একটি ছোট্ট ছেলে, সে বয়সে আমার গোড়ালির বয়সীই হবে, একবার আমাকে একটা প্রশ্ন করে বিপদে ফেলে দিয়েছিল। জামাই ঠকানো প্রশ্নই বলা যায়। ‘বলতে পারো কোন ট্রেনটার শুধু আপ আছে, ডাউন নেই?’ ভেবে ভেবে মাথার চুল ছিঁড়ছি। এমন সময় খ্যাঁক খ্যাঁক করে বিশ্রীভাবে হাসতে হাসতে সে বলল, ‘এটাও জানো না? জীবন! জীবন ট্রেনের শুধু আপ আছে, ডাউন নেই!’ উহহ! কি দার্শনিক প্রশ্ন বাপরে। সেই জীবন ট্রেনের একমুখী প্যাসেঞ্জারে চড়তে চড়তে অর্ধেক পথ তো চলেই এলাম।আগের স্টেশনটা খুব পছন্দ হলে যে ফিরতি ট্রেনে ফিরে যাব তার কোন উপায় নেই।
বরাবরই গন্তব্যের থেকে জার্নিটাই আমার কাছে বেশি পছন্দের। আর জার্নির মুখ্য আকর্ষণ এই স্টেশনগুলো। দেখলেই ইচ্ছে করে নেমে যাই। বিশেষ করে দূরপাল্লার ট্রেনে গেলে এই স্টেশনগুলি আমাকে খুব টানে। এক একটা স্টেশনে প্লাটফর্মই নেই, একটা নির্জন ঘর স্টেশনমাস্টারের, সারাদিনে হাতে গোনা ট্রেন থামে, একটাই বেঞ্চ হয়তো, একটা মাঝারি উচ্চতার কৃষ্ণচূড়া কিংবা সোনাঝুরি গাছের তলায় সদ্য রঙ করা সে বেঞ্চে একজন বসে থাকবেনই।এটা তো জানা কথা, সেই একই লোককে পরের নির্জন স্টেশনেও দেখা যাবে। মনে পড়ছে বিভূতিভূষণের ‘ডাকগাড়ি’ গল্পটা, যেখানে জীবনের সব দিক থেকে বঞ্চিত রাধা ভেবেছিল মাঝে মাঝে স্টেশনে এসে বসে থাকলে ক্লিন্ন মলিন জীবনটা অন্যরকম হয়ে যায়। আমার এক আত্মীয়, যাঁর বাবা রেলে কাজ করতেন, থাকতেন শিয়ালদা রেল কোয়ার্টারে, ছোটবেলায় রোজ সকালে শিয়ালদা স্টেশনে গিয়ে বসে থাকতেন, আর গ্রামের বাড়ির কাউকে ট্রেন থেকে নামতে দেখলেই বাড়িতে ধরে নিয়ে যেতেন।
খেয়াল করে দেখবেন, পৃথিবীর সব অখ্যাত নির্জন স্টেশনে একই লোক বসে থাকে। আপনার খুব ইচ্ছে করবে আপনিই ওই লোকটা হবেন,কিন্তু কিছুতেই হতে পারবেন না। কারণ ওই যে, ট্রেনটা চলছে।আপনি সলিল চৌধুরীর মতো বলতেই পারেন ‘এই রোকো পৃথিবীর গাড়িটা থামাও, আমি নেমে যাব, আমার টিকিট কাটা অনেক দূরে।এ গাড়ি যাবে না আমি অন্য গাড়ি নেব’। তবু আপনি নামতে পারবেন না। সেই কার (শেখর বসুর কি?) যেন একটা গল্প পড়েছিলাম, একটা লোক কোনদিন বালিগুড়ি (নামটা আমি বানিয়ে নিলাম) বলে একটা স্টেশনে নামতে পারে না!
