ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব – ৬২)

সুমনা ও জাদু পালক

সুমনার চিৎকার শুনে রাজকুমারী চন্দ্রকান্তা অবাক হয়ে বলল, কি হলো রত্নমালা, তুমি হঠাৎ ওভাবে চিৎকার করে উঠলে কেন?- কি হয়েছে?
রাজা রুদ্র জ্ঞ মহিপাল বিস্মিত হয়ে সুমনার দিকে তাকিয়ে বললেন, কি হয়েছে মা রত্নমালা?
সুমনা হাতজোড় করে বলল, ভালো করে দেখুন মহারাজ, আপনার চোখের জল ফোঁটা ফোঁটা করে যেখানে মৃত্তিকা স্পর্শ করেছে, সেখান থেকে ধোঁয়া বেরিয়ে আসছে। এর কারণ কী মহারাজ?
রুদ্র মহিপাল তাকিয়ে দেখলেন, রত্নমালা সঠিক কথাই বলেছে। সত্যিই তার চোখের জল ফোঁটা ফোঁটা হয়ে যেখানে ঝরে পড়েছে বাগানের মাটিতে, সেই স্থান থেকে সত্যি কুণ্ডলী পাকিয়ে ধোঁয়া উঠছে। তিনি খুব বিস্মিত হলেন। এর কারণ বুঝতে পারলেন না। বিষয়টি লক্ষ্য করে চন্দ্রকান্তা শুধু বিস্মিত নয়,ভীত হোলো। এটা কি জাদুকর হূডুর নতুন কোন জাদু?
ধোঁয়া ক্রমশ বাড়তে লাগলো। আর একটু পরেই
বেশ অনেকটা জায়গা জুড়ে মাটি কাঁপতে শুরু করল। সুমনা এবার ভীত হয়ে মনে মনে অদৃশ্য কন্ঠের উদ্দেশ্যে বলল, হে বন্ধু অদৃশ্য কণ্ঠ, তুমি যদি আমার কাছাকাছি থাকো, তাহলে আমাকে সাহায্য করো। পুষ্পনগর রাজ্যের রাজা রুদ্র মহিপাল বুঝতে পারছেন না যে কেন তার চোখের জল মৃত্তিকা স্পর্শ করার পর সেই জায়গা থেকে ধোঁয়া উঠছে আর কেনইবা কেঁপে উঠছে মৃত্তিকা অভ্যন্তর! এটা কি জাদুকর হূডুর কোন জাদু?
অদৃশ্য কন্ঠ জোরে জোরে বললো, ভয়ের কোন কারণ নেই রত্নমালা। একটু পরেই এক অদ্ভুত ঘটনার সম্মুখীন হবে তোমরা।
—– অদ্ভুত ঘটনা!
—— হ্যাঁ, হরিহরের মিলন হবে।
—– মানে ?
চন্দ্রকান্তা বলল, হে অদৃশ্য কন্ঠ, আপনি যা বলতে চান, দয়া করে পরিষ্কার করে বলুন। এমনিতেই যে সমস্ত অস্বাভাবিক কান্ড এখানে ঘটছে, তা দেখে আমরা খুব ভীত হয়ে পড়েছি।
—— আমি বলছি ,তোমাদের ভীত হওয়ার কোন কারণ নেই। মনে মনে দেবাদিদেব মহাদেব কে স্মরণ করো।
——মানে?
সুমনা বলে, হে অদৃশ্য কন্ঠ,ধূম নির্গমনের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে, বাড়ছে মৃত্তিকার কম্পন।
——- এক্ষুনি সব থেমে যাবে।
——-কীভাবে?

