Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

হৈচৈ ছোটদের গল্পে মোঃ আব্দুল রহমান

maro news
হৈচৈ ছোটদের গল্পে মোঃ আব্দুল রহমান

আবিদের কেরামতি

আজ ছেলেটির বয়স মাত্র তিন বছর দশ মাস পূর্ণ হল। দেখতে বেশ লম্বা, শ্যামবরণ, কান দুটি খাড়া, মুখে মৃদু হাসি এবং একটু বেশি দুরন্ত ও চঞ্চল। পরিবারের সকলে তাকে সামলাতে সারাদিন ব্যস্ত। বাবা মায়ে আদর করে নাম রেখেছে "আবিদ হাসান"।

একদিন আবিদের মা নাজমিন নাহার কে ভীষণ চিন্তিত অবস্থায় দেখা গেল। তিনি আবিদের বাবা রাকিবুল ইসলাম কে বললেন; " আর কত অপবাদ ও লাঞ্ছনার শিকার হতে হবে আমাদের ! ঠাট্টা, তামাশা করেই চলেছে সবাই আবিদকে নিয়ে ! সত্যিই কি আবিদের আর মাথায় চুল বেরোবে না? শারীরিক গঠন কি ঠিক হবে না আর?"

আবিদের বাবা বলল; নাজমিন, তুমি বেশি চিন্তা করো না, সব ঠিক হয়ে যাবে। আবিদকে সবাই একদিন ভালোবাসবে, স্নেহ মমতায় ভরিয়ে দেবে, তুমি দেখে নিও।

.....ডাক্তার বলেছে এই হোমিওপ্যাথি ঔষধের কার্যকরীতা একটু ধীরগতি সমপন্ন। আবিদ নিজে বোঝে না এ সব কিছু তাকে নিয়ে সমাজে লোকজন কত হাসাহাসি ও মজার পাত্র বানায়। তবে সে তো বাচ্চা, বুঝবেই বা কি করে, তাই সমস্ত কষ্ট, যন্ত্রণা ও বুকচাপা বেদনার ভার গিয়ে পড়ে বাবা মায়ের অন্দরে।

একদিন আবিদ খেলতে খলতে বাইরে বেরিয়েছিল। সবাই তার চুল নিয়ে ঠাট্টা, মশকরা, হাসি ও টিটকারি করছিল। কেউ কেউ তার টাকে গাট্টা মারছিল। কেউ কেউ চুল ধরে টানছিল। আবার কেউ কেউ অপবাদ দিয়ে বলছে; " অপয়া সন্তান!" আমি আর চুপ থাকতে না পেরে তাদের কাছে দৌড়ে গিয়ে তাড়া করলাম। সবাই আমাকে আসতে দেখে চতুর্দিকে পালিয়ে গেল। তাকে আমি বাড়িতে রেখে এলাম।

আবিদের একটি ভীষণ সুন্দর গুন ছিল। সে অতিদ্রুত সব কিছু শিখতে পারে। সে এই অল্প বয়সেই লেখাপড়া এতটাই আয়ত্ত করতে পেরেছে যা একটি সাধারণ বাচ্চার চেয়ে অনেক বেশি। তার বিচিত্র বুদ্ধিমত্তা ও প্রতিভা। প্রচুর কবিতা তার জানা, সব দেশ ও রাজধানীর নাম তার ঠোঁটের ডগায়, হাতের লেখা ভীষণ চমকপ্রদ এই অল্প বয়সেই। আমি দেখলাম তার অনেক দক্ষতা ও সহজাত বুদ্ধিমত্তা রয়েছে আর তার প্রকাশ মেলে " গীনেস বুক অফ রেকর্ডস" এ। তবে এর জন্যে তার মায়ের ভূমিকাই অপরিসীম। এখন সবাই তাকে এক নামে চেনে " আবিদ হাসান"।

সেদিন আমি স্কুল যাওয়ার পথে দেখলাম সব শিশুরা আবিদকে ঘিরে খেলছে আর খেলার ছলে পড়ছে, কত আনন্দ করছে, যেন খুশির উল্লাসে মেতে গেছে সবাই। তারা সবকিছু ভুলে গেছে, আসলে সমাজ এমনই হয়। এই পরিস্থিতির জন্য কোনো শিশু মন দায়ী নয়, দায়ী সমাজের ভার যাদের হাতে তারা।

আমি কিছু পার্ক চকোলেট নিয়ে সেখানে গেলাম। সবশেষে আবিদকে যখন চকোলেটটি দিলাম, সে মৃদু হেসে বলল; Thank You, Vaiya! আমি আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম আর গাছের উপর কোকিল কুহুকুহু সুরে ডাকতে লাগল। তারা কোকিলের সুরে তাদের খেলা চালিয়ে গেল।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register