আগেরবার যখন এই জায়গাতে এসেগেছিলাম । তখন তাও অন্তত মনে হয়েছিল যে জায়গাটা পৃথিবীর কোথাও একটা অবস্থিত । কিন্তু এখন দুর্গন্ধময় জায়গাটাকে পুরো মনে হচ্ছে নরকেরই একটা অংশ । আকাশে আধখানা চাঁদ থাকা সত্ত্বেও জায়গাটা ঘুট ঘুটে অন্ধকার । মানুষের ছায়াময় অবয়ব ছাড়া আর কিছু বোঝার উপায় নেই। পুলিশ এর গাড়িটা চলে যাবার পর জায়গাটা আরও অন্ধকার হয়ে গেছে । পুনিত এবার রামদার ঘরের দিকে এগিয়ে গেল । আমিও গেলাম পেছন পেছন । পুনিত কাঁধের ঝোলা ব্যাগ থেকে পাঁচ সেলের টর্চ নিয়ে জেলে এগোতে লাগলো । রামদার কুঁড়ের দরজায় টর্চ ফেলে দেখলো তালা ঝুলছে । গাঢ় অন্ধকারে বড় বড় আবর্জনার টিলা গুলো দৈত্যের মতো চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে । হঠাৎ পাশা পাশি দুটো জ্বলজ্বলে কি দেখে আমি শব্দ করে ফেললাম । জ্বলজ্বলে জিনিস দুটো হঠাৎ সরে গেল । একটা জমাট অন্ধকার যেন দৌড়ে গেলো । বুঝলাম ওটা শিয়াল । পুনিত বলল, “টর্চটা একটু ধরুন তো স্যার, তালার দিকে ফোকাস করুন ।”আমি কথা মতো কাজ করলাম। দেখলাম পুনিতের হাতে একটা প্লায়ার ।দুতিনটে হ্যাঁচকা টানেই পুনিত পুনিত তালাটা ভেঙে ফেললো । পুলিশ আর চোরের মধ্যে যে অনেক মিল আর একবার উপলব্ধি করলাম ।আমার হাত থেকে পুনিত টর্চটা নিয়ে লাথি মেরে দরজা খুলে ঢুকলো । দরজা থেকে টর্চ ঘুরিয়ে ঘরের ভেতরটা ভালো করে দেখে নিল।হঠাৎ আমার পেছন থেকে একটা ঝুপ করে শব্দ পেলাম । পুনীতও শব্দ টা পেয়ে টর্চ ফেললো ঐদিকে । কি যেন একটা সরে গেল ।কোনো জন্তু জানোয়ারই হবে । মানুষের পক্ষে এতো তাড়া তাড়ি ওখান থেকে সরা সম্ভব নয় । পুনিত বাইরের দিকেও চারপাশটা টর্চের আলো জ্বেলে দেখে নিলো ।”আমার পেছনে আসুন “বলে পুনিত ঘরে ঢুকল।
ঘরের ভেতর ঢুকে পুনিত তাড়া তাড়ি কোনো কিছুর উদ্দেশ্যে এগিয়ে গেল । টর্চ জ্বেলে সুইচ বোর্ডটা দেখে, সবকটা সুইচ অন করে দিলো । ঘরের আলো জ্বলে উঠল । এটা হল সেই ঘর জেটা আমি আগে দেখেছি । এই ঘরেই একদিকে পাকা দেয়াল অন্য তিনদিক দরমার । এই ঘরে কিছুই নেই পাকা দেয়ালের গায়ে যে দরযাটা সেটা ঠেলতেই খুলে গেল । আবার টর্চ জ্বেলে সুইচবোর্ড খুঁজে আলো জ্বালালো পুনিত । এখনও ঘরটা থেকে একটা বোটকা গন্ধ বেরোচ্ছে । এটা হল সেই আজব কারখানা ঘোর যার কোনো দুটো জিনিসে মিল নেই । এখানেই রামদার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা ।পুনিত খুঁটিয়ে সব দেখতে লাগলো । ড্রয়ার, বাক্স,বোচকা যা ছিল সব খুলে দেখলো । একটা ড্রয়ার থেকে কিছু একটা পেয়ে মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল । আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “নিন ধরুন ” দেখলাম সেটা একটা পার্স । খয়েরি রঙের একটা জেন্টস পার্স । আমারো এরকম একটা ছিল । জিজ্ঞাসা করলাম, “কি করবো এটা?”পুনিত বলল,”চিনতে পারছেননা? খুলে দেখুন “পার্সটা খুলে চমকে গেলাম । এটাতো আমারই পার্স । পারসটা খুলে ডেবিট কার্ড,ক্রেডিট কার্ড,ভিসিটিং কার্ড সব খুঁজে পেলাম । কিডন্যাপিং এর সময় হারানো পার্স টা এটাই । তাহলে কি আমাকে কিডন্যাপ করে এখানেই রাখা হয়েছিল? হঠাৎ একটা মর মর শব্দে তাকিয়ে দেখি যেই আলমারিটা রামদা বলেছিলো মদে ভর্তি, সেটা খুলে পুনিত কিছু একটা করছে তারি জন্য এরম শব্দ হচ্ছে । আমি পুনিতের কাঁধের ওপর দিয়ে উঁকি মেরে দেখি আলমারিটায় কোনো তাক নেই । শুধু আছে গাড়ির গিয়ারের মতো দেখতে একটি লিভার । আলমারির ফ্লোরে ওটা আটকানো আছে । ওই লিভারটা টানতেই আলমারির দেওয়ালটা সরে যাচ্ছে তালে কি এটা চোর কুটুরি?