ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সরীরণ সরকার (পর্ব – ৮২)
সুমনা ও জাদু পালক
পরী রানী দ্রুত তাঁর হাতের জাদু দন্ডটিকে মহারানীর কাছ থেকে সরিয়ে নিতেই মিলিয়ে গেল কালো ধোঁয়া।
রাজা রুদ্র মহিপাল বিস্মিত হয়ে বললেন, এটা কী হলো হে পরী রানী?
—— দুষ্টু জাদুকর হূডু কালো জাদুতে আচ্ছন্ন করে রেখেছে রানীর শরীর।
—– তাহলে উপায়?
—— আমি দেখছি কি করা যায়।
এরপর পরী রানী জোরে জোরে মন্ত্র উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর হাতের জাদু দন্ডটিকে মাথার উপরে চক্রাকারে ঘোরাতে শুরু করলেন।
কিছুক্ষণের মধ্যেই উজ্জ্বল সোনালী রঙের এক আলোর বলয় সৃষ্টি হল পরীরানীর মাথার উপরে। পরীরাণী তার জাদু দন্ডটিকে সেই বলয়ের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে চক্রাকারে ঘোরাতে শুরু করলেন। সেই আলোর বলয়ের চতুর্দিক থেকে বিচ্ছুরিত হতে লাগল উজ্জ্বল হলুদ বর্ণের
আলোর কণা। পরী রানী সেটা ঘোরাতে ঘোরাতে হঠাৎ ছুঁড়ে নিক্ষেপ করলেন রানী মায়াবতীর দিকে। আলোর বলয়টি ঘুরতে ঘুরতে এগিয়ে চলল রানী মায়াবতীর দিকে। আর ঠিক সেই সময়ে ঘটল এক অদ্ভুত কান্ড। রানী মায়াবতীর শরীরের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো এক উজ্জ্বল রক্তিম বর্ণ আলোর গোলক। সেই আলোর গোলক দ্রুত বেগে এগিয়ে এসে এগোতে বাধা দিল পরি রাণীর ছোঁড়া আলোর বলয় কে। দুই আলোকাস্ত্রের তীব্র সংগ্রাম শুরু হলো। ফুলঝুরির মতো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো বিভিন্ন বর্ণের আলোককণা। হঠাৎ রানী মায়াবতীর শরীর থর থর করে কাঁপতে শুরু করল। তার সমস্ত মুখমন্ডল রক্তিম বর্ণ ধারণ করল।
রাজা রুদ্রমহিপাল চিৎকার করে উঠলেন, তুমি কি অসুস্থ বোধ করছ মায়াবতী?
রানী মায়াবতী কোনমতে ঘাড় নেড়ে বোঝাবার চেষ্টা করলেন যে, তিনি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না।
পরীরানী প্রায় সঙ্গে সঙ্গে জোরে জোরে মন্ত্র উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর হাতের দন্ডের সাহায্যে ফিরিয়ে নিলেন তাঁর নিক্ষিপ্ত আলোক বলয় কে। আলোক বলয় দন্ডের ভিতর ঢুকে যেতেই রাণী মায়াবতীর শরীরের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা রক্তিম বর্ণ আলোর গোলকটি অদৃশ্য হলো। রানী মায়াবতী ও যেন একটু সুস্থ হলেন।
পরী রানী বললেন, কালো অশুভ শক্তি রানী মায়াবতীর শরীরে প্রবেশ করিয়েছে শয়তান হূডু।
রাজা বললেন, তাহলে কি মায়াবতী কোনদিন সুস্থ হবেনা, ফিরে পাবেনা স্বাভাবিক রূপ?
—— কেন হবেনা? চিরকাল জগতে শুভ শক্তির কাছে অশুভ শক্তি পরাজয় মেনেছে। এক্ষেত্রেও তাই হবে। অদৃশ্য কন্ঠ উত্তর দিল।
পরীরানী অদৃশ্য কন্ঠের সঙ্গে পরিচিত না থাকলেও মহারাজ রুদ্র মহিপাল তাকে জানতেন।
তাই তিনি বিনীত ভঙ্গিতে করজোড়ে বললেন, হে মহাশক্তি, হে অদৃশ্য কন্ঠ, আপনি আমাকে পরামর্শ দিন যে কিভাবে রানী মায়াবতীকে সুস্থ করে তুলবো।
সুমনা বলল, মহারাজ, বন্ধু অদৃশ্য কণ্ঠের ইঙ্গিত আমি বুঝতে পেরেছি মনে হচ্ছে।
—— মানে?
—– রানী মায়াবতী কে সুস্থ করতে আমাদের দেব হরিহরের সাহায্য নিতে হবে। তাঁর কৃপা ভিন্ন
জাদুকরের অশুভ শক্তিকে পরাস্ত করা খুবই কঠিন কাজ।
—– তুমি তুমি ঠিক বলেছ রত্নমালা। ছি ছি, এ কথা তো আগেই আমার মাথায় আসা উচিত ছিল। আমি তো তাঁর কৃপাতেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছি।
সুমনা বলল, মহারাজ, চলুন আমরা দ্রুত দেব হরিহরের কাছে যাই,তাঁর করুনা ভিক্ষা করি।
—— হ্যাঁ চলো।
রাজা রুদ্র মহিপাল সবাইকে নিয়ে সেই বটবৃক্ষের গুপ্ত প্রবেশ পথের দিকে এগিয়ে চললেন।
কিছুক্ষণের মধ্যেই বটবৃক্ষের প্রবেশ দ্বারের সামনে রাজা মহিপাল পৌঁছাতেই ব্যাঙ্গমা ও ব্যাঙ্গমী সমস্বরে বলে উঠলো, প্রণাম জানাই মহারাজা রুদ্র মহিপাল ও মহারানী মায়াবতী, প্রণাম জানাই হে পরীরাণী। আপনারা আমাদের প্রণাম গ্রহণ করুন।
পরীরানী বললেন, একি কুশধ্বজ , কুশেশ্বরী,তোমরা এখানে?
ব্যাঙ্গমা বলল, বহু বছর আগে থেকেই আমরা অভিশাপগ্রস্ত হয়ে এই রূপ ধারণ করে এই গুপ্ত পথ পাহারা দিচ্ছি। তবে আমরা আজ খুব আনন্দিত।
—–কেন?
—– কিছুক্ষণ আগে পুষ্প নগর রাজ্য পরিভ্রমণ কালে আমরা আকাশ পথ থেকে দেখতে পেয়েছি, এই রাজ্যে দেব হরিহরের আবির্ভাব।
আমরা আশা করি, দেব হরিহরের আশীর্বাদে খুব শিগগিরই আমরা অভিশাপ মুক্ত হব। যান মহারাজা, মহারানীকে নিয়ে দেব হরিহরের কাছে যান। দেবতার কৃপায় মহারানী অবশ্যই সুস্থ হয়ে উঠবেন। খুব শিগগিরই পুষ্পনগর রাজ্য অভিশাপ মুক্ত হবে।
—– তোমাকে অনেক ধন্যবাদ হে ব্যাঙ্গমা।
রাজা সবাইকে নিয়ে গুপ্ত পথের ভেতর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসতেই বটগাছের গুপ্ত পথ আবার জোড়া লেগে আগের মত স্বাভাবিক হয়ে গেল।
চলবে