২১ শে ফেব্রুয়ারী- আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
আজ ২১ শে ফেব্রুয়ারি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। তাই সকল ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও প্রণাম জানাই।
১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ঘোষণা করেছিল আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এই মাতৃভাষার।
ভাষা একটা আবেগ। ভাষার মাধ্যমেই আমরা সমস্ত যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারি খুব স্বচ্ছন্দে। তাই ভাষা একটা সেতু।
পৃথিবীতে বহু ভাষা আছে। সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি ভাষা আছে এই পৃথিবীতে।
আমাদের ভাষা বাংলা। সারা পৃথিবীতে বাংলা ভাষায় কথা বলে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ। এই পরিসংখ্যানের হিসাবে আমরা সারা বিশ্বে চতুর্থ । এটা নিঃসন্দেহে গর্ব করার মত।
মাতৃভাষায় কথা বলার আনন্দ সব ভাষাপ্রেমিক মানুষেরই উপলব্ধি হয়। আমাদের এই বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে তিন তিনটে ভাষা আন্দোলনের কথা আমরা জানি। সেই রক্তাক্ত আন্দোলন গুলোর মধ্যে দিয়ে আদায় করতে পারা গেছে মাতৃভাষা বাংলার স্বীকৃতি।
প্রমথ চৌধুরীর সুন্দর একটা কথা আছে,” বাংলা ভাষা আহত হয়েছে সিলেটে, নিহত হয়েছে চট্টগ্রামে”।
এই একটা উক্তির মধ্যে দিয়ে আমরা দুটো ভাষা আন্দোলনের কথা জানতে পেরে যাই।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি( ৮ ফাল্গুন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিহত হতে হয়েছিল রফিক, সালাম,বরকতদের মত অনেক ভাষা শহীদদের।
সেই ভাষা শহীদদের বীরগাঁথা আজ সর্বত্র শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ ও পালন করা হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি নিয়ে আমাদের আবেগ, আমাদের উন্মদানা,আমাদের অনেক গর্ব ও অহংকার।
কিন্তু বাংলা ভাষাকে নিয়ে আমরা আরও দুটো ভাষা আন্দোলনের কথা জানি। তা নিয়েও আমরা আমাদের আবেগ,ভালোবাসা দেখিয়ে গর্ব করতে পারি।
১৯৬১ সালের ১৯ শে মে বরাক উপত্যকার শিলচর রেল স্টেশনে পুলিশের গুলিতে নিহত হতে হয়েছিল ১১ জন ভাষা সৈনিককে। দাবী ছিল রাজ্যের দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে বাংলার স্বীকৃতি। বরাক উপত্যকার সাহিত্য শিল্পকলা নিয়েও আমরা গর্ব করতে পারি। কিন্তু করি না। কোথায় যেন একটা অনাদর,অবহেলা রয়ে গেছে।
তৃতীয় যে আন্দোলনের কথা আমরা জানি বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে তাহল মানভূম ভাষা আন্দোলন। ১৯৫৬ সালে তৎকালীন বিহারে বসবাসকারী বাঙালিরা এই আন্দোলন করেছিলেন। অনেক প্রতিবাদ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে পরবর্তী সময়ে মানভূমকে পৃথক ভাবে পশ্চিমবঙ্গের সাথে জুড়ে দিয়ে একটা স্বতন্ত্র জেলা হিসেবে পুরুলিয়া গঠন করা হয়।
সুতরাং বাংলা ভাষা নিয়ে আমাদের এই আন্দোলন,লড়াইয়ের কথা যখন আলোচনা করি, তখন এটা মনে মনে শপথ নেওয়া দরকার আমরা যেন আমাদের মাতৃভাষাকে সম্মান করি, আদর করে ভালোবাসতে পারি।
আজ কিন্তু খুব বেদনার আমরা তা করি না। নিজের ভাষাকে নিজেরাই অনাদর করে কেমন রুগ্ন করে তুলছি। ভালো করে গুছিয়ে একটু বাংলা বলতে পারে এমন লোকের সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছে। ভাষা সন্ত্রাসের শিকার আমরা। অহেতুক একটা পাঁচমিশালি জগাখিচুরি ভাষায় কথা বলা রপ্ত করছে বহু মানুষ।
এই বেদনার কথা, এই কষ্টের কথা বলতে একটু কষ্টই হচ্ছে। আমাদের নতুন প্রজন্মের সন্তানরা বাংলা ভাষা সেভাবে চর্চা করছে না।
ভাষা চর্চার অভাবে দুর্বল হবে। ধারা শুকিয়ে যাবে। অথচ আমাদের সাহিত্যে, সংগীতে বাংলা ভাষার কি সুন্দর সুন্দর সব সৃষ্টি।
আজ তাই আমাদের সকলকে নতুন করে ভাবতেই হবে,নিজের মাতৃভাষা বাংলাকে অনাদর না করে আরও বেশি বেশি করে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। তবেই ভাষা বাঁচবে। আর ভাষা বাঁচলে আমাদের অস্তিত্বও বাঁচবে।!..
এই ২১ শে এটাই আমাদের সকলের শপথ হোক।
খুব সুন্দর সংক্ষেপে বিশলেষণ । আজ আমাদের মধ্যে সেই বাংলা ভাষা খুঁজে পাওয়া চেষ্টা করছি। কিন্তু মিডিয়া বাংলা তে হিন্দি মিশিয়ে chiken butter masala বানিয়ে দেবার চেষ্টা করছে। কিছু বলার নেই।
পশ্চিমবঙ্গে চাকুরিরত অবাংলাভাষী আইএএস আইপিএস অফিসারদের বাংলা ভাষায় কথা বলার প্রচেষ্টাকে সম্মান জানাই। পাশাপাশি “ইংলিস মিডিয়ামে” পড়া বাঙালি কন্যার মায়ের অহংকারী মন্তব্য “আমার মেয়ের বাংলাটা ঠিক আসে না” কে ধিক্কার জানাই।
প্রবাসী বাঙালি এক মাকে দেখেছি বাড়িতে নানা ধরনের বাংলা বই এনে এমবিবিএস পাঠরতা মেয়েকে বাংলা শিখিয়ে পড়তে সাহায্য করতে। প্রনাম জানাই সেই মাকে।