সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক (পর্ব – ২)

শহরতলির ইতিকথা
রাধাকান্ত বাবু, শিবপুরের ভাড়া বাড়ি থেকেই বাসে করে ডালহৌসী স্কয়ারে যান। সকাল ন’টায় বেরিয়ে, ফিরতে ফিরতে সাঁঝবেলা হয়ে যায়, কখনও কখনও অন্ধকার হয়। মেয়ে দুটো, স্থানীয় গার্লস-স্কুলে পড়ছে। সংসারের দায়-দায়িত্ব, সবই স্ত্রী নিভাননীর উপর বর্তেছে। শ্বশুর বাড়ির কাছে বাড়ি ভাড়া নেওয়ায়, ওবাড়ির প্রভাবটাও পড়তে দেরি হয়নি; তা হোক, উদ্দেশ্য যদি মহৎ হয়, তবে তা মানতে রাধাকান্ত মিত্তির পিছপা নয়, কিন্ত —
দিন কাটে; মিত্রমশাই, অফিস-বাড়ি করেন; অফিসে প্রমোশনও পেয়েছেন; আর্থিক দিক থেকে খুব সচ্ছল না বললেও, অভাবের তাড়না যে নেই, তা বলা যেতেই পারে। নিজেও হুঁকোতে তামাকু সেবন ছাড়া, আর কোনো নেশাতে জড়াননি; পৈতৃক বাড়ির ভাড়ার সঙ্গে আর কিছু টাকা যোগ করে শিবপুরের বাড়ির ভাড়াটা দেওয়া হয়। নিজের শ্যালক অনিন্দ্য এসে বোনের ভাড়া-বাড়ি, গুছিয়ে দিয়েছে, ভাগনিদের স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থাও করেছে। তাই, সংসারে, নিভাননীর দাপটটাও বেড়ে চলেছে। বড় মেয়ের পড়ার জন্য বাড়িতে টিউটর রাখা হয়েছে, ছোট শান্তিকে, তিনিই দেখান। মেয়ে দু’টোর উপর মায়ের প্রভাবই বেশি, বলা যেতে পারে; এটাই স্বাভাবিক, মা-ই তো মেয়েদের সবচেয়ে বড় বন্ধু।কিন্ত —
নিভাননীদেবী যে প্রাক-বিবাহ কোন সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলেন, তা, তাঁর বাড়ির লোক সব জানতো; সব গোপন করে রাধাকান্ত বাবুর সংগে বিয়ে হয়। শিবপুরে ভাড়া বাড়িতে এসে, সেই পুরনো সম্পর্ক আবার নতুন করে জোড়া লেগেছে। রাধাকান্তবাবুর কানে, সে কথা এসেছে। পুরনো সম্পর্ক থাকতেই পারে, তবে বিবাহ পরবর্তী সেই সম্পর্ক ন্যক্কারজনক, বিশেষ করে তার প্রভাব মেয়েদের উপর পড়াই স্বাভাবিক। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে ঠাণ্ডা লড়াই চলছে।
একদিন শ্যালককে, রাধাকান্তবাবু খোলাখুলি জিজ্ঞেস করতেই তিনি স্বীকার করেন, উত্তরে বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম, বিয়ে হয়ে গেলে, সব ঠিক হয়ে যাবে; নীচুজাতের ঘরে, কুলীন কায়স্থের মেয়ের বিয়ে কখনও মানা যাবে না। মিত্তির মশাই, শিবপুরে আসার সময়, আপনি তো আমাদের মতামতও নেননি; এর দায় আমাদের উপর না চালালেই খুশি হবো।”
সংসারের এই ছন্নছাড়া অবস্থায়, বড় মেয়ে রমা ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছে, এবং যথারীতি অকৃতকার্য হয়েছে। শ্যালকের পরামর্শ মত, রাধাকান্ত বাবু, তাঁর পরিবারের বাস শিবপুর থেকে উঠিয়ে, মফস্বল শহরে ফিরে যাবার হুকুম জারি করেছেন; নিজে আসেননি, হাওড়া স্টেশন থেকে টিকিট কেটে তুলে দিয়েছেন। বাড়ি তো, ধর্মদাস হাজরা মশাই, মিত্তির মশাই ‘র কথামত পরিষ্কার করেই রেখেছিলেন; তারপর থেকেই, রমা-শান্তিরা, ভাড়া না দেওয়ার অংশে রয়েছেন। আত্মীয়-স্বজনেরা জানলো, পরীক্ষার অসাফল্যের লজ্জার জন্যই শহরে ফিরে এসেছে। এবার, এ বাড়িতে পড়েই, প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে বসা যাবে। গত বছরই ম্যাট্রিক পরীক্ষার শেষ বছর ছিল। এখনও ফেল করা ছেলে-মেয়েরা, দু’এক বছর সময় পাবে। স্কুল থেকে মধ্যশিক্ষা পরিষদের অধীনে পরীক্ষার নাম হয়েছে, স্কুল ফাইন্যাল পরীক্ষা। রমা অবশ্য, এবারও ম্যাট্রিক পরীক্ষাই দেবে। দেখা যাক—
চলবে