ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব – ৭৩)

সুমনা ও জাদু পালক 

সুমনা রাজা রুদ্রমহিপালের উদ্দেশ্য বলল, হে রাজন, দরজাটা আপাতত মন্ত্রের সাহায্যে বন্ধ না করে আলতো করে ভেজিয়ে দিন ।তারপর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই বেদীর কাছে গিয়ে পাত্রের শীতল জলের সাহায্যে রাজকুমারী চন্দ্রকান্তার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করুন । আমি ততক্ষণে প্রাসাদের ভিতরটা ভালো করে দেখে আসি। তবে হ্যাঁ, আপনি যদি মহারাজ আমাকে প্রাসাদের ভিতর সম্পর্কে একটা ধারণা দেন তাহলে আমার কাজ করতে সুবিধা হবে।
রাজা রুদ্র মহিপাল সুমনাকে দেখতে পাচ্ছিলেন না‌। খুবই বিস্মিত হচ্ছিলেন তিনি। তবে যতক্ষণ ধরে এই মেয়েটিকে তিনি দেখেছেন এবং তার কথাবার্তা শুনেছেন, মেয়েটিকে যথেষ্ট বুদ্ধিমতী এবং বিচক্ষণ বলে মনে হয়েছে তাঁর। যাই হোক, আপাতত তাঁর কর্তব্য ,যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অচৈতন্য রাজকুমারী চন্দ্রকান্তার জ্ঞান ফেরানোর ব্যবস্থা করা।
তাই তিনি বললেন, রাজকুমারী রত্নমালা, রন্ধনশালা পার হলেই দেখতে পাবে একটা বিশাল লম্বা ও বেশ প্রশস্ত বারান্দা। বারান্দার দুধারে ছোট বড় অনেকগুলো ঘর আছে। ওগুলোতে এই রাজবাড়ীর দাস দাসী ও অন্যান্য কর্মচারীরা থাকে। তুমি বারান্দা পেরিয়ে সোজা বারান্দার শেষ মাথায় যাবে। ওখানে একটা বিরাট বড় ঘর দেখতে পাবে। সে ঘরের দুপাশে সারিবদ্ধ ভাবে মখমলে মোড়া সুদৃশ্য রৌপ্য নির্মিত অনেকগুলো আসন দেখতে পাবে। ওইটে রাজসভা। ওই রৌপ্য নির্মিত আসন গুলিতে রাজসভার সভাসদরা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বসেন। ওই ঘরের এক প্রান্তে দেখতে পাবে , একটা প্রশস্ত বেদীর উপর দুটো দামি রত্ন খচিত স্বর্ণ সিংহাসন আছে।
—– ওই দুটো সিংহাসনে বুঝি আপনি আর মহারানী বসেন?
—— বাহ! একদম ঠিক বলেছ তুমি। রাজসভা চলাকালীন আমি আর এই রাজ্যের মহারানী ঐ সিংহাসনদ্বয়ে আসীন হই। ওই সিংহাসনের ঠিক পিছনে দেখতে পাবে রক্তবর্ণ সাতপুরু পর্দা ঝুলছে। সেই পর্দা সরালেই দেখবে প্রশস্ত সিঁড়ি উঠে গেছে দোতলার দিকে। দোতলায় উঠলেই আবার পাবে প্রশস্ত বারান্দা, ঠিক নিচের মত। ওই বারান্দার দুপাশে সারিবদ্ধ ঘর। ওই ঘর গুলিতে রাজ পরিবারের লোকজনেরা থাকেন। বারান্দার শেষ মাথায় একটা বিশাল বড় ঘর দেখতে পাবে। ওই ঘরে আগে আমি আমার রানী মায়াবতীকে নিয়ে থাকতাম। পাশের ঘরেই থাকতো আমাদের একমাত্র পুত্র। কিন্তু এখন আমার পুত্র তো নেই। তাকে দুষ্টু জাদুকর হূডু কোথায় বন্দী করে রেখেছে আমি জানিনা। আমাদের ঘরটা দখল করেছে জাদুকর হূডু।
—– আপনি আর মহারানী এখন তাহলে কোথায় থাকেন?
,——- নিচের তলায়, দাস-দাসীদের ঘরের পাশে।
আসলে এখন প্রাসাদে তো আমি আর রানী মায়াবতী ছাড়া বাকি সবাই পুতুল। ওরা জাদুকর হূডুর মন্ত্র বলে পুতুলে পরিণত হয়েছে। ওরা হূডুর ইচ্ছের দাস। হূডু যেমনভাবে ওদের চালায়, ওরা সেভাবেই চলে। আমি জানিনা হূডু
এখন কোথায় আছে। ওকি এই প্রাসাদে আছে নাকি ওর উট পাখির পিঠে চেপে বেরিয়ে গেছে শত্রুপক্ষের খোঁজে? তবে হ্যাঁ, বারবার বলছি, তুমি খুব সাবধান। অসম্ভব দুষ্টু লোক ওই জাদুকর হূডু। ও না পারে এমন কোন কাজ নেই।
—– আপনি মোটেই ভয় পাবেন না মহারাজ। আমি তো এখন অদৃশ্য অবস্থায় আছি। আপনি আমাকে পুরো রাজপ্রাসাদের যেভাবে বর্ণনা দিলেন, তাতে আমার পক্ষে খুব সহজে দোতলায় উঠে হূডুর ঘরে ঢুকে খোঁজখবর করতে সুবিধা হবে।
—— বেশ ,তুমি যাও। তুমি কোন চিন্তা করো না। রাজকুমারী চন্দ্রকান্তা কে জ্ঞান ফেরাবার দায়িত্ব আমার।
রুদ্রমহিপাল সুমনার দিক থেকে কোন উত্তর না পাওয়ায় বুঝতে পারলেন যে, অদৃশ্য সুমনা এগিয়ে গেছে দোতলায় হূডুর ঘরের দিকে।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।