ধারাবাহিক রম্য রচনায় সংযুক্তা দত্ত – ২৪

চাকরি করতে গিয়ে নাচ!কী ভয়ংকর ব‍্যাপার রে বাবা! আর শুনে তেমন ক্ষ‍েপল আমার বাবা!
আমার প্রথম চাকরি, গ্রাজুয়েশন শেষ করে আর এম, বি, এ পড়ার মাঝখানে।
অফিস টা বেশ ছিল। আমি সবার চেয়ে ছোট বলে সবাই খুব কেয়ার করত আর সেখানে আমার থেকে অল্প বড় একদল ছেলে মেয়ে ছিল আর আমি তো চিরকালের হুজুগে পাব্লিক তাই অফিস টাও বেশ এক্সটেন্ডেড কলেজ টাইপ ছিল। তা বলে ভেবো না কাজ করতাম না, তবে কাজের আনন্দ ছিল।
তা অফিসের একটা নতুন ব্রান্চ খুলবে। একটা গ্রান্ড ইনোগোরেশন হবার কথা। অনেক অনুষ্ঠান হবে সেখানে। আমার কয়েকজন আনলিমিটেড পাগল টাইপ মানুষ মিলে ভাবলাম আমরা তো একখানা প্রোগ্রাম করতে পারি। ধরলাম গিয়ে আমাদের বসকে। তিনি একটু হকচকিয়ে গেলেও তার সিনিয়রকে বলে রাজি করিয়ে ফেললেন।
আমরা মহা উৎসাহে রির্হাসাল শুরু করে দিলাম। আর ওই ঢেঁকি যেমন স্বর্গে গিয়েও ধান ভাঙে তেমনই নাচের কোরিওগ্রাফির দায়িত্ব পড়ল আমার উপর। একটা রবীন্দ্রনৃত‍্য আর একটা ফোক ঠিক হল। কী সব অবস্থা হয়ত আমাদের মধ‍্যে একজন তখনো ক্লায়েন্টের সাথে কথা বলছে, বাকিরা বাইরে থেকে হাত নেড়ে বলছে, শেষ কর এবার। কনফারেন্স রুমে মিটিং চলছে. আমরা নাচের শাড়ির রঙ ঠিক করছি কাগজের টুকরোতে লিখে, একে অপরকে। তখন তো সবার মোবাইল নেই আর হোয়াটসআপ নামক বস্তুটার তো নামই জানি না।
লেট করে বাড়ি ফিরছি, বাবা গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে, ভাবছে মেয়েটা কত কাজই না করছে। যেই শুনেছে নাচের রিহার্সাল, সে তো রেগে কাঁই। বলে , তুই অফিসও বাদ দিবি না?
এই অবধি পড়ে সবাই নিশ্চয়ই ভাবছ এরপর একটা সাক্সেসফুল অনুষ্ঠানের বর্ণনা দেব? নাহ , দুঃখের বিষয় সেই অনুষ্ঠানে আমাদের নাচটা হয় নি, হেড অফিস থেকে ক‍্যান্সেল করে দেয়। তখন খুব খারাপ লেগেছিল, কিন্তু কী আর করা?
সব কী আর আমরা পাই। বেশিটাই তো যাহা চাই তাহা পাই না। তবে স্মৃতির মনিকোঠায় যা রয়ে যায় সত‍্যিই কিন্তু তা এক একটি মণি মাণিক‍্য। মাঝে মাঝে স্মৃতির লকার খুলে নাড়াচাড়া করলে নিজেকে বেশ একজন ধনী ব‍্যক্তি মনে হয়।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।