতে এদের তালেই আমাদের নাচতে হবে....কি জানি বয়ফ্রেন্ড টয়ফ্রেন্ডও এরাই সিলেক্ট করে দেবে কি না....." মিট্টির চিন্তিত কথার উত্তরে আমরা সবাই হেসে উঠলাম...
"এই তো স্রোত হেসেছে....আরে ইয়ার.... একদম মন খারাপ করবে না.... তুমি যে সাঙ্ঘাতিক কান্ড টা ঘটিয়েছ...সেটা কি করে ঘটালে বলো আগে....এক সাথে চার চারজন গডেসের আশীর্বাদ....বাপরে....
এই দ্যাখ সমীর....গায়ে কাঁটা দিচ্ছে আমার"
ডাইকোর কথার উত্তরে আমি একটু ম্লান হাসলাম.....তারপর আমরা সবাই ডাইনিং হলের দিকে পা বাড়ালাম....
****************
"উরেঃ বাপরেঃ!!!! এই নাকি প্রাইভেট বোর্ডরুম...!!!
তাহলে এখানে এমনি অফিসিয়াল বোর্ডরুম কি রকম হয় রে স্রোত...?? কি রে?? তুই এরকম চুপ মেরে আছিস কেন??এত এত খাবার কিছুই খেলি না...একটা বার্গার ঠোকরালি শুধু.....বাবা আমি যা খেয়েছি না....উফ্...এখন একটু শুতে পারলে হোতো"
"আমিও..." পাশ থেকে সুজান বলে উঠলো....
"কি আশ্চর্য জায়গা....বড়ো বড়ো মাইক্রোওয়েভ ওভেন গুলোর পাশের মাইক্রোফোন গুলো তে নিজের নাম টা বলে.... যে যে খাবারের নাম বলবি...সেই সেই খাবার গুলোই বেরিয়ে আসবে...ম্যাজিকের লিমিট নেই মাইরি!!!"
"আমি তো ইলিশ মাছের ঝোল আর ভাত বললাম...তাই ই বেরিয়ে এল....আর কি দারুন টেস্ট!!!!" মিট্টির গলায় খুশি ভরা
"আমিও অনেক খাবার.... শুধু বেরোয় কিনা দেখার জন্য বলে বলে বের করলাম....যা বললাম বেরিয়ে এল....কি কান্ড...." প্যাম ওর পুতুলের মত মাথা নেড়ে নেড়ে বললো...
"এটা তোরা ঠিক করিস্ নি.... শুধু দেখার জন্য এত খাবার নষ্ট করা ঠিক নয়....কেউ দেখতে পেলে..."
"এই এলেন আরেকজন...দ্যাখ ডাইকো....বেশি ভালোছেলে গিরি আমাদের সাথে দেখাতে আসবি না কিন্তু...নতুন জিনিস একটু পরীক্ষা করে দেখবো না??"
ওদের কথা আমি শুনছিলাম... কিন্তু অন্যমনস্ক ভাবে.... আমি আসলে রিজের দিকে তাকিয়ে ছিলাম
কারণ একটু আগে ডিনার হলে আমি অদ্ভুত ভাবে রিজ্ কে খাবার চুরি করে ওর নিজের জামার ভিতর লুকিয়ে ফেলতে দেখেছি..... কিন্তু কেন!!! এখানে তো খাবারের কোনো অভাব নেই....আমাদের তো বলেই দেওয়া হলো....নিজের নাম করে নিজেদের ঘরের ফ্রিজ থেকে এবং ম্যাজিকাল মাইক্রো থেকে যখন তখন....যা খেতে ইচ্ছে করে.... পৃথিবীর যেকোনো খাবার আমরা খেতে পারি....
এই মাইক্রোওভেন গুলো আমাদের স্টুডেন্ট দের জন্যই তো এই ভাবে প্রোগ্রামিং করা...নাম বললেই ওগুলো ঐ নামের মালিক কে আইডেন্টিফাই করে তার ফরমাইশ অনুযায়ী খাবার বার করে দেবে... তাহলে রিজের লুকিয়ে...চুরি করে.... খাবার নেওয়ার কি মানে!!!!
"এসে গেছে সব কটা...." একটা গলার আওয়াজে আমার চিন্তার ঘোর কেটে গেল আলোহাদের গ্রূপ টা ঢুকছে...আর এই কথাটা ঐ গ্রূপেরই একটা অসম্ভব সাজগোজ করা মেয়ের....
"কি খারাপ দিনই এলো ইসপ্যামার....কি সব মাল ঢুকছে... একটা চাষি ভিখারী...আর একটা বাস্টার্ড....বাপের ঠিক নেই...অবশ্য এরকম মা হলে তো...বাপের ঠিক থাকবেই না".... বলতে বলতেই একজন একটা ম্যাগাজিন তুলে ধরলো.....যার কভারে লীনা মল্লিকের একটা টু পিস্ স্যুইমসুট পরা বোল্ড ছবি শোভা পাচ্ছে...
"যাই বল্ মেয়ে কিন্তু মায়ের মত অত হট্ নয়... একটু ব্যাহেনজি.....ম্যাম ম্যাম অনিন্দিতা ম্যাম আপনি আমার মেন্টর হবেন প্লিজ...."
আলোহা.... আমার গলার স্বর হুবহু নকল করে আমাকে ভেংচি কাটলো...."কি সাহস্!!! নিজের বাপের ঠিক নেই...ক'টা বাপ তাই জানা নেই....আবার হাই প্রিস্টেসের মুখের উপর কথা...!!!"
" জাস্ট শাট-আপ.... সাবধান করে দিচ্ছি....আমাদের বন্ধুদের সম্পর্কে একদম এভাবে অসভ্যের মতো কথা বলবে না তোমরা..."
সমীর,ডাইকো আর সুজী একসাথে লাফিয়ে উঠেছে
ওরাও আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল.... কিন্তু তার আগেই.....
"আরে ফ্লেজলিংস...তোমরা সবাই এসে গেছ.!! গুড... ভেরি গুড.... আমি ঠিক জানি...এই ব্যাচ টা ইসপ্যামার সেরা ব্যাচ হতে চলেছে...."
উল্টোদিকের বড় এন্ট্রান্স টা দিয়ে প্রফেসর হাসান ঢুকছেন...আর তাঁর পিছনে ম্যাডাম মিরান্ডা... অনিন্দিতা সহ অন্যান্য প্রফেসর রাও.....
আমি রিজের আর আলোহাদের ঝামেলা থেকে মনকে মুক্ত করে নতুন আর এক অজানাকে জানার জন্য প্রস্তুত হলাম......কেন জানি না এত কিছুর মধ্যেও আমার মাথার মধ্যে একটা নাম খোঁচা মারছে
'মিডনাইটস্ প্রাইড'
0 Comments.