Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পকথায় শঙ্খসাথি

maro news
গল্পকথায় শঙ্খসাথি

নীরবতা

নিবেদিতা এখন পূর্ণ গর্ভবতী। সারাদিন বাড়িতে বসে থাকা ছাড়া আর কোনও কাজ নেই। সৌরভ অফিস বেরোনোর আগে পইপই করে বলে যায়, কোনো অনিয়ম না করতে।বিয়ের বহু বছর পর প্রথম গর্ভ ধারণ করেছে নিবেদিতা, অনেক চিকিৎসার পরে। সেই কারণেই বেশ কিছু বাধা নিষেধ আরোপ করেছেন ডাক্তার। অবশ্য অনিয়ম করার জো-টিও নেই। সবসময়ের কাজের মেয়ে তাপসী সর্বদা সজাগ থাকে, কখন কি অসুবিধা হচ্ছে বা কিছু দরকার কিনা - - - সেই সব ব্যাপারে।কিন্তু তবু নিবেদিতার মন ভালো নেই। শ্বশুরবাড়ি এসে ইস্তক নিবেদিতার একমাত্র বন্ধু ছিল ইন্দু, ওর জা। প্রায় ওরই সমবয়সী, কিন্তু নিবেদিতার সমস্ত আবদার ছিল ইন্দুর কাছে।সৌরভের দাদা মারা গেছিল একটা দুর্ঘটনায়, ইতুর জন্মের আগেই। ইতুকে গর্ভে নিয়ে ইন্দু বিধবা হয়। কমপেনশসন গ্রাউন্ডে স্বামীর চাকরিটা পেয়েছিল। নিবেদিতা যখন এবাড়িতে আসে তখন ইতুর মোটে দেড় বছর বয়স। ইতুকে নিবেদিতার কাছে রেখেই নিশ্চিন্তে অফিস যেত ইন্দু। আর ইতুও কাম্মা বলতে অজ্ঞান ছিল।এভাবেই বছর চারেক কেটে গেছিল। নিজের সন্তান না হওয়ায় দুঃখ ইতুকে পেয়ে ভুলে থাকত নিবেদিতা। তবে সুখ উপচে পড়লে বিধাতার নজর লাগে বোধহয়।সেদিন ছিল শিশুদিবস। ইন্দু অফিস গেছিল, আর ইতুকে নিয়ে নিবেদিতা ছাদে রোদ পোহাতে গেছিল। ইতুর জন্যই সোয়েটার বুনছিল নিবেদিতা।উলগুলো দুস্টুটা বসে বসে জট পাকিয়েছিল। সামান্য সময় বোধহয় সজাগ ছিল না উলের জট ছাড়াতে গিয়ে। বিকট একটা শব্দ আর 'কাম্মা' ডাক শুনেই ছুটে গেছিল নিবেদিতা। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। ছাদের নিচু রেলিং টপকে কি করে যে ইতু সেদিন.....................
নিবেদিতাকেই সবাই দায়ী করেছিল ইতুর মৃত্যুর জন্য। ইন্দু মুখে কিছু বলে নি, শুধু চোখে এমন এক ঘেন্না ছিল নিবেদিতার জন্য যেটা অসহনীয় যন্ত্রণা দেয় আজও। এরপরই নিবেদিতার গর্ভ সঞ্চারের খবর আসে। ইন্দু নিজেকে একেবারে সরিয়ে নিয়েছে ওদের থেকে। বাড়িতে পার্টিশন অবধি তুলে নিয়েছে। ইতুর মৃত্যু, নিজের অনিচ্ছাকৃত দায়িত্বজ্ঞানহীনতার অনুশোচনা আর ইন্দুর নীরবতা প্রতিটা মুহূর্ত রক্তাক্ত করে নিবেদিতাকে।
রাতের দিকে ব্যথা উঠেছে নিবেদিতার। সৌরভ গাড়ি বের করছে। প্রসবযন্ত্রণা কাতর নিবেদিতা ইন্দুর জানলার কাছে ডাকে, "দিদি..একবার সাড়া দাও।"
সাড়া মেলে না। সশব্দে জানলার পাল্লা বন্ধ হয়ে যায়।
ঠিক তিনদিন পর, অফিস বেরোবে বলে তৈরি হচ্ছিল ইন্দু। কলিংবেল শুনে দরজা খোলে।
"নিবেদিতা আর নেই বৌদি।", ডুকরে ওঠে সৌরভ। ইন্দুর পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে যেন! "এই নাও ", বলে নিজের সন্তানকে বাড়িয়ে দেয় সৌরভ ইন্দুর দিকে। ফুটফুটে মেয়েটাকে বুকের মধ্যে চেপে ধরে ইন্দু হাউহাউ করে কেঁদে ফেলে। জানলার ওপার থেকে আর কেউ ডাকে না "দিদি, একবার সাড়া দাও। " লেখিকা পরিচিতি : কাটোয়া শহরে জন্ম, বড় হয়ে ওঠা। ইংরেজি সাহিত্য ও ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা। সাহিত্য প্রাণের দোসর। আসন্ন বইমেলাতে প্রকাশ পেতে চলেছে প্রথম গল্পের বই "কাগজের ঘরবাড়ি"।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register