গল্পেরা জোনাকি -তে চন্দ্রাণী বসু

আচারের শিশি

বরুণের পাতে আচার দিচ্ছিল রমা। মায়ের তৈরি এই আচার খুব প্রিয় তার ছেলের। বরুণ টেবিলে বসতে গিয়ে ধাক্কা লাগল রমার গায়ে। হাত থেকে শিশি মাটিতে ছিটকে পড়ে চুড়মার।
– কি যে শিখিয়েছে মা কে জানে। খাবারটুকু অবধি ছেলেটাকে দিতে পার না। ভাঙলে তো শিশিটা ?
শাশুড়ির চিৎকারের সাথে গলা মেলাল বরুণ।
– মন কোন দিকে থাকে ? এমন আচার বানিয়ে একবার দেখো দিকি ! নষ্ট করলে তো !
চুপ করে থাকে রমা… ইচ্ছে করে না সত্যিটা বলতে। কখনোই করে নি। কোনোদিনই না।
——————-
তখন কতই বা বয়স হবে দুই বোনের। রমার দশ, রুমুর সাত। মা বাড়িতে নেই। আচারের বয়েমটা সেলফের ওপরের তাকে তোলা থাকে। খাওয়ার ইচ্ছে ষোলোআনা রুমুর, এদিকে হাত যায় না সেলফে। অগত্যা দিদিই তার একমাত্র ভরসা। এদিকে মায়ের পিটুনির ভীষণ ভয় আছে রমার। বোনের কথায় কিছুতেই রাজি হতে মন চায় না। আবার বোনের আবদার সাথে নিজের লোভও একটু যে নেই তা নয়। অগত্যা পাল্লা গেল ওই দিকেই হেলে। চেয়ার টেনে সেখানে উঠে রমা পাড়ল সে বয়েম। দুই বোনে জমিয়ে আচার খাওয়াও হল আবার রমা শখ করে দু চামচ নিয়েও রাখল তার প্রিয় বন্ধুর জন্য। পরদিন স্কুলের টিফিন টাইমের জন্য।
– দেখ আজ তোর জন্য কি এনেছি
– কি রে ?
– মায়ের তৈরি আচার। তুই সেদিন বললি না তোর খুব আচার খেতে ইচ্ছে করে। আজ আমরা দুইজনে আচার খেয়েছি। মা বাড়িতে নেই তো…
– কি দারুণ রে। কেন কাকিমা তোকে বকে ?
– হ্যাঁ রে ! বেশি খেয়ে ফেলি তো। এই জলি শোন কাউকে বলিস না কিন্তু প্লিজ।
– না না কক্ষনো না।
এর ঠিক দুদিন পর স্কুল থেকে বাড়ি ফিরেই মা এর মুখ দেখে দুই বোন টের পায় কিছু একটা ঘটেছে।
– আচার কে খেয়েছ ? জলির মা আমায় নালিশ করেছে তোমাদের জন্য ও নাকি চুরি বিদ্যা শিখছে। তোমরা আচার চুরি করে খেয়েছ আবার ওকে কাউকে বলতে না করেছ ?
– মা দিদি খেয়েছে। আমি বারণ করেছিলাম। ও শুনলই না । আমি কি পাড়তে পারি ? ওই তো জলি দিদিকে…. জেনে নিও।
কথা শেষ হল না মায়ের মার রমার পিঠে ততক্ষণে…
——————–
– কি হল সং সেজে দাঁড়িয়ে আছ কেন ? কাচের ভাঙা টুকরোগুলো তোলো। এবার তো ছেলেটার আমার পা কাটবে।
শাশুড়ির চিৎকারে ভাবনার ঘোর কাটে রমার। চোখ থেকে চিবুক তখন নোনতা। হঠাৎ তার বিপরীতে আয়নাটাতে চোখ পড়ে। রমা নিজেকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে, কোথাও কোনো দাগ নেই। পিছনে বরুণ কেমন যেন অস্পষ্ট।
সকালেই বরুণ বলেছিল ড্রেসিং টেবিলের আয়নার কাচটা নাকি শ্বশুর মশাই ফাঁকি দিয়েছে, কাচ ভালো নয়। কিন্তু…
রমার ঠোঁটের কোণায় হাসি আসে … চিবুক থেকে নোনা স্বাদ মুছে কাচ কোড়াতে মন দেয়।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।