সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব – ৫২)

রেকারিং ডেসিমাল

ফেরার পথে পুরোনো হওয়া ডাক্তার বউয়ের মনে পড়ে সেই মানুষটিকে।
পাকা ল্যাংড়া আমের মত গায়ের রঙ। গ্যালিস দেওয়া প্যান্ট। সাহেবি টুপি মাথায়। এতটাই, ইংরেজিতে যাকে বলে প্র‍্যাগম্যাটিক, তাকেই বাংলায় প্রাজ্ঞ বলি,  যে নিজের ছবি তুলিয়ে স্টুডিওতে, একখানা ক্লোজ আপে বাস্ট,  মানে কিনা আবক্ষ, আর একখানা পুরো মাপের বসে থাকা সুন্দর ফটো পোস্টে পাঠিয়েছেন দূরে থাকা দুই মেয়েকে।
নইলে চলে যাবার পর বাবাকে মনে করতে, বাপের শেষ কাজ করতে, তারা ছবি পাবে কোথায় ?
এমনটি আর দেখেনি নাতবউ।
অন্য রকম একটা জীবন। অন্যরকম একটা মানুষ।
বড় মেয়ে, জামাই,  মানে ব্যানার্জি মশাই,  তাঁকে আদর করে রেখেছিলেন।
তাঁর স্ত্রীকেও তাঁরাই রেখেছিলেন শেষ দিন অব্ধি নিজেদের কাছে। তা তিনি ত আগেই চলে গেছেন।
পুরোনো জাজ সাহেব  দেরাদুনের মাস্টার মশাই হয়ে ভালোলাগার বিষয়বস্তু অংক শিখিয়েও এতটাই উপার্জন করেছেন, যে দুস্থ ছেলেদের জন্মদিন পড়াশোনার খরচের ভার নিয়েছেন,  আবার মেজ মেয়ে জামাই যে যখন কলকাতা থেকে আসবে তারও খাতিরযত্ন করেছেন।
দিল্লি অবধি টিকিট বা দিল্লি থেকে দেরাদুন নিয়ে আসার জন্য গাড়ি,  ছেলের বিয়েতে মেয়ে পড়বে তার জন্য নতুন শাড়ি, কোনটা কম হয়নি।
বউয়ের মনে পড়ে,  শ্বাশুড়ি মায়ের গর্বোজ্জ্বল মুখখানা।
বার বার বলতেন, বুঝলে, এইজন্যই মনে রাখতে হয়, স্বদেশে পূজ্যতে রাজা বিদ্বান সর্বত্র পূজ্যতে।
আমি ছিটকিনি দিয়ে ঘরে ছেলে মেয়েকে পড়াতে বসাতাম গো। এই বাড়ির এত হই হইয়ের মধ্যে পড়াশোনা করানো খুব মুস্কিল।
ঘরে এক বাচ্চা পড়ছে, ত দেখা যেত আর দুই তিন জনের ছোট ছোট খোঁচা চুল মুন্ডু জানলার পর্দার ফাঁকে।
এই, কি করছিস ?  আমরা কত মজা করে ফেললাম। বকা খাচ্ছিস ত মায়ের কাছে ?
হা হা হি হি।
টেনে কি রাখা যায় পড়ার বই আর হোম ওয়ার্ক দিয়ে, উফ!
ছবিটা ভেবেই হেসে ফেলে নতুন বউ।
শ্বাশুড়ি ও হাসেন।
জানো কি,  এ ঘরের নামই ছিলো, প্রবেশ নিষেধ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।