কোনও বিষয়কে যত ভোলার চেষ্টা করা হয় সেই বিষয়টি আরও মাথার ভিতরে যেন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আর এটাই মস্তিক-মনের রোগ। এই ধরুন যতই আমরা শোক মুহূর্ত নিয়ে আলোচনা কিংবা ভাববো না ভাবছি ততই যেন এই শোকের খবরগুলো আমাদের কাছে এসে পৌঁছাচ্ছে। প্রিয়জন, আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুরা যেন একের পর উইকেট পড়ার মতো আউট হয়ে যাচ্ছে। একটা শোককে পুরোপুরি শান্ত করার আগেই আরেকটা তরতাজা শোক এসে আমাদের গিলে নিচ্ছে। নিজেদের মন এবং স্বাস্থ্যের কথা ভেবে আতঙ্কের পৃথিবী থেকে মনকে কয়েক ক্রোশ দূরে সরিয়ে রাখতে চাইছি কিন্তু সেটাও একটা সময়ের পরে সম্ভব হচ্ছে না। নিজেকে তো নিজের পরিবেশ, প্রতিবেশী এবং বাইরের জগৎ থেকে আলাদা রাখা যায় না।
আমরা পারছি না রানাঘাটের ভাইরাল পুরোহিত সুনীল চক্রবর্তীর মতো নিজের মনকে বোকা বানিয়ে রাখতে। তার মতো বলতে পারছি না – ‘করোনা আমাকে ধরো না’। কিংবা থ্রী ইডিয়টস চলচিত্রের র্যান্চোর মতো বুকের বাঁদিকে হাত রেখে বলতে পারছি না – ‘আল ইজ ওয়েল’। একটা সময়ের পর সেই সাহসটা আমাদের থাকছে না। ২০২০ সালে থেকে ২০২১ সালে দেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের মানুষ অনেক কঠিন কঠিন আঘাতের সম্মুখীন হয়েছে। এক নিমেষে পাল্টে গিয়েছে মানুষের জীবন। করোনা, আমফান, ইয়াস আরও কত কী! সব থেকে বড় কথা মানুষ তার রোজগার হারিয়েছে, সুখ হারিয়েছে, মনের বল হারিয়েছে, এমন কি পরিবার হারিয়েছে।
এই হারানোর পরিস্থিতির মধ্যে রাজনীতিও তার মতো সুযোগ খুঁজে নিয়েছে। কালো ব্যবসা শুরু হয়ে দিয়েছে অমানুষের দলগুলো যারা অক্সিজেন সিলিন্ডার, কোভিড টেস্ট রিপোর্ট, হাসপাতালের বেড নিয়ে অসহায় মানুষগুলোর জীবন নিয়ে খেলা করছে। এখন কোনও রাজনৈতিক দলের রঙ নয় নিঃস্বার্থ মানুষের প্রয়োজন। এই শোক এবং ক্ষতির অধ্যায়কে বেরোতে হলে সকলের মনকে এক করতে হবে। এই কঠিন সমস্যগুলোকে পরাধীন করার জন্য, আমাদের সকলকে স্বাধীন করার জন্য নিজেদের স্বচ্ছতাবোধকে জাগ্রত করতে হবে। একটু ঝুঁকি নিয়ে, একটু কষ্ট শিকার করে, সতর্কতা মান্য করে না হয় আমাদের দেশকে বাঁচানোর নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করি। সকলে মিলে এই শপথ করি, আমার ও আপনার জন্য আর যেন কোনও শোক এবং ক্ষতি অন্যের ঘরে না ঢুকে যায়। আগামীতে আমাদের সকলের কান্না যেন আনন্দাশ্রু হয়।