ভ্রমণ সিরিজে শতদ্রু ঋক সেন – ২

দুই পা ফেলিয়া

তুমি না এলে ফিরে… না বলে বিদায় দিলে, বিরোহিনী শোকাকুলা, কাটেনা বিরহ বেলা… অনীক দত্তের বিখ্যাত ছবি ভূতের ভবিষ্যৎ এর সেই আইকনিক দৃশ্য আর গান, কদলীবালার ভূমিকায় স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের লিপে।ঐ ভূতের বাড়ির অধিকাংশ শুটিং হয়েছিল, শ্রীরামপুরের এক জমিদার বাড়ি, গোস্বামী বাড়িতে। আজ সেই বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া নিয়ে আমার এই প্রতিবেদন।
প্রথম বার যাওয়া ২০১১ সালে। স্কুলের দুই বন্ধু অর্ণব ও অনিরুদ্ধর ব্যবস্থাপনায়, মফস্বলের বনেদি বাড়ির পূজা পরিক্রমায় অংশ নিয়ে পৌঁছে গেছিলাম সেই বাড়িতে। ছিমছাম পূজা আর চোখ ধাঁধানো ঠাকুর দালান কে কথা দিয়ে এসেছিলাম আবার ফিরে আসবো বলে। সেই কথা রেখেছি, তবে আংশিক, কারণ পুজোর আগেই পৌঁছে গেছিলাম সেখানে, কাঠামোর গায়ে তখন শুধুমাত্র মাটির প্রলেপ।

ফেসবুক কমিউনিটি মাছ মিষ্টি এন্ড মোর এর মডারেটর আমি। প্ল্যান করা হয়েছিল, পুজোয় ঐ বাড়িতে আমরা বেড়াতে যাবো। সেই ব্যাপারেই রেকি করতে, এক শারদ সকালে বাইক নিয়ে গন্তব্য শ্রীরামপুর। সাথী, আমার অগ্রজ প্রতিম বন্ধু সঞ্জীব ওরফে সঞ্জু দা।
সেদিন আকাশে ছিল মেঘ বৃষ্টির লুকোচুরি। ঝকঝকে রাস্তায়, ঠান্ডা হাওয়ায় প্রাণ জুড়িয়ে বেলা একটা নাগাদ শ্রীরামপুর শহরে ঢুকি। ঐ শহরের ছেলে, আমার থিয়েটার দলের সহকর্মী পরিচয় ওরফে ট্রফি অপেক্ষা করছিল আমাদের জন্য। বাইকে উঠে রাস্তা দেখিয়ে নিয়ে যায় রাজবাড়িতে। এই কয়েক বছরে আরো দীর্ণ হয়েছে যেন। গেটের সামনে একা বৃদ্ধ প্রহরী, আমাদের ঢুকতে দিচ্ছিলেন না, ট্রফি লোকাল বলে শেষ অবধি ঢোকা গেল। সেই সুপ্রাচীন নাটমন্দির। কেউ কোথাও নেই, কয়েকটি পায়রা খালি বকবকম করে চড়ে বেড়াচ্ছে। কাঠামোর গায়ে মাটির প্রলেপ, একটু আধটু রং লেগে তাতে। মায়ের প্রাণপ্রতিষ্ঠা হতে আর কদিন বাকি। কিছু সময় দাঁড়াই, ছবি তুলি। কত শত আমোদ প্রমোদের স্বাক্ষী আজ নিঃশ্ব,রিক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে। চুপচাপ দাঁড়িয়ে সারা শরীরে মিশিয়ে নিই সেই অপার স্তব্ধতা। প্রহরীর চীৎকারে চটকা ভাঙে। অনেক ক্ষন দাঁড়িয়ে আপনারা, এবার আসুন। সঞ্জু দা গল্প জুড়ে দেয় তাঁর সাথে। একাই এই খন্ডহর পাহারা দেন, আর এক পুরোহিত এসে নিত্য পূজা সারেন। পুজোর সময় শরিকদের সবাই আসে, গমগম করে চারদিক, তারপর আবার যে কে সেই। পুজোয় আসার অনুমতি চাই, পেয়েও যাই। জানতে পারি, এটি পূজার ৪১৫ তম বর্ষ। এই নাটমন্দির তৈরী হয় আনুমানিক ১৮০০ সালে। একটি কাঠামোই বরাবর পূজিত হচ্ছে। রথযাত্রার দিন ঠাকুর গড়া শুরু হয়। গোটা শ্রীরামপুর জুড়ে এই পূজা বুড়ি দূর্গা নামে খ্যাত। অনেক দূর দূর থেকেও এসে লোক ভিড় করে এই পূজায়।

অনেক পরিকল্পনা করেও অনিবার্য কিছু কারণে, আমাদের এই বছরের পুজো ভ্রমণ বাতিল হয়ে যায়। তবে আশা রাখি সামনের বছর এই পরিকল্পনা আমাদের সফল হবে।
আমার অনেক বন্ধু কে সেদিনের কিছু ছবি পাঠিয়ে ছিলাম। তার মধ্যে একজন অভিযোগ করলো, যে কেন তাকে ভিডিও কল করে আমি রাজবাড়ি দেখাইনি।তার সনির্বন্ধ অনুরোধে হয়তো শীতকালেই আবার যাবো, ইচ্ছা আছে সেদিন সুপ্রাচীন ডেনমার্ক ট্যাভার্নেও একটু পেট পুজো করার, এই যাত্রায় সেটা বাকি থেকে গেলো যে।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।