কবিতায় তনিমা হাজরা

আমি তনিমা হাজরা। লিখি কবিতা, গল্প, অনুগল্প, মুক্তগদ্য, প্রবন্ধ।

কপটা টি

যেমন করে চাষীকে ঠকাতে ঠকাতে,
চকচকে নিয়নের লোভ দেখাতে দেখাতে
গিলি গিলি আপ্পা……
আমরা শ্রমিক বানিয়ে ফেলি,
জাদুদন্ডের আঘাতে
তুলসীমঞ্চ, খোড়ো চাল, পুঁইলতা, লাউমাচা, ভেঙে পড়ে,
রেললাইনের পাড় ধরে গড়ে ওঠে
সারবদ্ধ বস্তি, সারিবদ্ধ বারোয়ারী পায়খানাঘর, প্ল্যাষ্টিকের স্তূপ, টায়ার পোড়ার কটু গন্ধ,
অন্ধকার গলিতে বিড়িগন্ধ হাত পায়রার আস্তিন খোঁজে ঘেমো ব্লাউজের ভিতরে।।
মালতী, সাবিত্রীরা ছাপাশাড়ি ছেড়ে
জ্যালজেলে ম্যাক্সি পরতে শেখে,
পুকুরপাড় ছেড়ে চেনে কলতলার লাইন,
পান্তাভাত ছেড়ে রুটি তড়কা।
জড়িবুটি ওষুধের প্রয়োগ ছেড়ে কপার-টির ব্যবহার।
আলতা ছেড়ে মেহেন্দি, নেলপালিশ।
ছয় ফুট বাই আট ফুট ঘরে
অনেক গুলি থান ইঁটের উপরে পাঁচ বাই পাঁচ চৌকি পাতা।
চৌকির নীচে ষ্টোভে রান্না, পাশে এ্যালুমিনিয়ামের বাসন, কোসন, চাল,আটা,ডাল,তেল,নুন,চিনি,বিস্কুট, চাপাতা।
রান্না হয়ে গেলে রাতে সেই চৌকির নীচে মাদুরে পাগুটিয়ে কালা শাশুড়ী ঘুমায়।।
রাতের ক্ষুধার্ত ইঁদুরেরা এসে তার হাজায় অসাড় গোড়ালি চেটে খায়।
সঙ্গম ভূকম্পে সস্তার খাট দোলে,
ইঁটের পাটাতন দোলে,
কিন্তু ভাগ্য দোলে না একটুও।।
দেওয়ালের একপাশে আয়না, চিরুনি, সেফটিপিনের বেসাতি ঝোলে,
লোকাল ট্রেন গুলি বন্ধ এখন,
তাই ঘরের পুরুষমানুষ ঘরে বসা,
ট্যাঁকে পয়সা নেই, ভরসা ত্রাণ আর বেস্পতিবারের একটি একটি টাকা তুলে জমানো লক্ষ্ণীর ভাঁড়।।
অপুষ্টিতে অণ্ডকোষেও শুক্রাণু বাড়ন্ত, তবুও অসহায় লিঙ্গের উত্থান শুকনো যোণির ভেতর শেষ আশ্রয়টুকু খোঁজে আধপেট মাড় ভাত খেয়ে।
ভাগ্যিস বউটার কপার-টি পরানো হয়েছিল বুদ্ধি করে, নচেৎ শিশুর দুধটুকু
জোগাড় করতে হেঁচকি উঠে যেত।।
দোকানে দোকানে রোজ কেন এত ইঁদুর মারা বিষ আর ফলিডলের খোঁজ??
কারা খোঁজে??
বেস্পতিবারের ভাঁড়ে আর যেকটা টাকা পড়ে আছে তাতে একপাতা ইঁদুর মারা বিষ কেনা হবে দিব্যি হেসেখেলে।।
এই ডামাডোলে বেশকিছু ইঁদুর মরে গেলে
চুপচাপ হরিবোলে,
রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিও ভাবছে তলেতলে
এবার কপার-টি পরে নেবে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।