ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব – ১৪)

সুমনা ও জাদু পালক

ওই আধবুড়ো অসুস্থ লোকটা প্রসাদ পাওয়ার‌ আশায় এখনো হয়তো হাঁ করে বসে আছে ক্ষ্যাপা কালীর মন্দিরে। আজ তো মঙ্গলবার ।শিউলি কাকিমা তো আজ গঞ্জের হাটে গেছে মহাজনের ঘরে গামছা জমা দিতে। ফিরে এসে রান্না করবে। আহারে, ততক্ষণ পর্যন্ত ওই ভোলাভালা লোকটা না খেয়ে বসে থাকবে !
আর তাকে ফেলে সুমনা এখানে আয়েশ করে প্রসাদ খাবে! না না, তা কিছুতেই হতে পারে না ।তারচেয়ে সুমনা কিছুটা প্রসাদ বরঞ্চ অশোক কাকা কে দিয়ে আসুক আগে, তারপর ঘরে ফিরে এসে নিজে প্রসাদ খাবে ।কিন্তু কিসে করে নিয়ে যাবে প্রসাদ?বাদল দাদু যে শালপাতা ঢাকা দিয়ে প্রসাদ এনেছিল ,সেটাতো ছিঁড়ে গেছে ।তাহলে ?দেখা যাক, রান্নাঘরে কিছু পাওয়া যায় কিনা।
মা তো কিচ্ছু ফেলেনা। গুছিয়ে রেখে দেয় সব রান্নাঘরের তাকে। মা বলে, সব কাজে লাগে সংসারে মা কিছুই ফেলে দিতে হয় না, নিতান্ত নিরুপায় না হলে।
ঠিক তাই ।রান্না ঘরে ঢুকে একটু খুঁজতেই একটা ছোট্ট মাটির হাঁড়ি পেয়ে গেল সুমনা ।আর তক্ষুনি ওর মনে পড়ে গেল ।হ্যাঁ ,ঠিকতো,
এই মাটির হাঁড়ি টা করে পুটু পিসি দিনকয়েক আগে শহর থেকে ভাজা মিষ্টি এনেছিল, তার রাঙ্গা বৌদির জন্য। সত্যি মাকে খুব ভালোবাসে পুটু পিসি। মাও ভালোবাসে পুটু পিসিকে। কখনো ভালো-মন্দ কিছু রান্না হলেই সুমনা কে দিয়ে পাঠিয়ে দেয় পুটু পিসির বাড়ীতে। মাটির হাঁড়ি টা ভালো করে ধুয়ে,
বেশ সাজিয়ে গুছিয়ে প্রসাদ ভরে নেয় সুমনা।তারপর মাকে বলে, আমি একটু বাইরে থেকে আসছি মা।
—- আবার কোথায় যাবি? এইতো একটু আগে বাইরে থেকে এলি।
—–আমি তাড়াতাড়ি চলে আসবো মা। একদম দেরি করবো না।
—— ঠিক আছে। কিন্তু কোথায় যাবি মা?
—– সকালে রাধামাধব মন্দিরে যাবার সময়ে খ্যাপা কালী মন্দিরে অশোক কাকার সাথে দেখা হোলো। অশোক কাকা ভোগের প্রসাদ খেতে চাইলে। আমি বললাম,ফেরার পথে দেবো।
কিন্তু তখন তো ভোগের প্রসাদ না পেয়ে নদীর পারে চলে গেছিলাম। এখনতো বাদল দাদু অনেকটা প্রসাদ দিয়ে গেছে ,তাই ভাবলাম ,অশোককাকে খানিকটা দিয়ে আসি।
—-ও।
—আমি তাহলে যাই মা ?
—–বেশ, সাবধানে যেও। তাড়াতাড়ি ফিরে এসো কিন্তু।
—- হ্যাঁ মা, আমি যাব আর আসবো।
মেয়ের কথা শুনে সুনয়নী র চোখ ছল ছল করে ওঠে। ঠিক বাপের ধারা পেয়েছে মেয়েটা। নিজের ঘরে খাবার থাক বা না থাক, ভিন গাঁয়ের পরিচিত কাউকে দেখতে পেলেই তাকে ঘরে চা খাওয়াতে ডেকে নিয়ে আসতো । আর কথায় কথায় একটু বেলা হলেই ভাত খাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতো। কোথায় যে হারিয়ে গেল লোকটা? বিপদে ফেলে দিয়ে গেল সুনয়নী কে ।এখন সে একা কেমন করে মানুষ করবে মেয়েকে?
তাড়াতাড়ি ফিরব বলে মাকে কথা দিয়ে গেলেও বাড়ি ফিরতে একটু দেরি হলো সুমনার।
ভোগের প্রসাদ পেয়ে কি খুশি অশোক কাকা। সুমনাকে আর ছাড়তেই চায় না। একথা সেকথা, এ গল্প সে গল্প ,কথা যেন আর ফুরুতেই চায়না!
সুমনা বাড়ি ফিরে দেখে, মার জ্বর ছেড়ে গেছে একদম। উঠে বসে আছে মা। তাহলে কি ম্যাজিক দেখাতে শুরু করেছে পালক টা? মায়ের কাছ থেকে একটু আড়ালে সরে গিয়ে চট করে প্যান্টের পকেট থেকে বের করে ছোট্ট পালক টা একবার দেখে নেয় সুমনা। একদম ঠিক আছে ওটা ।কিন্তু ওটা তো কোথাও রাখতে হবে। এভাবে পকেটে তো রাখা যায় না ।ভেঙে যেতে পারে।
সুনয়নী মেয়েকে জিজ্ঞাসা করে ,কি করছিস রে মা?—-
————কিছু না মা ।
বাধ্য হয়ে মাকে মিথ্যে কথা বলতে হয় সুমনাকে। আর কি করবে সে?উপায় নেই তো। পাখিটা যে বলেছে, পালকের কথা কাউকে না বলতে। বলে দিলে যদি ম্যাজিকটা না হয়।
মাকে মিথ্যে কথা বলার জন্য মনে মনে ঠাকুরের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয় সুমনা।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।