সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব – ১)

দেবমাল্য

পর পর দু-তিনটি গুলির আওয়াজ। তার পরেই শোরগোল। রাতের খাওয়াদাওয়া সেরে বিছানায় শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছিল দেবমাল্য। ভ্রু কুঁচকে গেল তার। গুলির শব্দ সে খুব ভাল করেই চেনে।
তার বাড়ি হাওড়ার গোলাবাড়ি থানার কালীবাবুর বাজারের কাছে। কত বছর আগে তার ঠাকুর্দা ওই বাড়ি বানিয়েছিল ও জানে না। ওই রকম জায়গায় কেউ বাড়ি বানায়! চারদিকেই সার সার কলকারখানা আর বড় বড় ফ্যাক্টরি। আজ এটায় তালা ঝুলছে তো কাল সেটায় গেট মিটিং। রোজই কিছু না কিছু নিয়ে ঝামেলা লেগেই আছে।
তার ওপরে আছে স্থানীয় এবং আশপাশে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা গুন্ডাদের দাদাগিরি। সেটা ওরা মূলত দেখায় ছোটখাটো ব্যবসায়ী, কলকারখানার মালিকদের ওপরেই। আজ একে ফোনে ধমকাচ্ছে তো কাল তাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তাতেও কাজ না হলে কারখানা বা শোরুমে ঢুকে দাবি করছে পাঁচ লাখ, সাত লাখ, দশ লাখ। না দিলেই কপালে রিভলভার ঠেঁকিয়ে— ঢাই।
শুনে শুনে এই শব্দটার সঙ্গে এত পরিচিত হয়ে গেছে যে, আধ মাইল দূর থেকে ভেসে এলেও ও ঠিক বুঝতে পারে শব্দটা কীসের।
শোরগোলটা আরও বেড়েছে। এটা কালীবাবুর বাজারের কাছে হলে হয়তো এত কিছু হতো না। কেউ সে ভাবে মাথাও ঘামাত না। কারণ, গত আট-দশ বছরে সবার এ সব গা-সওয়া হয়ে গেছে।
কিন্তু এটা তো কালীবাবুর বাজার নয়। দৌলতাবাদ। বহরমপুর কোর্ট স্টেশন থেকে দশ কিলোমিটার দূরে। চারদিকে যথেষ্ট জমজমাট হলেও, যে হোটেলে ও উঠেছে, সেটা ভারি অদ্ভুতভাবে তৈরি। যিনি বানিয়েছেন তিনি নিশ্চয়ই খুব শৌখিন ছিলেন। তাই হোটেলের ডায়ে-বাঁয়ে এবং সামনে এতটা করে জায়গা ছেড়েছেন। আর পেছনে তো বিশাল বাগান। দেবমাল্য দোতলার যে ঘরটায় উঠেছে, সেই ঘরের জানালা খুললেই চোখে পড়ে হোটেলের পেছন দিকটা। একেবারে রাস্তার আগ পর্যন্ত এক-দেড় মানুষ সমান পাঁচিল দিয়ে ঘেরা এই হোটেলের সীমানা পর্যন্ত ঢালু হয়ে নেমে যাওয়া সবুজ কার্পেটের মতো লন। সেই লনে মাঝেমধ্যে আকাশের দিকে হাত তুলে দাঁড়িয়ে আছে এক-আধটা গাছ। পাঁচিলের ওপারে যে সরু রাস্তাটা সাপের মতো এঁকেবেঁকে বহু দূর গিয়ে মিলিয়ে গেছে, সেটা খুবই শুনশান। লোকজন চলাচল করে না বললেই চলে। মাঝেসাঝে একটা-দুটো সাইকেল দেখা যায় শুধু। রাস্তার ওপাশে বিশাল বড় একটা জলাশয়। তাতে কচুরিপানা ভরা। এরকম একটা পুকুর যদি তাদের বাড়ির আশপাশে থাকত!

ক্রমশ..

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।