ধারাবাহিক ভ্রমণ সিরিজে শতদ্রু ঋক সেন – ৮০

 

বেশ খানিকক্ষণ মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। মন্দিরের ঘন্টার গুরুগম্ভীর আওয়াজে চমক ভাঙলো। ধীরে ধীরে মন্দির চাতালে প্রবেশ করি। নন্দীর মূর্তিতে মাথা ঠেকাই, তারপর আস্তে আস্তে মন্দিরে ঢুকি। সন্ধ্যারতি শুরু হয়। চারদিক গমগম করে ওঠে শিব মন্ত্রের আওয়াজে। তন্ময় হয়ে শুনতে থাকি। একসময় আরতি শেষ হয়। বাবার মূর্তিতে মাথা ঠেকিয়ে বাইরে বের হই।
মন্দির চত্ত্বরে পা দিতেই একরাশ কনকনে ঠান্ডা হাওয়া এসে আক্রমণ করে। জলদি টুপি চাপিয়ে কান মাথা ঢাকি। এরপর এক দৌড়ে ভারত সেবাশ্রম। মহারাজ একলাই ছিলেন। আমাকে ডেকে সাদরে বসান। গরম এলাচ দিয়ে চা আসে। আহঃ কি আরাম। অনেকটা সময় কাটাই মহারাজের সাথে। কতো গল্প হয় পুরনো দিনের। আরো নানা গল্প শুনি। একসময় আশ্রমের আরতির সময় হয়।মহারাজের পিছু নিয়ে আমিও যাই। প্রণবানন্দজীর বিশাল ছবির সামনে আরতি করেন। সংঘের গান হয়। মন ভরে যায়।
রাত বাড়ে। আগামীকাল অনেক ভোরে উঠে লাইন দিতে হবে। তবে সংঘের কর্মীরা জানান, আজ লোক কম এসেছে। কাল অত ভিড় হবে না। আশ্বস্ত হয়ে ক্যান্টিনে যাই। গরম খিচুড়ি আলু ভাজা ও আমের চাটনিতে পেট ভরিয়ে ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ি। তাড়াতাড়ি ঘুম ও এসে যায়।
আজ লিখতে বসে বারবার মহারাজের হাসিমুখ, তাঁর কথা মনে ফিরে আসছে। আমি ঘুরে আসার ঠিক তিন বছরের দিন, বিদ্ধংসী বন্যায় মহারাজ শহীদ হন। তাঁর অন্তিম মূহুর্ত, এক ভক্তের কলমে একটি বইয়ে স্হান পেয়েছে। পরবর্তীতে, আমি সেটা পড়েওছি।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।