যাই বলুন, পৃথিবীতে যত ভ্রমণ আছে, রহস্য রোমাঞ্চ উত্তেজনায় ট্রেন ভ্রমণের তুল্য আর কিছু নেই।আর গভীর রাতে অচেনা স্টেশন থেকে ভেসে আসা ‘চায়ে গ্রমের’ মতো কানে সুধাঢালা শব্দ আর কী-ই বা আছে এই পোড়া দুনিয়ায়? সাধে কি লীলা মজুমদার বলেছেন ‘ট্রেনে চাপলেই আমার মেজাজ অন্য রকম হয়ে যায়। অবিশ্যি বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আমার রেলের দৌড়ও কমতে কমতে এখন কলকাতা থেকে বোলপুর আর বোলপুর থেকে কলকাতায় এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তাই বলে রেলযাত্রার রোমাঞ্চ একটুও কমে নি।’ আরেকজায়গায় তিনি বলছেন ‘ট্রেনে অচেনা লোকদের সঙ্গে যেমন গল্প জমে, তেমন আর কোথাও নয়। বিশেষ করে যদি তাদের সঙ্গে আর কখনো দেখা হবার সম্ভাবনা কম থাকে। এ সব লোকদের কি না বলা যায়। মনের সব গোপন কথা নিশ্চিন্তে ঝেড়ে ফেলে দেওয়া যায়।’ ট্রেন হল একটা চলমান জীবন, একটা মিনি ভারতবর্ষ। আর ট্রেনযাত্রা যত রোমাঞ্চকর, তার থেকেও রহস্যময় এক একটা নির্জন স্টেশন। এরকম কত স্টেশনে যে নেমে পড়তে চেয়েছি কতবার। ছোটবেলা থেকে শোনা ভূতের গল্পে এরকম একটা স্টেশন থাকবেই। যেখানে মধ্যরাতে ট্রেন থেকে নামে একটিমাত্র যাত্রী। অনেক অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে খানাখন্দ জলকাদা পেরিয়ে সে পৌঁছয় তার ঈপ্সিত গন্তব্যে। এ তার শ্বশুরবাড়ি। সে তো জানে না মহামারীতে গ্রাম সুদ্ধ মরে ভূত, আর সে এসেছে এরকমই এক ভূতের বাড়িতে।বাড়িতে কোন আলো জ্বালা নেই, সবার নাকি চোখের ব্যামো, আলো সহ্য হয় না। বাড়ির কত্তা লেপমুড়ি দিয়ে কোঁ কোঁ করছেন, গিন্নি অবশ্য অতিথিসেবার ত্রুটি রাখলেন না। অনেক রাত হয়েছে বলে উনুন ধরানোর ঝামেলায় গেলেন না বটে, কিন্তু এক বাটি সরেশ চিঁড়ে ভিজিয়ে দিয়ে বললেন, রোসো, গাছ থেকে তোমার জন্যে একটা লেবু পেড়ে নিয়ে আসি। এই বলে যে তিনি বাইরে বাগানে গেলেন, তা নয়। দিব্যি ঘর থেকেই লম্বা হাত বাড়িয়ে বাগানের শেষ প্রান্তে থাকা লেবুগাছ থেকে লেবু পেড়ে আনলেন। সেই দেখে আর কি চিঁড়ে গলা দিয়ে নামে? দৌড় দৌড় দৌড়। মাঠ, ধানক্ষেত, শ্মশান ঊর্ধবশ্বাসে পেরিয়ে স্টেশনে ফিরে স্টেশনমাস্টারের ছোট্ট ঘরটি দেখে ধড়ে প্রাণ এল। স্টেশনমাস্টার শুধোলেন, কী হয়েছে মশাই, এত হাঁপাচ্ছেন কেন? তখন কলকাতার বাবুটি স্টেশনমাস্টারকে সবিস্তারে বললেন তাঁর রোমহর্ষক অভিজ্ঞতার কথা। স্টেশনমাস্টার খুব সহানুভূতির সঙ্গেই শুনছিলেন । যেই বাবুটি গিন্নিমার লেবু পাড়ার জায়গাটাতে এসে বলেছেন ‘ সে কি লম্বা হাত মশাই, জানলা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, তো যাচ্ছেই।’ অমনি স্টেশনমাস্টার তাঁর হাতখানি বাড়িয়ে দিয়ে বলবেন ‘দেখুন তো এইরকম লম্বা হাত কিনা’ সেই হাত তখন প্লাটফর্ম ছাড়িয়ে সামনের পুকুরটার দিকে এগোচ্ছে। এরপর কলকাতার বাবুটির পতন ও মূর্ছা।
