ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব – ৯০)

সুমনা ও জাদু পালক

রাজা রুদ্রমহিপাল এবং সুমনাকে এগিয়ে আসতে দেখে জাদুকর হূডু প্রথমে বিস্মিত হল। ওদের আসার উদ্দেশ্য অনেক চিন্তা করেও হূডু অনুমান করতে পারল না। তাই সে বীভৎস গলায় চিৎকার করে বলে উঠলো, সাবধান রত্নমালা! আমার কাছে কেন আসছিস তুই? কী উদ্দেশ্য তোর ? কোনরকম চালাকি করার চেষ্টা করলে আগেরবারের মতো তোকে একেবারে খতম না করে এক শিলাখণ্ডে পরিণত করে দেব। এখানেই পড়ে থাকবি তুই। আর কোনদিন ফিরে আসার সম্ভাবনাও থাকবে না।
আর রাজা রুদ্রমহিপাল, তুমি দৈব শক্তির সাহায্যে নিয়ে কোন রকমে পুরনো চেহারা ফিরে পেয়েছ বলে কী নিজেকে সর্বশক্তিমান ভাবছো? তুমি কী ভাবছো ওই সামান্য মাটির পুতুল তোমাকে বাঁচাতে পারবে নাকি ভাবছো যে, পরীরাণী তোমাকে মায়া দন্ড দিয়ে সাহায্য করবে?
রুদ্র মহিপাল বললেন, কখনোই আমি নিজেকে সর্বশক্তিমান ভাবি না। অত দুর্বুদ্ধি আমার হয়নি যে আমি নিজেকে ঈশ্বরের সমকক্ষ ভাববো। ঐরকম হীন চিন্তা তো তুমি করো। তুমি তো নিজেকে সর্বশক্তিমান ভাবো। তুমি যাকে মাটির পুতুল বলছ, তিনি দেবাদিদেব আশুতোষ ও শ্রী বিষ্ণুর মিলিত রূপ ,দেব হরিহর। তিনি নিখিল বিশ্বের নিয়ন্ত্রক। তুমি কি বিশ্বের বাইরে?

জাদুঘর হূডু মুখ বিকৃত করে বলল, ওসব শিব বা নারায়ণকে আমি মানিনা। আমি একমাত্র মানি অন্ধকারের দেবতাকে আর আমার গুরুকে। তাদের কৃপা থাকলে আমাকে কেউ হারাতে পারবে না।

সুমনা বলল, মিছে দর্প কোরোনা জাদুকর। একটা কথা জেনে রেখো, অন্ধকার পরাজিত হয় আলোর কাছে। তেমনি অন্ধকারের দেবতা ও পরাজিত হন আলোর দেবতার কাছে। নিখিল বিশ্বে কখনোই সত্য মিথ্যার কাছে হারতে পারে না, শুভ শক্তিকে কখনোই অশুভ শক্তি পরাজিত করতে পারেনা। আমার সঙ্গে এর আগে তুমি কি করেছ, আমার মনে নেই জাদুকর। তবে এখন আমার সঙ্গে আছে মহাযোগী মহেশ্বর এর আশীর্বাদ। তাকে হারাবার সাধ্য কি তোমার?

কথা বলতে বলতে রাজা রুদ্রমহিপাল এবং সুমনা জাদুকরের অনেকটাই কাছে চলে এসেছে। এতক্ষণে হূডু খেয়াল করল যে, সুমনা তার ডান হাত পেছনদিকে করে রেখেছে।
হূডু চিৎকার করে বলে উঠলো, তুই একটা হাত পিছনে করে রেখেছিস কেন রত্নমালা? ওই হাতে তোর কী অস্ত্র আছে,? মনে রাখিস পৃথিবীর যেকোনো অস্ত্র আমার এই জাদু দন্ডের কাছে মুহূর্তে পরাজিত হবে।

সুমনা অত্যন্ত স্বাভাবিক কন্ঠে মোলায়েম করে বলল, তুমি মিথ্যে ভয় পাচ্ছ হূডু। আমার কাছে কোন অস্ত্র লুকনো নেই।
—— তাহলে হাতটা পিছনে করে রেখেছিস কেন?
——- ওই হাতে এমন একটা জিনিস আছে ,যা যে কোন অস্ত্রের থেকেও ভয়ঙ্কর।
——- কী সেই জিনিস? এক্ষুনি দেখা আমাকে।
——- দেখাবো বলেই তো তোমার কাছে এসেছি।
কথা শেষ করে মুহূর্তের মধ্যে সুমনা ওর ডান হাতটা সামনে নিয়ে এলো। হাতের মুঠিতে ধরা ছোট্ট সবুজ পাখির পালকটা মুহূর্তের মধ্যে বিশাল আকার ধারণ করল।

হূডু চিৎকার করে উঠলো, এক্ষুনি ওটা আমার সামনে থেকে সরিয়ে নে রত্নমালা।
রাজা রুদ্র মহিপাল হাঃ হাঃ করে হেসে উঠলেন।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।