নদী জনপদ নানা প্রদেশ পেরিয়ে ছুটলো হিমগিরি এক্সপ্রেস। দুই রাত, এক দিন আর আরেক দিনের একবেলা পেরিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে যখন জম্মু ঢুকলো, তখন বেলা তিনটে। আজ আমাদের রাত্রিবাস কাটরাতে।ফেরার সময় ও আমরা কাটরা হয়ে ফিরবো, তখন মাতা বৈষ্ণোদেবীর দর্শন করতে যাওয়া হবে। আমি অবশ্য আগে গেছি, কিন্তু আমাদের দলের অনেকেই প্রথম দর্শন করবে।
জম্মু স্টেশনের পাশেই আমাদের জন্য বাস দাঁড়িয়ে ছিলো। এক দশাসই শিখ, নাম শুনলাম কর্তার সিংহ, আমাদের সারথি। তাঁর সাথেই পুরো কাশ্মীর ঘুরবো,আমাদের আবার জম্মু পৌঁছে তাঁর ছুটি। সুনিপুণ হাতে ড্রাইভ করে ঘন্টা দুইয়ের মধ্যে আমাদের কাটরা পৌঁছে দিলেন তিনি। হোটেলে ঢুকে স্নান সেরে বসতে বসতে বেলা প্রায় ছয়টা বাজলো। তবে বাইরে তখনো বেশ রোদ।
আমার ঘরে আমরা তিনজন। আমি, দেবনাথ দা বলে এক সরকারি চাকুরে, আর এক পুরোহিত মশাই। তিনজন একা বেড়াতে গেছি, তাই কতৃপক্ষ আমাদের একসাথে রেখেছেন। এত ভালো সময় কাটিয়ে ছিলাম ওনাদের সাথে সেই বার, এখনো বার বার মনে পড়ে। তবে সেই গল্পগুলো বিস্তারিত ভাবে পরে বলবো। আপাতত সেইদিন, তিনজন বেরোলাম একটু ধারে কাছে ঘুরে আসতে। এদিকে সেদিকে ঘুরে, ঘন চা আর মেথি পকৌড়া খেয়ে, টুকটাক জিনিস কিনে রাত আটটা নাগাদ হোটেলে ফিরলাম। রাত বললাম বটে কিন্তু ওখানে তখন সবে সন্ধ্যা নামছে। দেবনাথ দা আর পুরোহিত মশাই ঘরে গেলেন, আমি বাইরেই দাঁড়ালাম। উদ্দেশ্য একটু বুদ্ধির গোড়ায় ধোঁয়া দেওয়া।
হোটেলের গেট থেকে একটু সরে সবে একটা সিগারেট জ্বালিয়েছি, পিঠে একটি হাত পড়লো। চমকে ঘুরে দেখি আমাদের দলের মিত্র জেঠু, যিনি আর তাঁর স্ত্রী আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন পুরো ট্রীপ ওনাদের নিয়ে ঘুরতে। ওনাকে দেখে সাত তাড়াতাড়ি সিগারেট ফেলতে যাবো, জেঠু বারণ করলেন। আমাকে ফিসফিস করে বললেন, তুই খা,আপত্তি নেই, কিন্তু আমাকেও ডাকিস। তোর জেঠির জ্বালায় সাথে সিগারেট রাখতে পারি না। তোকে টাকা দিচ্ছি, নিজের কাছে কিনে রাখ, নিজেও খাবি আর সময়মতো আমাকে সাপ্লাই ও দিবি। সেই শুরু… তারপর গোটা সফর আমরা একসাথে স্মোক করেছিলাম, জেঠি টের পেলেও বিশেষ কিছু বলেন নি, খালি আমি যাতে সাপ্লাই কম দি সেই ব্যাপারে একটু সাবধান করে দিয়েছিলেন। আমি তাঁর কথাও অক্ষরে অক্ষরে মেনে নিয়েছিলাম।