গল্পবাজে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক

একটি নিষ্করুণ চিত্র – কল্প

রাস্তার বাঁ ধার ধরে বৃদ্ধ লোকটিকে প্রায়ই লাঠি ঠুকে ঠুকে যেতে দেখা যেত কতদিন; চোখে হাই- পাওয়ারের চশমা, হাতে ছোট্ট একটা থলি; দিন গুজরানের জন্যই হয়তো বা তাঁকে বেরোতে হয়। সামনা- সামনি দেখা হ’লে জিজ্ঞাসা, ” ভালো তো? ” প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য ব্যগ্র মোটেই নন, কারন তিনি বহুদিনই শ্রবন- শক্তি হীন; স্ত্রী ও হয়েছেন গত , বেশ কিছু দিন।পথে তাই একা চলেন; করেন বিড়বিড় আপন মনে, নিজের সঙ্গেই বলেন কথা আপন মনে, অপরের পক্ষে বোধাতীত, কারন তা বড় ক্ষীণ উচ্চারনে।

ভদ্রলোকের, এ পাড়ার শেষ প্রান্তে বাস; ছিলেন প্রবাসে বহু দিন। এখানে এসেছেন সস্ত্রীক কিছু দিন। পুত্র- কন্যারা সব বিদেশে, যোগাযোগ মাধ্যম স্মার্টফোন;সময়মত কথা হয় নাতি- নাতনী সাথে, বুকে চেপে সহস্র যন্ত্রনা। এখন একা, বিপত্নীক, জীবন-সঙ্গী গেলেন ছেড়ে নিঃশব্দে, হলেন ভয়ানক একা,অশক্ত;সত্যের মুখোমুখি হওয়ার অপেক্ষায় আছেন নির্ভীক।

নিজেদের পুরোনো আস্তানা ছেড়ে, এ পাড়ায় এসেছেন; কাছেই আত্মীয়- স্বজনের বাস; গঙ্গার ধার, হয়তো বা পাবেন স্বজনের সাথ শেষ যাত্রা কালে; মনে ছিল আশ, সেটা কতটা পুরে, কে জানে, জাগায় প্রশ্ন চিহ্ন সকলের মনে।

অনেক দিনই দেখিনি লোকটিকে; চিন্তিত, কিছু হ’ল নাকি! খোঁজ করে জানি, ভদ্র- লোকটিকে মেরেছে ধাক্কা পথে উন্নয়ন- বাইক; পড়ে ছিলেন মুখ থুবড়ে রাস্তার একধারে,অসহায় সংজ্ঞাহীন। বাইক- চালক, মনুষ্যত্ব – হীন, নব্য-যুবক, ও কিছু নয় ভেবে দিয়েছে চম্পট, নতুন-যুগের- প্রচলিত অজ্ঞান- গুণে।

শোনা যায়, ঘণ্টা খানেক পরে স্থানীয় পুলিশ এসে নিয়ে যায় তাঁকে, স্থানীয় গ্রামীন হাসপাতালে।
সেখানেও বৃদ্ধ ছিলেন অবজ্ঞাত, পরিষেবকের দৃষ্টির বাইরে, বারান্দার আলো- আঁধারীরএক কোনে, সত্যের মুখোমুখি নিভৃতে।

তারপর, কখন কে জানে, কোন পরিষেবকের পায়ে ঠেকে, মনুষ্য- শব হয়ে ওঠে চিন্তার কারণ; হয় চেঁচামেচি, চীৎকার,দূরন্ত আলোড়ন। ডাঃ বাবুর, মৃত সিদ্ধান্তে চলে যায় বৃদ্ধের লাশ মর্গে, ময়না- তদন্তে; শনাক্ত -হীনের শেষ পরিণতি, যা হবার,তাই হয়েছে ডোমের ইচ্ছাপূরণে।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।