অদৃশ্য কন্ঠ বলে, রাজকুমারী রত্নমালা, এক্ষুনি একটা কাজ কর তোমরা।
—— কী?
——– তোমার দক্ষিণ বাহু তে দেখো একটি রুদ্রাক্ষ আছে।
——- রুদ্রাক্ষ! আমার বাহুতে তো কিছু নেই।
—— আছে,আমি বলছি।
—— কিন্তু আমার বাহুতে আছে অথচ আমি জানিনা,এটা কী করে সম্ভব?
——– কনকনগর রাজ্যে বাবা ভোলানাথের মন্দিরের কথা মনে আছে তোমার?
——- হ্যাঁ, ওখান থেকেই তো চারটি ত্রিফলক বিল্বপত্র আর হরিতকির মালা সংগ্রহ করেছিলাম।
——- হ্যাঁ, সেই সময় বাবা মহেশ্বর এর আশীর্বাদে তোমার সুরক্ষার জন্য ওই রুদ্রাক্ষ তোমার বাহুতে আশ্রয় করে। যা এতদিন অদৃশ্য ছিল।
কিন্তু ভালো করে দেখো, এখন তুমি ওটা তোমার বাহুতে দেখতে পাবে। হরিৎ বর্ণের সুতো দিয়ে বাঁধা। তুমি সুতোসহ ওই রুদ্রাক্ষটি খুলে নিয়ে , যেখান থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে ,তার সামনে মাটিতে রাখ। তারপর তুমি এবং রাজকুমারী চন্দ্রকান্তা দুজনেই’ওম নমঃ শিবায়’ মন্ত্রটি জোরে জোরে উচ্চারণ করতে থাকো। একসাথে।
চন্দ্রকান্তা বলল, আমিও করবো? কিন্তুচ্ছ আমি তো…..
——- দেখই না কী অদ্ভুত ঘটনা ঘটে।

সুমনা অবাক হয়ে দেখলো সত্যি সত্যি তার ডান বাহুর উপরের অংশে হরিৎ বর্ণের সুতো দিয়ে একটি রুদ্রাক্ষ বাঁধা আছে। ও তাড়াতাড়ি ওটা খুলে যেখান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল, তার সামনে নামিয়ে রাখে। তারপর ওর সামনে বসে সুমনা ও চন্দ্রকান্তা ওম নমঃ শিবায় নাম জপ করতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ জপ করার পরেই
এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটলো। রুদ্রাক্ষ থেকে আলোক ছটা বেরিয়ে ,যে জায়গা থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল সেখানে গিয়ে ধোঁয়ার সঙ্গে মিশে এক উজ্জ্বল আলোক বলয় সৃষ্টি করল। আর তারপরেই মাটির কম্পন থেমে গিয়ে, ধীরে ধীরে মাটির তল থেকে কি যেন উপরে উঠে আসতে লাগলো।
অদৃশ্য কন্ঠ বলল, দুই রাজকুমারীকেই বলছি, আরো জোরে বাবা ভোলানাথের নাম জপ করো তোমরা।
রাজকুমারী রত্নমালা ও রাজকুমারী চন্দ্রকান্তা তাই করতে লাগল। মাটির তল থেকে ধীরে ধীরে উপরে উঠে গেল একটা বেশ বড় আকারের স্বর্ণ-নির্মিত তুলসী পাতা। উপরের মাটির আবরণ সরে গিয়ে স্বর্ণ নির্মিত তুলসী পাতা থেকেও উজ্জ্বল আলোক ছটার বিকিরণ‌ হতে শুরু হলো।
রুদ্রাক্ষ থেকে বিচ্ছুরিত আলোক ছটা ও স্বর্ণ নির্মিত তুলসীপত্র থেকে নির্গত আলোকছটা মিশে পুরো এলাকাটা উজ্জ্বল আলোয় ভরে উঠলো । রুদ্রাক্ষ ও তুলসীপত্র মিলিত হলো একসাথে।
অদৃশ্য কন্ঠ বললো, মিলন হল হরি ও হরের। রাজা রুদ্র মহিপাল হঠাৎ আনন্দ উদ্বেলিত কন্ঠে প্রায় চিৎকার করে উঠলো, জয় হরিহরের জয়।
আর তারপরেই মনে হলো যেন কোন অস্বাভাবিক প্রাপ্তির আনন্দে মাটিতে গড়াগড়ি খেতে শুরু করলেন।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।