কবিতায় স্বর্ণযুগে শম্পা রায় বোস

লক ডাউন

সরকারি স্কুলের সিক্স থেকে ইংরেজি পড়া মেয়েটা আজ ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে হোঁচট খায়।
বুকে চেপে ধরা ফাইলটায় হাত বুলিয়ে অপমানিত মেয়েটা বুঝতে পারে,
সরকারি শূন্যপদ আসলে একটা প্রহসন মাত্র।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা কম্পার্টমেন্টাল পাওয়া মেয়েটা,
কালি পড়া ঝাপসা চোখে ‘এরপর’ কথাটার উত্তর খোঁজে।
ফার্স্ট হওয়া ঐ অভাবী মেয়েটা এখন টিউশনের টাকায় একটা স্মার্ট ফোন কিনতে চায়।
রাস্তায় দাঁড়িয়ে ক্লিভেজ
দেখানো ঐ নষ্ট মেয়েটা এখন আর নষ্টামি করতে পারে না।
কিন্তু তবুও সে মাঝরাতে লক ডাউন ভুলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ইতিউতি চায়।
বারো ক্লাস পাশ করা ভাইটা নট রিচেবল্ নম্বরটা থেকে দিদির একটা ফোন কলের আশায় ছটফট করে।
নন্দনে সিগারেটের ধোঁয়া রিং করতে করতে,
সমাজের ক্ষতগুলো সারাবার স্বপ্ন দেখানো সাহসী মেয়েটা এখন,
আপাতত মোবাইলের ওয়েব সিরিজ দেখতে ব্যস্ত।
বাবার শেষ কেমোটার জন্য
একটা বেডের আশায়,
পাড়ার দাদার সঙ্গে অন্ধকারে বসে থাকা ঐ ভাল মেয়েটা এখন খুব অসভ্য।
লকডাউনে সদ্য বেকার ঐ ছেলেটা এখন সাইকেলে করে বাড়ি বাড়ি গ্রসারি সাপ্লাই করে।।
বৃষ্টি ভেজা চুল ঠিক করে আবার আর একটা অর্ডারের খোঁজে বেরিয়ে পড়া ছেলেটার কিন্তু ‘করোনা’ হয় না।
ভেজা টাকা গুণতে গুণতে অদৃষ্টের দোষ দেওয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলা সুইটুর হাহুতাশ– এত বেছেও সিলেকশনে ভুল হল?
ঘর মোছা বাসন মাজার মালতী মাসি উপোসী পেটে,
এখন সকাল সন্ধে ‘করোনা’ মাকে ধূপ দেখায়।
লক ডাউনে রাস্তায় বেরুলেই,
স্কুল বাসের ড্রাইভার কাকু এখন পুলিশের লাঠি পেটা খায়।
কার্নিসে শুয়ে থাকা বিড়ি হাতে টগবগে হেলপারটা,
বোকার মতো আকাশে শুধু ‘করোনা’ খোঁজে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।