সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে তুলি রায় (অন্তিম পর্ব)

নামকরণ

পথ তুমি কি স্থবির হইয়াছো? এই যে স্থবির আয়োজন তাহা কি কেবলই কালবেলা? পলাশে – শিমুলে যে রং তাহা পাইতে গাছ নিজেকে নিঃস্ব করিয়া ফেলে প্রতিবার হংস নিদ্রা ভাঙিয়া। পৌষালী ধানে বন্য শীতের পরশ অতিক্রম করিয়া যে কাল আসিয়াছে – তাহার নাম রাখিলাম পলাশ। তুমি তাহাকে কালবেলা নামেই ডাকিও। আমি ক্ষণিকের ত্বরে তাহার আগুন রঙে পাগল-ই রহিলাম। এই যে এত রং-এর বাহার, তাহা আনয়ন করিতে সে কতখানি নিঃস্ব হইয়াছে তাহার খবর কি রাখিয়াছো? সকল পাতা ঝরাইয়া, শক্তি ক্ষয় করিয়া সে যে কেবল তোমাদিগের আনন্দ দিতেছে। আর স্ব-আনন্দে তোমরা তাহা পান করিতেছো মধুকরের ন্যায়।
কখনও বিমূর্ত ছবি আঁকিতে বসিয়া দেখিও কতখানি নিঃস্ব তুমি। প্রতি মুহূর্তে তাহার যে প্রকারান্তর তা তোমার ধারণার কত উর্ধ্বে! একরূপ প্রকট হইতে না হইতেই আরেক রূপ আসিয়া উপস্থিত হইতেছে চক্ষুর অলক্ষ্যে। ” যেন তারে ধরি ধরি মনে করি, ধরতে গেলাম আর পেলাম না “। যেন সাত বর্ণের প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি পল। ক্ষণে আছে ক্ষণে নাই। আবার সব মিলিয়া সেই নিরাকার । এই এক মানব দেহে যেমন করিয়া প্রেম-অপ্রেম বর্তমান। যেমন ভাব তেমন স্বভাব। সব গিয়া মিলাইলে সেই সাদা। সত্ব-তম-রজঃ ইহা শুধুই কি গুন মাত্র? প্রকারান্তর কর্মজীবন জুড়িয়া আমরা যা জড়ো করিতেছি তাহা কি কেবলই অভ্যাস? প্রারব্ধ ক্রীড়া’য় যাহার সংযুক্তি ও বর্ধন হইতেছে তাহা কি কিছুই নহে? ইহকাল পূর্ণ হইলো বুঝি! হে মুক্তিপথের কণ্টকাকীর্ণ যাত্রা, হে বিমূর্ত প্রতীক তুমি প্রকটিত হও। সত্যরে সহজ করিয়া পঞ্চভূতের মোহ কাটাইয়া যেন তোমাতেই নিমজ্জিত রহিতে পারি জন্ম জন্মান্তর ধরিয়া। তোমার নামকরণ করিব এমন সাধ্য নাই। সকলি নামকরণ তোমা হইতেই উদ্ভূত তোমাতেই নিমজ্জিত , ক্রীড়া বই-তো নয়!

সমাপ্ত

Spread the love

You may also like...

error: Content is protected !!