ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব – ৬৪)

সুমনা ও জাদু পালক

রাজা রুদ্র মহিপাল বিস্মিত হয়ে বললেন, ভারী মজার ব্যাপার তো! শয়তান হূডুর বিরুদ্ধে তোমাদের এই অভিযানে যিনি সাহায্য করছেন, তিনি অবশ্যই কোন শক্তিশালী পুরুষ। কিন্তু তিনি আড়ালে কেন?
সুমনা বলল, “এই অভিযানের শুরু থেকেই ওই অদৃশ্যকণ্ঠ আমার সঙ্গে আছেন । এই দীর্ঘ যাত্রায় প্রতিটি সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই অদৃশ্য কন্ঠ আমায় বুদ্ধি দিয়ে, সাহস জুগিয়ে সাহায্য করছেন। অদৃশ্য কন্ঠকে চোখে না দেখলেও আমার এটা মনে হয়েছে যে, উনি বাবা মহাদেবের পরম ভক্ত। আর আমি নিজে যেহেতু পরম মঙ্গলময় দেবতা শিবসুন্দরের ভক্ত, তাই হয়তো তিনি সাহায্য করছেন আমাকে।”
—– সে না হয় বুঝলাম। কিন্তু ওই অদৃশ্য কন্ঠ যে বললেন, এবার আমার বংশের হারিয়ে যাওয়া মূর্তির সন্ধান মিলবে ,সেটা কিভাবে সম্ভব আমি বুঝতে পারছি না।
অদৃশ্য কন্ঠ বলল, হে মহারাজ, একটু আগেই তো দেখলেন যে, বাবা ভোলানাথের রুদ্রাক্ষের টানে কিভাবে আপনাদের পরিবারের রক্ষা কর্ত্রী, মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী স্বর্ণ তুলসীপত্র মৃত্তিকার অভ্যন্তর থেকে বেরিয়ে এলেন বাইরে।
—— হ্যাঁ।
—— কারণটা কি জানেন?
——না।
—– অনুমান করতে পারেন?
রাজা রুদ্র মহিপাল কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললেন, না তো, আমি বুঝতে পারছি না, কিভাবে ওটা সম্ভব হল।
—– সাধারণ মানুষেরা এক দেবতার সঙ্গে অন্য দেবতার প্রভেদ করেন। আর তাইতো আপনাদের পরিবার যেহেতু ভগবান বিষ্ণুর উপাসক, তাই আপনি আপনার ছেলের কল্যাণ উপেক্ষা করেও আপনার রাজ্যে বাবা মহাদেবের মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে পারেন । আর তাই হারিয়ে ফেললেন নিজের সন্তানকে, হারিয়ে ফেললেন রাজ্য ।অথচ আপনি জানেন না যে, চতুর্ভুজ নারায়ণ এবং পঞ্চানন মহাদেব উভয়ে উভয়ের ভক্ত। যেখানে হরি সেখানেই হর, যেখানে হর সেখানেই হরি।
রাজা রুদ্র মহিপাল হাতজোড় করে বললেন, হে অদৃশ্য কন্ঠ, আমি এখন সব বুঝতে পেরেছি। আমি লজ্জিত । আমি ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে বিচার করে ,দুই মহান দেবতার মধ্যে ভেদাভেদ করেছি।
এখন হে অদৃশ্য কন্ঠ, দয়া করে আমাকে বলুন যে, আমি কিভাবে আমাদের বংশের আরাধ্য দেবতা ওই চতুর্ভুজ বিষ্ণু মূর্তি খুঁজে পাবো। আপনার মুখ থেকে শোনা ইস্তক আমার হৃদয় চঞ্চল হয়ে উঠেছে, ওই মূর্তি দর্শনের বাসনায়।
—– সেই সময় আসন্ন। তবে তার আগে আপনার প্রাসাদের অভ্যন্তরে প্রবেশ করার জন্য যদি কোন গুপ্ত পথ থাকে, তাহলে সেই পথে রাজকুমারী রত্নমালাকে রাজপুরীর অভ্যন্তরে নিয়ে যান। রত্নমালা পুরো প্রাসাদটা ঘুরে কোথায় কি আছে সে ব্যাপারে অবহিত হয়ে ফিরে আসবে।
—— হ্যাঁ ,গুপ্ত পথ তো আছে। কিন্তু রাজকুমারী রত্নমালা পুতুল প্রহরীদের দৃষ্টি এড়িয়ে কিভাবে প্রাসাদে ঘোরাঘুরি করবে বুঝতে পারছি না।
—— হে মহারাজ, আপনি ওই ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকুন। রাজকুমারী রত্ন মালার কাছে এমন একটি জিনিস আছে, যা তাকে বেশ কিছুক্ষণ অদৃশ্য অবস্থায় রাখবে। ওই অদৃশ্য অবস্থায় সে সারা প্রাসাদটা ঘুরে দেখে নিতে পারবে। আরেকটা কথা মহারাজ, প্রাসাদের অভ্যন্তরে প্রবেশ করার আগে ,রাজকুমারী চন্দ্রকান্তা কে এই বাগানের মধ্যেই কোন গুপ্তস্থানে লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
—– এই বাগানের ঈশান কোণে রাজবাটির পিছনে সেই বৃহৎ জলাশয় অবস্থিত। ওই জলাশয়ের উত্তর পাড়ে একটু বহু প্রাচীন বটবৃক্ষ আছে। ওই বটবৃক্ষে একটি গুপ্ত কোটর আছে। ওই কোটরের এর অভ্যন্তরে একটি গুপ্ত পথ আছে। সেই পথ দিয়ে রাজপুরীর রন্ধনশালার পিছনে একটু ছোট কক্ষে প্রবেশ করা যায়। আমি রাজকুমারী রত্ন মালাকে নিয়ে ওই পথে প্রবেশ করে রাজপুরীর অভ্যন্তরে রেখে ফিরে আসবো। পরবর্তী কাজ, যেমন, অদৃশ্য হয়ে সারা প্রসাদ টা ঘুরে দেখার কাজ রাজকুমারীকে একাই করতে হবে। কারণ রাজকুমারীকে পৌঁছে দিয়েই আমাকে ফিরে আসতে হবে বাগানে। কারণ রাজপুরীর সদর দরজা দিয়েই প্রবেশ করতে হবে আমাকে, তা না হলে সন্দেহ করতে পারে।
—– আর রাজকুমারী চন্দ্রকান্তার কি ব্যবস্থা হবে?
—- চন্দ্রকান্তা আমাদের সঙ্গেই ওই গাছের কোটরে প্রবেশ করবে। তারপর আমরা যখন রাজপ্রাসাদের অভ্যন্তরে যাব, চন্দ্রকান্তা ওখানেই অপেক্ষা করবে। কি চন্দ্রকান্তা, পারবে তো?
—- অবশ্যই পারব।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।