সাপ্তাহিক কোয়ার্ক ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব – ৯০)

নব্বই

লুলিয়াকে আমার বাড়ির কাছে পৌঁছে দেওয়া জনার্দন কাকার পক্ষে অনেক বেশি বাড়াবাড়ি বলে মনে হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে খুব সম্ভবত এটাও গোকুল কুন্ডুর একটা চাল। জনার্দন কাকা হয়তো লুলিয়াকে সত্যি গ্যাসচেম্বার থেকে বাঁচিয়েছে কিন্তু আমার কাছে পৌঁছে দেবার দুঃসাহস দেখাবে না।গোকুল কুন্ডুর নেটওয়ার্ক এমন শক্তিশালী এবং সক্রিয় যে ওকে ফাঁকি দেওয়ার কোনো উপায় নেই। জনার্দন গোকুল কুন্ডুর সঙ্গে পরামর্শ করেই আরও বড়ো কোনো উদ্দেশ্যে আমার কাছে লুলিয়াকে প্ল্যান্ট করেছে। যেটা হয়তো লুলিয়া নিজে জানে আর তাই প্ল্যান মাফিক অভিনয় করছে। অথবা লুলিয়া নিজেও জানেনা। দ্বিতীয় সম্ভবনাটাই বেশি বলে মনে হচ্ছে। আমি বাইরের ঘরে গিয়ে মেন গেটে তালা দিয়ে এলাম। জানালা দিয়ে দেখলাম রাস্তার দিকে। কোনো সন্দেহজনক ব্যক্তিকে দেখতে পেলাম না। এখন লুলিয়ার কাছথেকে বেশকিছু তথ্য জানতে হবে। ওর উত্তর থেকে এটাও জানতে পারবো যে ও অভিনয় করছে কিনা। আমি লুলিয়ার কাছে জানতে চাইলাম “আচ্ছা আমার আশেপাশে যেসব ঘটনা ঘটে চলেছে। তার অর্থ আমার কাছে পরিষ্কার নয়। তুমি যতটা জানো তা জানিয়ে আমার উপকার করতে পারবে?”লুলিয়া এবার যা বলল তার সারমর্ম হল গোকুল কুন্ডুর লোক একদিন ওকে একটা ফাঁকা দোতলা বাড়িতে নিয়ে এলো। বাড়িতে ঘুরিয়ে ওকে বলা হল এটা ডঃ কানুপ্রিয় চোঙদারের বাড়ি। উনি মারা গেছেন। ওনার অ্যাসিস্ট্যান্ড ডঃ বিজয়নের স্ত্রীর ভূমিকায় লুলিয়াকে অভিনয় করে যেতে হবে। ওর নতুন নাম হলো শ্রীজা থেকে লুলিয়া। আমি জিজ্ঞাসা করলাম যে ডঃ বিজয়ন বলে কোনো লোক ছিল কিনা। লুলিয়া বললো যে ওই নাম কোনো লোক ছিল না। তবে ওকে বলা হয়নি। ও পরে নিজে জানতে পারে। ডঃ চোঙদারের মৃত্যুর ব্যাপারে কিছু জানেনা।
একটু চুপ করে থেকে আমি আমি জিজ্ঞাসা করলাম “তোমার কাছে যে বোবা ছেলেটা ছিল সে কোথেকে এলো?”লুলিয়া জানালো যে ছেলেটা গোকুলকুন্ডুর আস্তাবলের। লুলিয়া নাকি আদৌ চোঙদারের বাড়িতে ২৪ ঘন্টা থাকতো না। আমার গতিবিধি অনুযায়ী ও ওখানে পৌঁছে যেত। তাই আমি আচমকা চলে গিয়ে বাড়িতে ওকে পাইনি। ওর কাকার বাড়ির গল্পটা সেইজন্যই তৈরি করতে হয়েছে। এরপর লুলিয়া এমন একটি তথ্য জানালো যার জন্য ওর প্রতি আমার বিশ্বাস ফিরে এলো। লুলিয়া সোজা সুজি লুলিয়া আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,”তোমার ওই ভাইটা মানে শ্রেয়ান গোকুল কুন্ডুর লোক “। কথাটা শুনে আমি যেন স্তব্ধ হয়ে গেলাম, কিছুক্ষন বাদে সম্বিৎ ফিরে আমি লুলিয়াকে ঝাজিয়ে উঠে বললাম,”কি যাতা বলছো?”লুলিয়া দৃঢ় কণ্ঠে বললো জোর দিয়ে,”হ্যাঁ আমি ঠিকই বলছি। আমি বলে উঠলাম,”লুলিয়া শ্রেয়ান সম্পর্কে যা জানো আমায় সত্যি করে বলতো,”। লুলিয়া বললো আমি বিশেষ কিছু জানিনা, তোমার সব গতিবিধির খবর আমায় শ্রেয়ানই দিতো। রাস্তায় তোমাদের অ্যাক্সিডেন্ট ঘটানো হয়েছিল ইচ্ছাকৃত। ওই অ্যাকসিডেন্টে শ্রেয়নের আচোরো লাগেনি। আর তোমার অজ্ঞান হয়েও স্বাভাবিক নয় ওষুধ দিয়ে অজ্ঞান রাখা হয়েছিল। সেই ফাঁকে শ্রেয়ান আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যায়”। জগাকে নাকি খুন করা হয়েছিল। কারণ জগার ফিরে আসাটা গোকুল কুন্ডুর প্ল্যান মাফিক ছিল না। গোকুল কুন্ডুর অপনেন্টরা জগাকে আধমরা করে ফেলে দিয়ে যায়। ও মুখ খুললে আমি অনেক কিছু জেনে যেতাম তাই ওকে গোকুল বা শ্রেয়ান বাঁচতে দেয়নি। তবে গোকুলের অপোনেন্ট আছে। তবে তারা কে লুলিয়া জানেনা। তবে লুলিয়া এটা জানে গোকুল কারুর থেকে কন্ট্রাক্ট পেয়ে এসব কর্ম কান্ড করে চলেছে। তার মানে গোকুলের আড়ালে নাটের গুরু অন্য কেউ। রামকৃষ্ণ পরমহংসের ধাঁধাটা লুলিয়া জানতো। শ্রেয়ান ও গোকুলের কথা বলার সময় ও শুনেছিল। তার মানে শ্রেয়ান ধাঁধাগুলো আগেই সমাধান করে ফেলেছিলো।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।