সোনা ধানের সিঁড়ি
২৬
নদীর পাশে এসে একবার দাঁড়ালেই হলো। কত কথা যে মনে পড়ে যায়। তার মানে কিন্তু এই নয় যে, আমার সব হারানো অতীত নদীর শাখাপ্রশাখার সঙ্গে জড়িয়ে আছে। বরং এর উল্টোটাই। কিন্তু তবুও নদীর হাত ধরে আমি অনেক অনেক দূরে চলে যাই। আমার ফেলে আসা পথ। আসলে আমার জীবনের বেশিরভাগটাই নদীকে পাশে নিয়ে কেটেছে। ঠিক একইভাবে গাছের পাশে দাঁড়ালেও আমার অনেক কিছু মনে পড়ে যায়। এক একটা পাতা খসে পরে আর আমিও একটু একটু করে পিছনে চলে যাই। আসলে গাছ নদী —– এসবই এক একটা প্রবাহ। ঠিক মতো পা মেলাতে পারলে আমরা যেখানে খুশি উড়ে যেতে পারি।
২৭
চৈত্র মাসের সন্ধেবেলা। হ্যারিকেন নিয়ে পড়তে গেছি। অর্ধেক পড়া হয়েছে। ঝড় উঠলো। একটু পরেই বৃষ্টি। সারাটা দুপুর বেশ গরম গেছে। এখন বেশ ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা। সন্ধের একটু পরের বৃষ্টি চারপাশকে কেমন চুপচাপ করে দেয়। তার ওপর আবার গ্রাম। হ্যারিকেন নিয়ে বাড়ি ফিরছি। ব্যাঙ ডাকছে। রাস্তায় দু’একটা লোক। আমি প্রায় একাই। রাস্তার ধারে ধারে আমগাছ। ঝিঁঝিঁ ডাকছে। ভয় যে একেবারেই করত না তা নয়। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে যেত একটা ভালোলাগা বোধ। কতদিন হল ব্যাঙের ডাক, ঝিঁঝিঁর ডাক কান থেকে সরে গেছে। আজ মনে হয় ওইগুলোই ছিল প্রকৃত গ্রামীণ জীবনের সঞ্চয় যা একটা মানুষকে ইঁট কাঠ পাথরের মাঝেও আমৃত্যু সবুজ রাখতে পারে।
ক্রমশ…