সাপ্তাহিক ধারাবাহিক ভ্রমণ সিরিজে শতদ্রু ঋক সেন (পর্ব – ১২৫)
ফেরা
কাওয়া বা কাশ্মীরী চা এর নাম আগে শুনলেও কখনো খাইনি। সেই প্রথম খেয়ে ছিলাম ঐ ছোট্ট রেস্তোরাঁতে। তারপর বহুবার খেয়েছি নানা জায়গায়, সেইবার ফেরার সময় নিয়েও এসেছিলাম কিন্তু সেই প্রথম কাওয়া খাওয়ার অভিজ্ঞতা ছিলো আলাদাই। ওতো ভালো আর অতো রিফ্রেশিং কাওয়া এর আগে বা পরে কখনো কোনোদিনও খাইনি। অবশ্য ভবিষ্যতে কি হবে জানা নেই।
চা শেষ করে আবার ছোটে আমাদের গাড়ি প্যানগংয়ের উদ্দেশ্যে।নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে একসময় এসে থেমে যাই। তিনজনে এক ছুটে নেমে আসি গাড়ি থেকে। কি দেখি??
আকাশের ঘন নীল নেমে এসেছে মাটিতে যেন। যতদূর চোখ যায় জল শুধু জল। আকাশ ও জলে রঙের খেলা। ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলাচ্ছে। চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকি, কতক্ষণ, কতো সময় জানি না। প্রনাম জানাই প্রকৃতি মায়ের উদ্দেশ্যে। এতো রুপ দিয়ে তিনি সাজিয়েছেন নিজেকে।
আমি যদি কবি হতাম, তাহলে নিশ্চিত গোটা দশেক কবিতা সেইদিন বেরিয়ে আসতো।
তিনজনে তিনদিকে ছিটকে যাই। নিজের মতো, একা একা সবাই উপভোগ করি সেই অপার সৌন্দর্য। জন্ম সার্থক মনে হয়ে।
চলিয়ে জি। সাম হো গিয়া। কাল সুভে ফির আনা।
কর্মার ডাকে হুঁশ ফেরে। আবার গাড়িতে উঠি। একটু চড়াই বেয়ে উঠে গাড়ি থামে। সামনে সার সার তাঁবু খাটিয়ে রাখা। একটা তিন বেডের বড়ো তাঁবুতে গিয়ে ঢুকি। আজ রাতের বাসস্থান। বেশ সুন্দর সাজানো গোছানো। টয়লেট ও হাল ফ্যাশনের। জামা কাপড় ছাড়ি। খুব একটা ঠান্ডা নেই। তবে মাঝে মাঝে লেকের দিক থেকে ছুটে আসা হাওয়া হাড় কাঁপিয়ে দিচ্ছে।
বাইরে আগুন জ্বলে। তিনজনে বসি। মানালির পরে আর মদ খাওয়া হয় নি। এখন বোতল বের করে এক একটি পেগ নি সবাই। ঐরকম আবহাওয়ায় জমে যায়।
পাশের কোনো এক তাঁবুতে গানের আসর বসে। ঘন নীল আকাশের চাঁদোয়ার নীচে, আগুনের ধার, নীচে বয়ে চলা প্যানগং, হাতের গ্লাসে হালকা চুমুক, আর দূর থেকে ভেসে আসা মেঠো গানের সুর….
স্বর্গের সভা কি এতোটাই সুন্দর????