সাপ্তাহিক কোয়ার্ক ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব – ৮০)

আশি

শ্রেয়ানের খাটেই শুয়ে আছি । চিন্তায় মাথা ভারী হয়ে আছে । আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না বেশ কিছু বছর ধরে আমার চারি পাশের লোক গুলো, উদ্দেশ্য প্রনোদিত হয়ে, চক্রান্ত করে তাঁদের ঘেরাটোপে আমায় নজর বন্দি করে রেখেছে । একজন লোক আমার বাড়ির চাকর হয়ে ঢুকেছে । তার আসল পরিচয় যদিও আমি এখনও সঠিক ভাবে জানিনা । আরেকজন নিশ্চই প্ল্যান করে রাজধানী এক্সপ্রেসে আমার কাছের সিট্ রিসার্ভ করে । আমার সঙ্গে ভাব জমায় ।এবং আমার সরলতায়, নাকি বোকামির সুযোগ নিয়ে কৌশলে আমার সাথে থাকতে শুরু করে । ক্রমশ সে আমার কাছের মানুষ হয়ে ওঠে এতো কিছু সব স্বার্থের জন্যে ভাবতেই মনটা বিতৃস্নায় ভোরে উঠছে ।আমি এতো বোকা যে শ্রেয়ানের মিথ্যে কিডন্যাপিং এর নাটক সাজিয়ে আমাকে ব্ল্যাকমেলিং করা হচ্ছে ।
আমায় কন্ট্রোল করা হচ্ছে, ডিকটেট করে বেগার খাটাচ্ছে ।কিন্তু আর না এবার আমার খেলা শুরু করতে হবে । অদৃশ্য বাজিকরের হাতে অনেক পুতুল নাচ নেচেছি । আমার তো কোনো পিছুটান নেই । তাই কোনো কিছু তোয়াক্কা করিনা কোনো কিছু ভয়ও করিনা, আমার এবার আসল কাজ হবে Quarko খুঁজে বের করা।আমার বিজ্ঞান সাধক বাবার আবিস্কারকে বাঁচাতে হবে । তার আরম্ভ করা কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই আমার দায়িত্ব । বাল্মীকি এসে বললো, “দাদা খাবেন?”ঘড়িতে দেখলাম রাত দশটা । পুনিত তো এখনও এলো না । আমি বললাম,”না আমার আর বন্ধুর খাবার ঢেকে রেখে তুমি খেয়ে শুয়ে পড়ো “। বাল্মীকি চলে গেল । যতদূর জানি ইসবগুল খাওয়ার আগে বাল্মীকি খায় । ঘুমের ওষুধটা কতটা করা জানিনা । লুলিয়ার কাছে গিয়ে দেখলাম ও ঘুমোচ্ছে । কিন্তু আমি এটা বুঝতে পারছিনা লুলিয়া হঠাৎ আমার বাড়ি চলে এলো কেন । হঠাৎ কি ঘটলো?এটা কি শত্রু পক্ষের অন্য কোনো চাল?নাকি সত্যি ওর কিছু হয়েছে? বিপদে পরেই কি এখানে এসেছিলো?নাকি অনুশোচনা? না যাই হয়ে থাকুক মনটাকে আর নরম হতে দেব না । পুনিত আসতে এতো দেরি করছে কেন কে জানে । পুলিশের লোকের একটা ফাঁকা বাড়ি ভেঙে ঢুকে সার্চ করতে এতো সময় লাগার কথা না । সাড়ে দশটা বাজলো ।
বাল্মীকি খেয়ে শুয়ে পড়েছে । ও রান্না ঘরের মেঝেতেই শোয় । দরজাও বন্ধ করে শোয় । ওকে অনেকবার বলেছি ড্রয়িং রুম এর সোফাটা খুলে, বেড বানিয়ে ওটাতে শুতে । কিন্তু বাল্মীকি রাজি হত না । ও রান্না ঘরেই শোয় বরাবর । আগে ভাবতাম সেটা ওর বিনয় । এখন বুঝেছি সেটা ওর প্রাইভেসি। রান্না ঘরের দরজা ব্ন্ধ করে শুলে তখন ওটা ওর প্রাইভেট চেম্বার ।ড্রয়িং রুমের খোলা জায়গায় প্রাইভেসি মেইনটেইন করা সম্ভব নয় । নিশ্চই দরজার আড়ালে ও কোনো গোপন কাজ সারে কিংবা ফোনে ওর বসের সাথে যোগাযোগ করে। আমি ড্রয়িং রুমে বসেই পুনিতের অপেক্ষা করছিলাম । হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠল । প্রাইভেট নাম্বার । নিশ্চয় গোকুলকুন্ডু শয়তানটা ।ফোন ধরলাম । যা ভেবেছি তাই । ওই গোকুল কুন্ডু । গোকুল জিজ্ঞাসা করলো,”মিঃ চুধুরী কতদূর এগোলেন? আপনার হাতে তো মাত্র আর একটা দিন । পরের দিন আপনি নয় ধাঁধার উত্তর দেবেন আর নয় আমরা আপনাকে আপনার বন্ধুর কাটা মুন্ডু দেব । “রাগে আমার গান রিরি করছিলো । আমি বলেই ফেললাম “সে কথা তো আপনি আমাকে অনেকবার শুনিয়েছেন । বার বার বলার কি আছে? আমি কি হিসেব জানিনা?”বলেই ভাবলাম শয়তানটার সাথে এভাবে কথা বলা উচিত হলোনা । আমি নেটওয়ার্কএর থেকে হাজার গুন পিছিয়ে ।তাই যতটা পাড়া যায় ওকে শান্ত রেখে কাজ গুছতে হবে। ও কি বলতে যাচ্ছিলো ।আমি ওকে কথা বলতে না দিয়ে বললাম,”দেখুন কিছু মনে করবেন না আমি আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছি । সমাধান হোল নিশ্চই আপনাকে জানাবো। আর যে সময় আমাকে বেঁধে দিয়েছেন তা আমার মনের মধ্যে আছে । এটাও জানি ভদ্রলোকের এক কথা (মনে মনে বললাম তোর মতো শয়তানের )”। শয়তানটা আমার কোথায় খুশি হয়ে বলল,”দ্যাটস লাইক এ জেন্টলম্যান । কাজটা হোলে আমরা আপনাকে পুরস্কারও দেব ।বন্ধুকেও ফিরে পাবেন । কথাটা মনে রাখবেন ।”পুনিত এখনও এলো না ।রাত এগারোটা বাজলো । বাল্মীকির দরজা বন্ধ হয়েছে আধঘন্টা হয়েছে । এতক্ষনে নিশ্চই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে । বসে বসেই বাল্মীকিকে ডাকলাম । কোনো সারা নেই । কাছে গিয়েও ডাকলাম । দরজা ঠেলে দেখলাম ভেতর থেকে ব্ন্ধ । যাক এবার পুনিত এসে যা করার করবে । ফিরে সোফায় বসতেই কলিং বেল তা বাজলো । পুনিত এসেছে নিশ্চয় । দরজা খুলতেই দেখি দুটো লোক কাপড় মুখে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । আমাকে ওরা ধাক্কা দিয়ে ভেতরে নিয়ে গেল । একজন দরি দিয়ে আমার হাত পা বেঁধে মুখে কাপড় ঢুকিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো।
আমি একরাশ বিস্ময় নিয়ে ওদের দেখতে লাগলাম । কিছু করার নেই । আমি এখন অসহায় ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।