সেই গভীর সমুদ্র থেকে পাড়ে উঠে আসতে অনেকটা সময় লেগে গিয়েছিলো বৌদির। সূর্য মাথার উপর থেকে ততক্ষনে পশ্চিমের দিকে পাড়ি জমিয়েছে। সমুদ্রের পাড়ে যে সমস্ত দোকান পাট সেসব আর নেই। অল্প দুয়েকটা তখন রয়েছে। কিছু লোক বসে আছেন সমুদ্রের তীড়ের চেয়ার গুলোতে। বৌদি হাঁগাচ্ছেন তখন। প্রায় পাঁচ-ছ ঘন্টার একটা সমুদ্র অভিযান। হাঁফ তো আসবেই।
আস্তে আস্তে সেই ডাবের দোকানটার সামনে এসে দাঁড়ালেন। তাদের সঙ্গে বেড়াতে আসা কেউ নেই চারিদিকে। জুতোটাও নেই। কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছেন না বৌদি। জিজ্ঞেস করলেন ডাবওয়ালাকে,সে ত প্রায় ভুলেই গিয়েছিলো। বৌদি পরিচয় দিলেন নিজের…’সকাল সাড়ে নটা নাগাদ সমুদ্রে নেমেছিলাম, এই উঠে জুতো খুঁজে পাচ্ছি না। ” ডাবওয়ালা প্রায় আকাশথেকে পরলেন মনে হলো। নুলিয়ারাও এতক্ষন জলে থাকে না। অবাক হওয়াই স্বাভাবিক। তবুও বিষ্ময়ের ভাবটা চোখমুখে যতটা সম্ভব কম রাখা যায় রেখে তিনি বললেন,,আপনি যখন সমুদ্রে নেমেছিলেন তখন ভাটা ছিলো,এখন জোয়ার। আমাদের দোকানের স্থান পরিবর্তন হয়েছে। আপনার জুতোর খবর তো আমি জানি না,নিশ্চই আপনার দলের লোকজন নিয়ে গেছে।”
মহা বিপদে পড়লেন বৌদি। একেবারে বিদ্ধস্ত। তার উপরে জুতো বিভ্রাট। আর এদিকে বালি তখন তেঁতে প্রচন্ড গরম। পা ফেলবার উপায় নেই। হাঁটবেন সামর্থ নেই। এমত পরিস্থিতিতে ডাবের দোকানের সামনে কয়েকপাটি জুতোর দিকে নজর গেলো বৌদির। দোকানের সামনে রেখে স্নান করতে গিয়েছে কয়েকজন। বৌদি চারদিকে একটু চোখ বুলিয়ে টুক করে নিজের পায়ে গলানো যায় এমন একখানি জুতো পরে হাঁটতে শুরু করে দিলেন হোটেলের দিকে। মনে মনে ভাবলেন হোটেলে পৌঁছেই অন্য জুতো পরে ফিরে এসে এ জুতোটা ফেরত দিয়ে যাবেন।
মনে সামান্যতম পাপ ছিলো না বৌদির। কিন্তু পরিস্থিতির বিচারে কিছু করারও ছিলো না। হেঁটে চলেছেন বৌদি। ধীর পা। পাগলের মত দেখতে লাগছে প্রায়। হঠাৎ পিছন দিক থেকে কয়েকজনের ছুটে আসার আওয়াজ পেলেন। প্রথম দিকে অতটা আমন দেননি বৌদি। আওয়াজ বাড়তে থাকলো। কয়েকটা পায়ের ছুটে আসার আওয়াজ। বালির মধ্যে থেকে দৌড়ের নিজস্ব একটা ভাষা আছে। এবার বৌদি পিছন ফিরে তাকালেন। কয়েকজন একসঙ্গে দৌঁড়ে আসছে তারই দিকে, অচেনা সব, শুধু দাঁ হাতে সেই ডাবওয়ালা।
বিষয়টা কিছুটা আন্দাজ করতে পারলেন বৌদি। এমতাবস্থায় অন্যকিছু না ভেবে নিজেকে বাঁচানোর দিকেই নজর দিলেন তিনি। লাগালেন এক ছুট। ওরাও ছুটছে, বৌদিও ছুটছেন। কিন্তু পারবেন কেন ওদের সঙ্গে। বহু দূরে পুলিশ, বৌদি ভাবলেন একবার বিষয়টা খুলে বলি। ওদের দোকান থেকেই জুতো হারিয়ে গেছে তার। তাই বাধ্য হয়েই…
এতসব ভাবার মধ্যেই দলবল নিয়ে বৌদির সামনে পৌঁঁছে গেলো সব। তিন জন মহিলা,দুজন পুরুষ,সঙ্গে দাঁ হাতে সেই ডাবওয়ালা। কি সাংঘাতিক তাদের রনচন্ডী মূর্তি। ওদের হাবভাবে মনে হচ্ছে একটা জুতো নয় জাহাঙ্গীরের স্বর্ণমুদ্রা চুরি হয়েছে বুঝি।
এর পরের ঘটনাটা দুঃস্বপ্নের মত ছিলো। বৌদিকে রিক্সার চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো স্থানীয় থানায়। জুতো চুরির দায়ে কয়েদ বন্দি।
তারপরের ঘটনাটাতো সবার জানা। বল্টুদারা তার কিছুক্ষন পরেই সমুদ্রতীরে এসেছিলো। কোথাও খুঁজে পায়নি বৌদিকে। ওয়াচ টাওয়ারের পুলিশও খবর দিতে পারেনি। ডাবের দোকানে কেউ ছিলো না।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন