মঞ্জুকে বৌভাতের পরদিনই সকাল সকাল হাসপাতালে ভর্তি করতে হলো। বেচারা ষোলো বছরের রোগা পটকা মেয়েটার বিয়ে হয়েছিল বত্রিশ বছরের সাজোয়ান যতীনের।
তাও কি সহজ ছিল হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছানো? বাবা গো, মা গো চিৎকার করেও রেহাই দেয়নি যতীন।স্বামীর তো এই অধিকার! কিন্তু যখন ব্লিডিং বন্ধ হলো না কিছুতেই, ধীরে ধীরে নতুন বৌ নেতিয়ে পড়তে লাগলো, সবাই গাল মন্দ করলো বেশ, তবে পিসশাশুড়ির পরামর্শে সামনের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলো।
ডাক্তার বাবু যাচ্ছেতাই বললেন, “ছিঃ, আপনারা মানুষ না কি? “, যৌনাঙ্গে গভীর ক্ষত! ফিসফাস, চাপা হাসি, বন্ধুদের মস্করা! মঞ্জুর বাপের বাড়ি খবর দেওয়ার পর আর যতীনের বাড়ির কেউ হাসপাতাল মুখো হয়নি। এমনকি এরপর যতীনও মঞ্জুকে নিজের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যায় নি। ” যে মেয়ে ছেলের জন্য এতো লোক হাসাহাসি, তাকে ঘরে তুলবো আমি? “
না, যতীন আর মঞ্জুকে ঘরে তোলেনি, এখন মঞ্জু বৌদিদের খোঁটা খায় আর বাপের বাড়ির ভাত, সঙ্গে চোখের জলও। পড়াশোনা ঐ সাইকেল নেওয়া পর্যন্ত, কোথায় ই বা যাবে? কি ই বা করবে?
কদিন আগে খবরের কাগজের হেডলাইন ছিল। ধরি তার নাম মনোয়ারা। তার ও বিয়ের পর এক অবস্থা তবে তাকে সমাজের অপমান আর হজম করতে হয় নি। ইনফেকশন হয়ে তার সব জ্বালা যন্ত্রণা হাসপাতালের বেডেই শেষ হয়েছে।
যমুনা বৌদির শরীরটা ভালো না, কিন্তু রথীন দার আজ বৌদিকে খুব পেতে ইচ্ছে করছে। এটা তো স্বামীর অধিকার! তাই যমুনা বৌদি দু একবার বারণ করার চেষ্টা করলো কিন্তু ততক্ষণে যমুনা বৌদির মুখ বন্ধ করে দিয়েছে রথীন দা। যমুনা বৌদির গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে নোনতা জল, কিন্তু রথীন দার ওদিকে খেয়াল নেই!
নাটাই, সারাদিন খেটেখুটে এসে একটু বৌকে ভালোবাসে, তাতে দোষের কি? এদিকে মেয়ে ছেলেটার এতো নখরা, বলে, “বাচ্চার লাগবে! “, আরে বাচ্চা তো তোর পেটে, সারাদিনের খাটনির পর এটুকু না পেলে আর বিয়ে করা কেন? সাত মাসের গর্ভবতী নাটাই এর বৌ তাই দাঁতে দাঁত চেপে থাকে আর মনে মনে ভগবান কে ডাকে, “ঠাকুর, আমার পেটেরটাকে দেখো”। জল তার ও চোখে।
মিঃ সেন, কলেজের প্রফেসর, নেশা করলে কোনো হুঁশ থাকে না। সেদিন রাতে বাড়ি ফিরেই ঝাঁপিয়ে পড়লেন স্ত্রী ঋত্বিকার ওপর। সন্ধে বেলায়ই ঋত্বিকা ওর প্রিয় বান্ধবীর ক্যান্সারের খবরটা পেয়েছে, ওর কিছুই ভালো লাগছে না। কিন্তু মিঃ সেন কে না করতে পারলেন না। মা বিয়ের আগে শিখিয়ে পাঠিয়েছিল, “স্বামী কে ওটা থেকে কখনো বঞ্চিত করবি না, তবেই স্বামী আঁচলে বাঁধা থাকবে! “, মিঃ সেন এর কলেজের কলিগরা কত গুণবতী, রূপবতী। মায়ের কথা কি ফ্যালনা? কান্না পায়, শীৎকার কখন যেন কান্না আর চিৎকারে বদলে যায়। বিরক্ত মিঃ সেন, ” আঃ, ডিসগাসটিং”।
বৈবাহিক ধর্ষণ, যা নিয়ে বহুবার আমাদের দেশ আইন করতে করতে থেমে গেছে মাঝপথে। পনেরো বছরের নীচে স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক হলে তা বৈবাহিক ধর্ষণ! আচ্ছা, তাহলে আঠারো বছরের নীচে মেয়ের বিবাহ বুঝি আইনত সিদ্ধ? যদি তা না হয়, তাহলে পনের বছরের নীচে স্ত্রী ই বা আসবে কোথা থেকে আর তার ধর্ষণ ই বা হবে কি করে?
বিবাহ হলেই যদি স্বামী শরীরের সম্পূর্ণ অধিকার পায়, তাহলে ধরে নিতে হবে বিয়ে মানে শুধুই যৌনতা, মনের কোনো ভূমিকা নেই! যদি থাকত তবে অপরপক্ষের অনিচ্ছুক পার্টনার কে কেন বাধ্য করা হবে?
তাহলে স্বামী রাও বাধ্য থাকবে নিজেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌন মিলনে সম্মত হতে। কিন্তু তা হয় না, কারণ দৈহিক গঠন। যদি এই কারণেই স্বামী স্ত্রীর ইচ্ছার মূল্য দিতে বাধ্য না থাকে তবে কেন তা ধর্ষণ বলে গণ্য হবে না?
যেখানে নেপাল পেরেছে, ভূটান পেরেছে এ বিষয়ে দৃঢ় আইন করতে, নারীদের সম্মান দেখাতে, বা তাদের মর্যাদা দিতে ,আমরা কি আরো অক্ষম, আরো পিছিয়ে তাদের তুলনায়? এটা কি আমাদের পক্ষে খুব সম্মানের? নারী পুরুষ বুঝি না, কোনো বাদ টাদ ও বুঝি না, শুধু বুঝি পারস্পরিক সম্মান না থাকলে, একে অপরকে না বুঝলে আমরা পারবো তো এগোতে?