ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব – ৩২)

সুমনা ও জাদু পালক 

বেশ বড় আকৃতির দুটো সবুজ রঙের পাখি খুব দ্রুত এগিয়ে আসছে।
ওরা সুমনাদের কাছাকাছি হতেই অদৃশ্য কণ্ঠ জিজ্ঞাসা করল, তোমরা আমাদের পথ আটকে দিয়েছ কেন? তোমাদের সবুজ পাখির দ্বীপে নামার কোন পরিকল্পনা নেই আমাদের।
বড় পাখি দুটোর মধ্যে একটি পাখি বলল, তোমরা আমাদের সবুজ পাখির দ্বীপের কথা জানো?
—- হ্যাঁ ,জানি।
—– তাহলে আমাদের সমস্যার কথাও নিশ্চয়ই জানো তোমরা।
——না, তোমাদের সমস্যার কথা জানিনা।কী তোমাদের সমস্যা?
—- অবশ্যই বলব। তার আগে তোমাদের পরিচয় দাও।
—– অবশ্যই দেব। তোমাদের সামনে যে ধবধবে সাদা রংয়ের ঘোড়াটি দেখতে পাচ্ছ ওর নাম দুধরাজ।
—– সাদা ঘোড়ার পিঠে মানুষের মেয়ের মত দেখতে অথচ সারা গায়ে পাখিদের মতো পালক ,তাও আবার আমাদের মতই সবুজ রঙের পালক,কে ওই মেয়েটি, ওর নাম কি?
——–উনি রাজকুমারী রত্নমালা। উনি পাখিদের খুব ভালোবাসেন, তাই পাখির পালকের চাদর দিয়েছেন গায়ে।
সুমনা খুব অবাক হয়। বারবার অদৃশ্য কন্ঠ কোন এক রাজকুমারী রত্নমালার কথা উল্লেখ করছে। দৈত্যদের দেশে বলেছিল ,আবার এখানেও বলছে। এখানে তো অদৃশ্য কণ্ঠ সরাসরি তাকেই রাজকুমারী রত্নমালা বলে পরিচয় দিল। কিন্তু কেন? রাজকুমারী রত্নমালার সঙ্গে তার কি সম্পর্ক?

সুমনার হঠাৎ মনে পড়ে যায় হাসিখুশি দ্বীপে সেই ঘুমন্ত রাজপুরীর কথা। ঘুমন্ত রাজপুত্র হীরক কুমারের মাথার কাছে দেওয়ালে দুটি ফটো টাঙ্গানো ছিল । ওই ফটো দুটির মধ্যে একটি ফটো ছিল রাজপুত্র হীরক কুমারের আর অন্যটি একটি মেয়ের ফটো। মজার ব্যাপার হলো এই যে, অদ্ভুতভাবে ওই ফটোর মেয়েটির চেহারার সঙ্গে তার চেহারার মিল ছিল। কিন্তু রত্নমালার ও তার চেহারার সেই সাদৃশ্যের রহস্য তার কাছে কখনোই ভেঙ্গে বলেনি বন্ধু অদৃশ্য কণ্ঠ।তবে জানিয়েছিল যে, ওই ফটোটি রাজকুমারী রত্নমালার । বিষয়টি নিয়ে অনেক ভেবেও কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি সুমনা। চেহারার এই সাদৃশ্যের কারণ কি তবে ……??…..তবে কি…..?

সুমনার ভাবনায় হঠাৎ ছেদ পরে আগন্তুক পাখি দুটির কথায়। ওরা বলে, হে অদৃশ্য কণ্ঠ, তোমাদের যদি আমাদের সবুজ পাখির দ্বীপে না নামার পরিকল্পনা থাকে ,তাহলে আমাদের দ্বীপের উপর দিয়ে কোথায় চলেছে তোমরা?
———– আমরা যাচ্ছি জাদুকর হূডুর রাজ্যে।
——-হূডু তো এক ভয়ঙ্কর দুষ্টু জাদুকর!
—– জানি, কিন্তু যেতেই হবে আমাদের।
—–কেন জানতে পারি কী?
—– জাদুকর হূডু বন্দি করে রেখেছে পরীদের রানী কে। তাকে উদ্ধার করতে হবে।তাছাড়া হূডুর জাদুদন্ড হাতে না পেলে হাসিখুশি দ্বীপের ঘুমন্ত রাজপুরী জেগে উঠবে না।ঘুম ভাঙবে না হীরক কুমারের।হীরক কুমারের বয়স এখন এগারো বছর। বারো বছরে পরার আগেই তার ঘুম ভাঙাতে না পারলে সে আর কোনদিন জাগবে না। তাই আমাদের দ্রুত পৌঁছতে হবে জাদুকর হূডুর রাজ্যে।
——– হে অদৃশ্য কণ্ঠ,তোমাকে ধন্যবাদ জানাই, আমাদের সবটা অবগত করানোর জন্য। তোমাদের যাত্রাপথে বিলম্ব ঘটানোর জন্য আমরা দুঃখিত। কিন্তু আমরা নিরুপায় ।
—–মানে?
—–এক ভয়ানক সমস্যায় পড়ে আমরা তোমাদের সাহায্য প্রার্থী ।
——- কি তোমাদের সমস্যা, আর আমরাই বা তোমাদের কি সাহায্য করতে পারি?
——- দয়া করে তোমরা আমাদের সঙ্গে পক্ষীরাজ ও পক্ষী রানীর কাছে চলো। সেখানে গেলেই সব জানতে পারবে। তোমাদের সঙ্গে কথা বলে মনে হচ্ছে যে, তোমরা বিদেশি হলেও খুব ভালো মানুষ। হয়তো তোমরাই আমাদের সবুজ পাখির রাজ্যের সমস্যার সমাধান করতে পারবে। দয়া করে আমাদের সঙ্গে যেতে তোমরা আপত্তি কোরোনা।
—– বেশ ,চল কোথায় যেতে হবে।
পাখি দুটি এবার সুমনার সামনে এসে দুইবার ডিগবাজি খেয়ে বলল, রাজকুমারী রত্নমালা,আপনাকে স্বাগত জানাই আমাদের সবুজ পাখির দ্বীপ রাজ্যে।হে বিস্ময় ঘোটক দুধরাজ, দয়া করে রাজকুমারী রত্নমালা কে নিয়ে আসুন আমাদের সঙ্গে।
অদৃশ্য কন্ঠ বললো, চলো দুধরাজ।
সুমনাকে পিঠে বসিয়ে এগিয়ে চলল দুধরাজ। সামনে পথ দেখিয়ে চলল বড় সবুজ পাখি দুটি। আর তাদের চারিদিকে প্রায় বৃত্তাকারে ঘিরে কিচিরমিচির শব্দ করতে করতে এগিয়ে চলল ছোট ও মাঝারি আকারের অসংখ্য সবুজ রঙের পাখি।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।