গভীররাতে যখন কোন নির্জন স্টেশনের পাশ দিয়ে ট্রেন যায়, তখন আমার এই গল্পটা মনে পড়ে গা শিরশির করে ওঠে। কিংবা মনে পড়ে যায় ‘পদিপিসির বর্মিবাক্স’-র সেই বিখ্যাত লাইনগুলো-
‘মামারবাড়ির স্টেশনে পৌঁছলাম গভীর রাতে। স্টেশনের বেড়ার পেছনে কতকগুলো লম্বা লম্বা শিশুগাছের পাতার মধ্যে একটা ঠান্ডা ঝোড়ো হাওয়া শিরশির করে বয়ে যাচ্ছে। প্লাটফর্মে জনমানুষ নেই। ছোট্ট স্টেশনবাড়ির কাঠের দরজার কাছে স্টেশনমাস্টার একটা কালো শেড লাগানো লণ্ঠন নিয়ে হাই তুলছেন। পান খেয়েছেন অজস্র, আর বহুদিন দাড়ি কামাননি। একটা গাড়ি নেই, ঘোড়া নেই, গরুর গাড়ি দূরে থাকুক, একটা বেড়াল পর্যন্ত কোথাও নেই।’
ঠিক এই সময়ে ব্যাগহস্তে একজন মধ্য বয়স্ক স্থূলকায় ভদ্রলোক দৌড়িয়া প্লাটফর্মে প্রবেশ করিলেন। কিন্তু তাঁর উদ্যম বৃথা হইল। পোঁ করিয়া বাঁশি বাজাইয়া, ইঞ্জিন মহাশয় বাবুটিকে উপহাস ছলেই যেন ‘ধেৎ ধেৎ’ করিতে করিতে ছুটিতে আরম্ভ করিল। বাবুটি হতাশ হইয়া চলন্ত ট্রেনখানির প্রতি চাহিয়া রহিলেন আর হাঁফাইতে লাগিলেন’ পরবর্তী ট্রেন রাত একটা আঠের মিনিটে। স্টেশন মাস্টারের ঘরে অপেক্ষা করতে করতে তিনি আবিস্কার করলেন স্টেশনমাস্টার তাঁরি লেখা ‘ভীষণ রক্তারক্তি’ উপন্যাসটি গোগ্রাসে গিলছেন। এই বইটি বিকেলে কলকাতা থেকে আসা এক দল যুবক ফেলে গেছে, তার মধ্যে পাওয়া গেল এক অদ্ভুত চিঠি, সেই নিরীহ বরযাত্রী যুবকদের স্বদেশী ডাকাত ভেবে নিয়ে গোবর্ধনবাবুর গোয়েন্দাগিরির শখ চেগে উঠল, আর তার পরিণাম হল কৌতূককর।এই প্রসঙ্গে মনে পড়ল আমিও এক সময় সকাল আটটা বাইশের ট্রেনে ডেলি পাষণ্ডগিরি করেছি। প্রায় রোজই চলন্ত ট্রেনে ছুটে ওঠা আর ঘর্মাক্ত মুখ মোজা দিয়ে মোছা! না, না, ভুল পড়েননি, মোজাজোড়া বাড়ি থেকে না পরে হাতে নিয়েই দৌড়তাম কিনা, ট্রেনে উঠেই পরার অবসর হত, তাই রুমাল ভেবে ভুল করা আশ্চর্য কি! আরেকটি গল্পে, কার লেখা মনে নেই, কলকাতার এক দল বিয়ের নেমন্তন্ন খেতে এসেছে অজ পাড়াগাঁয়ে। চিঠিতে লেখা ছিল স্টেশন হইতে দুই পা। তো নিমন্ত্রিতরা স্টেশন থেকে মাইলের পর মাইল জলকাদা ভেঙে বিয়েবাড়ি পৌঁছে বলেছিল ‘আপনারা যে দুই পা ঘটোৎকচের পায়ের মাপে বলেছেন, তা তো বুঝতে পারিনি।’
