ক্যাফে ধারাবাহিক উপন্যাসে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক (পর্ব – ১৩)

শহিদ ভগৎ সিং চরিত

চতুর্থ অধ্যায় || চতুর্থ পর্ব

কাহিনীকার বলে চলেছে,
“নৌ- জোয়ান ভারত সভা ছাড়াও গঠিত হয়েছে, লাহোর স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, বাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, বাল ভারত-সভা ইত্যাদি। এভাবে সব ছাত্রদের নয়নের মণি হয়ে উঠছে, আমাদের ভগৎ। তার অসাধারণ দেশোদ্দীপ্ত যুক্তি সম্পন্ন
বক্তৃতার বাচন ভঙ্গিমায় সবাই মুগ্ধ। ঐ সময়, লাহোর- কংগ্রেসের অবিসংবাদী নেতা হচ্ছেন লালা- লাজপত রাই;কিন্তু, তাঁর পরিবারের অনেকেই ভগতের ব্যক্তিত্বের জাদুতে মুগ্ধ; ঐ সব ইউনিয়নের সেক্রেটারী বা প্রেসিডেন্ট হচ্ছে লালাজির নাতি- পুতি। লালাজির
রাজনীতি ছিল সাম্প্রদায়িক (কম্যুনাল), সেটা আবার আমাদের ভগতের না- পসন্দ। 1926 সালের দশেরা বম্ব-কেস ঘটনার পর, ভগৎকে কিছুদিন আণ্ডার- গ্রাউন্ডে থাকতে হয়। লালা- প্রহ্লাদ চাঁদ নামে একজন ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন ভগতের অনুগামী; তাঁর
প্রচেষ্টায় এক মুসলমান শ্রমিক, ইব্রাহিমের কুঠিরে ভগৎ আশ্রয় পায়। প্রহ্লাদজি, একটা হীরের আংটি ভগতকে দিয়েছিলেন। দরিদ্র ইব্রাহিমের বাড়ি থেকে আসবার সময়, ইব্রাহিমের মেয়ের বিয়ে উপলক্ষ্যে, ভগৎ ঐ আংটিটা, বোন সাকিনাকে ভাই’র উপহার হিসেবে দিয়ে দেয়। ভগৎ সিংজি
ছিলেন অসাম্প্রদায়িক, ধর্মীয়
ব্যবধানের অনেক উর্দ্ধে ছিল তাঁর অবস্থান। “

বায়োস্কোপওয়ালা, হ্যান্ডেল ঘোরাতে আরম্ভ করেছে; বাইরে ছেলের দল উৎসাহে, বাক্সের খোপে মুখ- চোখ রেখেছে, দেখছে, ভগৎ সিংজি কেমন বুদ্ধিদীপ্ত চোখে ভাষণ দিতে শুরু করেছে, ‘বলে চলেছে দেশের ইতিহাস; দেশের সাহিত্য পড়ার জন্য অনুরোধ করছে।সাহিত্যের মাধ্যমেই মানুষের আশা- আকাঙ্খা প্রতিফলিত হয়ে থাকে, আর সহজেই মানুষের মনের অবস্থান লক্ষ্য করা যায়; ধারণা থেকে বৈপ্লবিক চেতনার বিকাশ ঘটে। ইতালির সাহিত্য জগতেMazzine’ র অবদান না থাকলেGaribaldi’ র পক্ষে বিপ্লবের জন্য বিশাল সৈন্য- বাহিনী সংগ্রহ করা সম্ভব হত না,
Galelic ভাষার উন্নতির ফলেই
Ireland’ র বিপ্লব ত্বরান্বিত হয়েছে। RousseauএবংVoltaire’র
সাহিত্যিক অবদান যে ফরাসী বিপ্লব ঘটিয়েছিল, তা বলাই বাহুল্য। Tolstoy, Karl Marx, Gorky’র সাহিত্য সম্ভার ছিল রাশিয়ায় বিপ্লবের অন্যতম হাতিয়ার; কম্যুনিজম ধ্যান- ধারণার প্রচার ও প্রতিষ্ঠিত করতে, বিপ্লবকে সফল করতে, ওগুলোর
অবদান, প্রশ্নাতীত। বাংলায় স্বামী বিবেকানন্দ, নজরুল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তাঁদের সাহিত্যের মাধ্যমে মানুষের মনে স্বাধীনতার স্পৃহা জাগিয়ে তুলেছেন। তাই, দেশ- বিদেশের সাহিত্য পড়, দেশকে জানতে পারবে; নিজের ধারণা, যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত কর। ‘

‘আমার দেশের ঐক্যের প্রধান অন্তরায় হচ্ছে untouchability
এটা দেশের অভিশাপ; ধর্মের দোহাই দিয়ে, ধর্মীয় সাহিত্যের মাধ্যমে দেশের প্রায় ছ’কোটি মানুষকে পশুর মত জীবন- যাপন করতে( বাধ্য ্রা্র্রা্্রা্র্রা্) বাধ্য করা হচ্ছে। মানুষকে স্পর্শ করলে, মানুষ হয়ে যায় অপবিত্র, পৃথিবীর কোথাও এ অসভ্যতা, এ বর্বরতা নেই। এ ধারণার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার ইঙ্গিত দিচ্ছেন, আমাদের ভগৎ; বলছেন, সকলের সমানাধিকার
(সকলের ্না্ন্না্্না্ন্না্না্ন্না্্না্ন্না)
চাই; শ্রমিক- কৃষকই সমাজের ভিত্তি; তাদের উন্নয়নেই যে সমাজের প্রগতি, তা মানুষকে বোঝাতে হবে; কায়েমী, স্বার্থান্বেষী
মানুষেরা তো অপরকে শোষণ করেই নিজেদের আখের বৃদ্ধি করে, তাই এ সবের মাধ্যমে মানুষকে বিভিন্নভাবে দাবিয়ে রাখে। সকলকে ভাই বলে বুকে জড়িয়ে ধরতে হবে; অনেক রাজনৈতিক নেতা আছেন ( পণ্ডিত মালব্যজি), অচ্ছুৎ হাতের মালা গলায় পরে, বাড়ি গিয়ে চান করে নিজেকে শুদ্ধ করেন; ঐ সব মেকি নেতাদের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখতে হবে; আর এর জন্য ছাত্র- যুবকদেরই এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন।’

” দেখ, জন-নেতার সবগুণই
ভগতের মধ্যে ফুটে উঠছে”, বলে
বায়োস্কোপওয়ালা হ্যান্ডেল ঘোরানো বন্ধ করে ভিতরের রিল পাল্টানো শুরু করলো।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।