অণুগল্পে সায়ন পালিত

বর্তমানে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর বাংলা বিভাগের ছাত্র।

জানলা

সালটা ১৯৯৯। নতুন শতাব্দী দোর গোড়ায় দাঁড়িয়ে। তখন জীবন এত জটিল ছিলনা। কারেন্ট চলে গেলে নর্থ কলকাতায় পাড়ার রোয়াকে বসত আড্ডার বহর। রঞ্জনের বয়স তখন ছয়। জন্ম থেকেই তার দুটি পা সম্পূর্ণ রূপে অকেজো। তাই সারাদিন সে বাড়ির একতলার ছোট ঘরের একটি জং ধরা জানলার ধারে বসে বাইরের পাখি-প্রজাপতিদের সাথে গোটা বিশ্বে করেছে অবাধ বিচরণ।ভোরের সূর্য ওঠা থেকে গোধূলির মায়াময়তা সবটুকুকে উপলদ্ধি করেছিল গ্রিলের মধ্যে থেকে। রঞ্জনের অজান্তেই সেই জানলা হয়ে উঠেছিল তার একমাত্র অলীক বন্ধু যার সাথে সে দিবারাত্রির সুখ আর গ্লানিকে ভাগ করে নিত। ধীরে ধীরে তার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছিল।পড়াশোনায় কোনোদিনই সেরকম মন বসেনি রঞ্জনের তাই সকাল হলেই সে জানলার ধারে বসে থাকতো তার প্রিয় কাবুলিওয়ালার জন্য। তার ডাকে রঞ্জন হারিয়ে যেত শত শত গল্পের দেশে। আবার পড়ন্ত বিকেলে পেঁজা মেঘে চড়ে মাঠে মাঠে ঘুরে বেড়াতে মনের গভীরে অতলে। হঠাৎ একদিন বাড়ির পাশের মাঠে জমা হল আকাশখেকোর দল। পরে রঞ্জন তার বাবার কাছে জানতে পারে সেই মাঠে নাকি দশ তলা উঁচু ফ্ল্যাট হবে।
প্রায় ছয় মাস কেটে গেল পাশের ফ্ল্যাট বাড়িটি প্রায় গ্রাস করেছে রঞ্জনের বাড়িটাকে বিশেষ করে তার সেই জনলাটিকে।যেদিন তার জানলার চারিদিকে জমা হল কংক্রিটের ভীড় সেদিন থেকে রঞ্জন হসপিটালে ভর্তি। প্রতিনিয়ত লড়েছিল জীবন যুদ্ধে। এখন আর সেই জানলার বাইরে একচিলতে আকাশও দেখা যায়না। কেউ আর বসে না সেখানে আগের মতন। চিরকালের মত বন্ধ হয়েছে তার জীর্ন কপাট। তাই শুধু পড়ে আছে অগাধ অন্ধকারে ডুবে যাওয়া স্তিমিত জানলা।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।