সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে মৌসুমী নন্দী (যাপন চিত্র পর্ব ৫)

মনের অসুখ

আমাদের চেনা পৃথিবীর ভিতরে একটা অচেনা পৃথিবী রয়ে গেছে ৷ ব্যস্ত অামরা ,লোভী আমরা বড়ই আত্মকেন্দ্রিক ,সেই পৃথিবীটাকে বুঝতে শিখিনি ,দেখতে শিখিনি তাই সেই সমান্তরাল পৃথিবীটাকে ৷ আমরা দরজা জানালা বন্ধ করে ঘুমাই তাই মাছেদের গোপন সংসারের খবর রাখি না ৷ একটি ভিজে যাওয়া পথের খোঁজে তিমির নিষাদমাখা নৌকাগুলো পুষে রাখি জীবনের জলাধারে ৷ কিন্তু জলাধারটা দেখতে শিখিনি ,প্রতিদিন একপা দু “পা করে হেঁটে যাই বিবর্ণতার দেশে কিন্তু মানতে পারি না আমরা বাইপোলার ডিসঅর্ডার এবং পোস্টট্রম্যটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে ভুগছি ৷ এই স্ট্রেস ডিসঅর্ডারের স্বীকার আমরা অল্প বিস্তর সকলেই ৷ কেউ সিঁড়ির প্রথমধাপে কেউবা শেষ ধাপে পৌঁছে যাই ৷ শেষধাপে পৌঁছে গেলে সেটা মানসিক রোগের আকার নেয় ৷ কোনো মানসিক রোগের সঙ্গে যে একটা লজ্জা জড়িয়ে থাকে, তা মেনে নেওয় বা কাটিয়ে ওঠ খুবই কঠিন হয় ব্যক্তিটির সাথে যদি পরিবারের বা আশেপাশের লোকেরা সহযোগিতা না করেন ৷ পরিস্থিতি বা ব্যাপারটা বুঝে মানিয়ে নিতেই অনেকসময় লেগে যায় ৷ যারা উপলব্ধি করতে পারেন তার আপনজনটি এই স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে ভুগছেন তাকে সমর্থন বা তার উপর অতিরিক্ত মনোযোগ দিতে হবে তার আপনজনদের যাতে তিনি দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন তারজন্যে ৷
বর্তমানকালের ওয়ার্কলোড ও বিভিন্ন কারণে আমার বা আপনার অনেক প্রিয়জনই এই মানসিক রোগে ভোগেন ৷ যদি বুঝতে পারেন ব্যাপারটা তাহলে তার প্রতি সহানুভূতিশীল হন ও তাকে সহযোগিতা করুন এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে ৷ আনন্দের বিষয় হল ,মানসিক রোগের চিকিৎসা সম্ভব৷ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার লক্ষ লক্ষ লোক মানসিক রোগে আক্রান্ত হয় আর এটা তাদের প্রিয়জনদের জীবনেও প্রভাব ফেলে ৷ প্রতি চারজনের মধ্যে একজন জীবনের কোনো না কোনো সময়ে এই রোগে আক্রান্ত হয় ৷ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা এই রোগের পিছনের বড়ো কারণ হল অবসাদ ৷ ,স্কিৎজোফ্রেনিয়া ও বাইপোলার ডিসঅর্ডার হল সবচেয়ে দুঃসহ ও ক্ষতিকর মানসিক রোগ৷ যদিও বেশীরভাগ লোক এতে আক্রান্ত হলেও লোকলজ্জার ভয়ে গোপন রাখে বা উপেক্ষা করে ৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর অনুসারে অনেক মানসিক রোগীই লজ্জার কারণে চিকিৎসা করাতে সংকোচবোধ করেন ৷ এক্ষেত্রে যদি আপনি বুঝতে পারেন এই ধরনের কিছু ঘটছে আপনার প্রিয় মানুষটির সাথে তখন তাকে দূরে সরিয়ে না দিয়ে ভালোবাসা ও সহমর্মিতা দিয়ে কাছে টেনে নিন ৷ আপনার যত্নের ভীষণ প্রয়োজন তার ৷ এই অবসাদে অাক্রান্ত লোকটি অনেকসময় এমন কিছু করে বসেন যে আমরা তাকে চিরতরে হারিয়ে ফেলি ৷ বিশেষজ্ঞদের মতে ,মানসিক রোগ হল একজন ব্যক্তির সুস্হভাবে চিন্তা করতে ,আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং সঠিক আচরণ করতে না পারা ৷এই অবস্হাতে আক্রান্ত ব্যক্তি অন্যদের কাছে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করার ও জীবনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে মোকাবিলা করার ক্ষমতা হারায় ৷ মানসিক রোগ কোনো ব্যক্তিগত দুর্বলতা বা চারিত্রিক ত্রুটির ফল নয় ৷ ব্যক্তি বিশেষ ,অসুস্হতা ও পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে রোগের লক্ষণ ভিন্ন হতে পারে ৷ উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে ব্যক্তি -বিশেষদের চিকিৎসা সম্ভব ও তারা এক ফলপ্রসূ আনন্দময় জীবন কাটাতে পারে ৷ মানসিক রোহের মোকাবিলা করতে দক্ষ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযাযী চিকিৎসা করাতে হবে ৷ তারসঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ ও স্হায়ী দৈনন্দিন তালিকা মেনে চলতে হবে , কাজে ব্যস্ত থাকতে হবে , প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমেরও ৷ এরসাথে সর্ব্বপরি যেটা প্রয়োজন কোনো রকম নেশা থাকলে সেটা থেকে যতটা পারা যায় বিরত থাকা ,তারসাথে নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা না করে সেইসব লোকেদের সঙ্গে সময় কাটান যাদের আপনি বিশ্বাস করেন এবং যারা আপনার যত্ন নেয় এবং প্রয়োজনে আধ্যাত্মিক বিষয়ের প্রতিও মনোযোগ দিতে পারেন ৷
আজ এই পর্যন্তই ৷ সকলে খুব ভালো থাকবেন এবং একে অপরের সাথে সুতোর মত বেঁধে বেঁধে থাকবেন ৷ সবাইকার জন্য রইল একডালি হৈমন্তিক শুভেচ্ছা ৷
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।