অণুগল্প ১ বৈশাখের বিশেষ সংখ্যায় অমিত প্রসন্ন মুখার্জি
by
·
Published
· Updated
বাচ্চু একাই লড়ে। আসলে জীবনের মতো খিদেটাও নিজস্ব। ওর পরিচয় বছর ১৫-এর ছেলে, না জন্মতারিখ দেখে বলছিনা। আস্তাকুঁড়ে থেকে ওকে কিছু লোক কুড়িয়ে পেয়েছিল শুনেছিলাম আর তারপর কোনভাবে বড় হয়েই ভিক্ষার বাটি নিয়ে বাকি ছেলেপুলে দের মতো দাঁড় করিয়ে দিতো। কিন্তু বিনা কর্মে ভিক্ষা চাওয়া তে নাকি তার নৈতিকতা বাধ সাধতো। পালিয়ে এসেছিলো বাচ্চু। আসলে ওর কোনও নাম নেই, ঘর ও ছিলনা। আজকাল ওই শিয়ালদহ চত্বরে বস্তিতে ঘোরাঘুরি করে। কিছু মানুষ ভালো আছে বলে হয়তো ডেকে চা পাউরুটি খাওয়াই, আসলে আবাসিকহীন পরিচয়হীন মানুষের দুবেলা খাওয়া টা লটারি পাওয়ার থেকে কম কিছু নয়। বাচ্চু পড়াশোনা করতে চাই। সে বস্তির নেশাখোর ছেলেদের আস্তানা চেনে না তবে সরকারি স্কুলের ঠিকানা জানে। সে গেটের বাইরে থেকে ভেতরের পৃথিবীর গন্ধ নেওয়ার চেষ্টা করে। কাজ কোথাও মেলেনি। কলকাতা শহর সবাই কে আপন করলেও কর্মসংস্থানে এখনও বিভেদ করে। দুবেলা খাওয়ার থেকেও কেন জানিনা ছেলেটা পড়াশোনা কে বেশি গুরুত্ব দিতো। ও বলতো খিদে মরে যায় বাবু সমস্যা নেই কিন্তু ইচ্ছাশক্তি মরে গেলে নির্জীব হয়ে যাবো যে। বহুকষ্টে সে কাজ জোটালো। না মুটে না। আধপেটা খেয়ে একটা রোগাটে কঙ্কালসার ছেলে মনের জোরে চেষ্টা দেখালেও পারবে না শক্তির লড়াইয়ে টিকতে। তাই বাড়ি বাড়ি কাগজ বই খাতা ম্যাগাজিন সংগ্রহ করে সেগুলো অন্য জায়গায় দিয়ে আসার কাজ পেলো। মজুরি খুব সামান্য কিন্তু সন্তুষ্টি সীমাহীন। বই খাতার সাথে বন্ধুত্ব হবে যে। সে ততদিনে অনেক বই জোগাড় করেছে, কখনও টেক্সট বই, গল্প বই, আচ্যিভার্স আবার কখনও ইংরেজি তে লেখা বই। সে সবাইকে আপন করতো,এগুলো দিতো না ওদের, এগুলো পাতা ছিঁড়ে ফেলবে, অপচয় হবে, থাক না তার কাছে। স্কুলের জামা পড়ে মাঝে মাঝে ঢুকে যেতো স্কুলে, বেঞ্চের তলাই লুকিয়ে পড়াশোনা শুনতো। সর্বশিক্ষা অভিজানের আলো ও পায়নি কিন্তু ছায়া কে অনুসরণ করতে ভুলিনি বাচ্চু। ফাঁকা সময়ে বস্তির বাচ্চা দের পড়াতো কেউ জিজ্ঞাসা করলে এক মুখ হাসি নিয়ে গর্ব করে বলতো “শিক্ষা নিজের মধ্যে রাখতে হয় কোথায় লিখা বাবু”। বাচ্চুর বন্ধু শুধু বাস্তব যে ওকে খালি পায়ে পরনে ছেঁড়া জামা পরে পালিয়ে আসতে বলেছিল নতুন ভবিষ্যৎ গড়ার হাতছানি দেখিয়ে।
রাত ১০ টা, ফোনকল বেজে উঠলো।
– হ্যালো কে বলছেন?
– বাবু আমি বাচ্চু, কাল ইন্টারভিও টা পাশ করে গেছি। খবর পেয়েই আপনাকে ফোন করলাম।
– হ্যাঁ রে যোগ্যতা দেখতে চাইনি তোর?
– টেস্ট নিয়েছিল, কমিউনিকেশন স্ক্লিল পরীক্ষা করেছিল। সন্তুষ্ট হয়ে আর কিছু জানতে চাইনি। জয়েনিং লেটার ধরিয়ে দিলো।
১২ বছর পর আজ বুঝছি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে যারা পরিশ্রম না করে সাফল্য কে দোষারোপ করে তারা জানেই না বাইরে বাচ্চুরা শেষ না দেখে এক ইঞ্চি জমি ছাড়ে না।