গারো পাহাড়ের গদ্যে এস এম শাহনূর (পর্ব- ১১)

রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য ময়মনসিংহ:

“রবীন্দ্রনাথ ময়মনসিংহে যেসব অভিভাষণ প্রদান করেন পরবর্তীতে তা বিশ্বভারতী, শান্তি নিকেতনের গ্রন্থে স্থান পেয়েছে। ’‘মানসী, পূরবীতেও তার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা পত্রস্থ হয়েছে।”

১৯২৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঢাকায় আসেন। এক সপ্তাহ ঢাকায় থাকেন। ১৯২৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি(৩রা ফাল্গুন ১৩৩২ বঙ্গাব্দ) ঢাকা থেকে ট্রেনে চেপে কবির সফর সঙ্গীদের নিয়ে ময়মনসিংহ আসেন বিকেলে। রেলস্টেশনে মুক্তাগাছার মহারাজ শশীকান্ত আচার্য্য চৌধুরী ও অভ্যর্থনা কমিটির সদস্যরা কবিকে আন্তরিক অভ্যর্থনা জানান। এ সময় উলুধ্বনি ও শঙ্খধ্বনি দেয়া হয়। শতহস্তে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে বিশ্ব কবিকে স্বাগত জানানো হয়। এসময় কবির পাশে ছিলেন তার পুত্র রথীন্দ্রনাথ, পুত্রবধূ প্রতিমা দেবী, দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ইতালির অধ্যক্ষ জোসেফ তুচি প্রমুখ।পরে রেলস্টেশন থেকে কবিকে নিয়ে আসা হয় মহারাজ শশীকান্তের অতিথিশালা আলেকজান্দ্রার ক্যাসেলে। এখানে কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে কবি সন্ধ্যায় যোগ দেন টাউন হলের নাগরিক সংবর্ধনায়।

মহারাজ শশীকান্তের আমন্ত্রণে রবি ঠাকুরের এটিই ছিল ময়মনসিংহে প্রথম ও শেষ সফর। তিন দিনের সফরে কবি ছিলেন শশীকান্তের বাগান বাড়ি আলেজান্দ্রার ক্যাসেলে মহারাজার রাজসিক অতিথি হয়ে। কবিগুরু আলেকজান্দ্রা ক্যাসেলে অবস্থানকালে ব্রহ্মপুত্র নদের শীতল বাতাসে,একটি বিশালাকার বৃক্ষতলে বসে অনেক কবিতা রচনা করেছেন । গাছটি এখনো ভ্রমণপিপাষুদের আকৃষ্ট করে।

৪ঠা ফালগুন /১৩৩২ সন মঙ্গলবার কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ময়মনসিংহে আগমনের দ্বিতীয় দিনে ব্রাহ্ম মন্দির (বর্তমান ল কলেজের স্থানে প্রতিষ্ঠিত ছিল।)পরিদর্শন করেন।
রবীন্দ্রনাথ নিজে ব্রাহ্ম ধর্মাবলম্বী, পরন্তু ব্রাহ্মসমাজে তিনি গুরুপ্রতিম, সুতরাং তার আগমনে ময়মনসিংহের ব্রাহ্মসমাজে উৎসাহ আনন্দ ব্যাকুলতা স্বাভাবিকভাবেই সৃষ্ট হলো। গুরুদেবকে সংবর্ধনা জ্ঞাপনের জন্য স্থানীয় ব্রাহ্মসমাজ গাঙ্গিনারপাড় ব্রাহ্মমন্দিরে যথোচিত ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ আয়োজন করে।
পূর্বাহ্ণে আটটায় ব্রাহ্মমন্দিরে পৌঁছানোর পর ব্রাহ্ম নেতৃবৃন্দ সেখানে তাঁকে অভ্যর্থনা জ্ঞাপন এবং অভিনন্দন প্রদান করেন। অভিনন্দন প্রদান করার পর কবিবর তার উত্তরে সুদীর্ঘ এক বক্তৃতা করেন।

“কবি ময়মনসিংহ ছিলেন ১৫ ফেব্রুয়ারি বিকেল থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি সকাল পর্যন্ত। ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে কবি যোগ দেন আনন্দ মোহন কলেজের সংবর্ধনায়। কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আন্তরিক উৎসাহ ও উদ্দীপনায় কবিকে অভ্যর্থনা জানান। এ সময় বিশ্বভারতীর আদর্শ ও কর্মসূচীর প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন ৬২৫ টাকার তোড়া প্রদান করা হয় কলেজের পক্ষ থেকে। সংবর্ধনা সভায় সভাপতি ছিলেন আনন্দ মোহন কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ জে কে ঘোষ।

১৭ ফেব্রুয়ারি কবি যোগ দেন মুক্তাগাছার সাহিত্য সংসদ ত্রয়োদশী সম্মিলনে। বিশ্বভারতীর সাহায্যার্থে কবিকে দেড় হাজার টাকা এবং অভিনন্দনপত্র দেয়া হয় এ সময়। ১৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বিদ্যাময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও সন্ধ্যায় সিটি স্কুলে মহিলা সমিতি আয়োজিত সংবর্ধনায় যোগ দেন কবি। ১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে শান্তি নিকেতনের প্রাক্তন ছাত্র জমিদার প্রমোদ চন্দ্র রায় চৌধুরীর আমন্ত্রণে কবি ঈশ্বরগঞ্জের আঠারবাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। সেদিন কবির সঙ্গে ছিলেন পুত্রবধূ প্রতিমা দেবী, নাতনি নন্দিনী, ভ্রাতুষ্পুত্র দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কালিমোহন ঘোষ ও ব্যক্তিগত সচিব মি. হিরজাই মরিস।”১

➤তথ্য ঋণ:
[১] ময়মনসিংহে রবীন্দ্রনাথ’।।আহমদ রফিক
[২] রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে রবীন্দ্র পর্ষদের উদ্যোগে প্রকাশিত
একদশক পূর্তি স্মারক-১৪১৫
[৩] কবির আগমনে মেতেছিল তিন নগর
দৈনিক জনকণ্ঠ
প্রকাশিতঃ মে ২১, ২০১৬।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।