গল্প নয়, সত্যি রহস্য আছে বেলমুড়ি স্টেশনটিকে নিয়ে। এই স্টেশনটি নাকি এমন অপয়া, যে কেউ বেলমুড়ির টিকিট কাটতে সাহস পায় না, বলে একটা ‘শ্রীফল-চালভাজা দিন তো।’
বিখ্যাত সিনেমা ‘ফুলেশ্বরী’ তো আগাগোড়া ট্রেন ঘিরেই। ট্রেন এলে ‘ফেলাগ’ দেখানো বৃন্দাবন মোটেই পাত্তা পায় না তিনপুরুষের রেলের কারবারী ফুলির কাছে। সেখানে গানের কথাতেও এসেছে ট্রেন। সেই যে একটু ধেনো খেয়ে এসে যখন অনুপকুমার লিলি চক্রবর্তীকে ঘিরে ঘিরে গাইছেন ‘হ্যাদে গো পদ্মরানি, তুমি ভারি সুন্দরী, তোমার মনের বয়লারে, মন যে আমার কয়লারে, আহা মরি মরি’। ট্রেন নিয়ে আর কী কী গান আছে ভেবে ভেবে দুতিনটে মনে পড়ল-
‘তুফান মেল যায়। তুফান মেল’ কানন দেবীর গাওয়া গান ‘শেষ উত্তর’ ছবিতে। এই সিনেমাতেই সম্ভবত কানন দেবীর স্নানের একটি দৃশ্য ছিল। পোশাক খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন কানন দেবী। দর্শক উদ্গ্রীব। এমন সময় সেই স্নানদৃশ্য ঢেকে দিয়ে তুফান মেল চলে গেল। বাইরে বেরিয়ে নাকি হতাশ জনতা বলাবলি করত ‘একটা দিনও কি ট্রেন লেট করতে পারে না?’
ট্রেন এদেশে লেটে চলাই দস্তুর। তবে কতটা লেট? কথিত আছে, একজন লোক রেললাইনে সুইসাইড করবে বলে গেছিল। লোকটা মরেছিল ঠিকই, তবে রেলে কাটা পড়ে নয়, না খেতে পেয়ে। কারণ সেটা ছিল পৃথিবীর মন্থরতম ট্রেন। নির্ধারিত সময়ের তিনদিন পরে যখন ট্রেন এল, তখন লোকটা না খেতে পেয়ে মারা গেছে!
‘ইস্টিশনের রেলগাড়িটা’
‘এই রোকো, পৃথিবীর গাড়িটা থামাও’
ট্রেনের আদি যুগে কত ছড়াও বানানো হত মুখে মুখে।
‘রেল রেল রেল/তোমার পায়ে দিই তেল’ সুকুমার সেনের একটা চমৎকার বই আছে, পড়ে দেখতে পারেন।
ট্রেনের মধ্যে ঘটনার ঘনঘটা নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘নায়ক’-র মতো সিনেমা, কিংবা স্টেশনের অপেক্ষা নিয়ে ‘জতুগৃহ’ বা ‘ইজাজত’।
হাওয়াই জাহাজ আমাদের অনেক দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছে দ্যায় ঠিকই, কিন্তু এরকম গল্প তৈরি করে না। শুধু কি গল্প? কবিতাও। এখনো মনে আছে উটি-কুন্নুর নীলগিরি হেরিটেজ টয় ট্রেনের যাত্রাপথে অপূর্ব স্টেশন গুলো, রাজাভাতখাওয়ার পথে হ্যামিল্টনগঞ্জ, পুরীর পথে রেতাং। তাকে নিয়ে কবিতাও আছে।
রেতাং
অনেকক্ষণ ট্রেনটা থেমে আছে,
রেতাং,
প্লাটফর্ম নেই,
তবু স্টেশনটা উড়তে উড়তে
আকাশ ছোঁয়ার চেষ্টা করে,
আর বদলির আশা ছেড়ে
স্টেশনমাস্টার
আজকাল লম্বা লম্বা কবিতা লেখে,
আর মাস্টারের বউটা
রান্নার জল আনতে
চলে যায় সোজা সমুদ্দুর!
এখানে চুপিচুপি বলে রাখি আমার অনেক কবিতাই ট্রেনে পাওয়া। ট্রেন ফেল করে, জানলার ধারের সিট পেয়ে কিংবা না পেয়ে, দূরপাল্লার ট্রেনের দীর্ঘ সময়ের সদব্যাবহারে, যেকোনভাবেই রেলে রেলা নিতে চেয়েছি। এই রেলা প্রসঙ্গে এক বন্ধু জানিয়েছিল, তবলায় এক বিশেষ বোলের নাম রেলা। তা এসেছে রেলের ঝমাঝম আওয়াজের অনুকরণে। ট্রেনে যেতে যেতে এই রেলাটি উদ্ভাবন করেন এক বিখ্যাত তবলিয়া।
আজো মনে আছে একদিন শিয়ালদায় ট্রেন ফেল করে, খুব রাগ করে একটা ভুলভাল ট্রেনে উঠে বসে আছি। তখন বিকেল। রোদ পড়ে বেশ একটা ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে। সেই হাওয়ায় রাগ পড়ে আসছে। হঠাৎ মাথায় বিদ্যুতচমকের মতো ঝলসে উঠল
‘রাগ হল বিকেলের হাওয়া
দুঃখ হল পাখির মুখের
উড়ো বীজ আমার বাগানে
বাগানে সবার আসা যাওয়া।
এই মাটি বৃষ্টির মোহনা,
রোদ তার মাঝে মধ্যে চর,
বৃষ্টি হল বন্ধুর আঙ্গুল,
কাছে এলে ছুঁয়ে দেখব না?’
আমাদের মফস্বলজীবনের সঙ্গে ট্রেন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ছিল। এখনো মনে পড়ে জয়েন্ট এন্ট্রান্স দিতে যাচ্ছি, সেদিন ট্রেন বন্ধ, সিট পড়েছে রমেশ মিত্র গার্লস স্কুলে। একটা ম্যাটাডোরের সামনে ড্রাইভারের পাশের সিটে বসে গড়িয়া অব্দি এসেছিলাম, পাশের দরজাটা আবার নারকেল দড়ি দিয়ে বাঁধা। সেদিন ছিল অংক। যদিও আমার চিন্তা ছিল নারকেল দড়িটাকে নিয়ে।
আগেই বলেছি রুদালির মতো আমার মা ছিল পেশাদার দুশ্চিন্তাজীবী। দাদা যখন প্রথম কলেজে ভর্তি হল, ট্রেনে যাতায়াত করবে, মা তাকে বলেছিল ‘ট্রেন ছাড়লে উঠবি, ট্রেন ছাড়লে নামবি’ আসলে এর উল্টোটাই বলতে চেয়েছিল। টেনশনে সব গুলিয়ে গিয়েছে!
মামারবাড়ি যেতে গেলে ট্রেনে যেতে হয়। এতবার যাই তবু কিছুতেই স্টেশনগুলোর নাম মুখস্থ হয় না। আগে হোটর না আগে ধামুয়া? এইরকম জোড়া জোড়া স্টেশন । দেউলা-নেতড়া। বাসুলডাঙ্গা- গুরুদাসনগর। দাদা যখন সেই ট্রেনে একা যেতে লাগল, আমি তো রোমাঞ্চিত। বললাম, আমাকেও একবার নিয়ে যেতে। আমার মনে হয়েছিল বড়দের সঙ্গে যাওয়ার চেয়ে ওর সঙ্গে যাওয়াটা একটা অ্যাডভেঞ্চার হবে। এর উত্তরে সেই বালক আমাকে গম্ভীর গলায় বলেছিল-
‘দাদু বড়লোক, দাদুর সঙ্গে যেও, আমি ছোটলোক, আমার সঙ্গে যেও না!’