সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে সুদীপ ঘোষাল (পর্ব – ১)

অজয়পাড়ের উপকথা, উপন্যাসের পরের কাহিনী

সীমানা ছাড়িয়ে

দুহাজার পাঁচ সালে একটা বন্যা হয়েছিল অজয় ও ঈশানী নদীর মিলিত জলস্রোতে।ডিভিসি থেকে জল ছাড়া ও অবিরাম বৃষ্টির ফলে এই বৃষ্টি। অভাবে কতলোক খেতে না পেয়ে শহরে চলে গেছে।কেউ কেউ আবার নিজেকে বিক্রি করেছে দালালের হাতে। তারা শরীর বিক্রি করে পেট চালাত।সবরকমের মানুষ নিয়ে এই উপন্যাসের বিষয়।গ্রামের নাকুদাদু আমাদের রামায়ণের গল্প শোনাতেন,তিনি বলতেন, অযোধ্যার রাজা দশরথের কনিষ্ঠা মহিষী সুমিত্রার দুই যমজ পুত্র হলেন লক্ষ্মণ ও শত্রুঘ্ন। তিনি রামের অত্যন্ত অনুগত ছিলেন। বিশ্বামিত্র রাক্ষসবধের জন্য রামকে আমন্ত্রণ জানালে লক্ষ্মণ তার সঙ্গী হন।পরবর্তীকালে তিনি রামকে পিতার আদেশের বিরুদ্ধে বনগমনে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু রাম বনবাসে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকলে, লক্ষ্মণও তার সঙ্গে বনে যান। বনবাসকালে তিনি একাধারে রামের ভাই, বন্ধু ও সহায়কের ভূমিকা পালন করেছিলেন।লঙ্কার যুদ্ধে তিনি রাবণের পুত্র মেঘনাদকে বধ করেন। বনবাসের শেষে রাম অযোধ্যার রাজা হলে লক্ষ্মণ তার মন্ত্রী নিযুক্ত হন।উত্তরকাণ্ডে রাম সীতাকে নির্বাসিত করলে, লক্ষ্মণ তাকে বাল্মীকির তপোবনে রেখে আসেন।রামচন্দ্র যখন কালপুরুষের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন লক্ষ্মণ দ্বাররক্ষীর ভূমিকা পালন করেন। এই সময় দুর্বাশা ঋষি রামের সাক্ষাৎপ্রার্থী হলে, তিনি কাউকে রামের কাছে যেতে না দেওয়ার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে দুর্বাসাকে রামের কাছে নিয়ে যান। প্রতিজ্ঞাভঙ্গের অপরাধে রাম তাকে পরিত্যাগ করলে, তিনি সরযূ নদীর তীরে যোগাবলম্বে দেহত্যাগ করেন।লক্ষণ হলেন এমন এক মহাপুরুষ যিনি মহাপরাক্রমশালী মেঘনাদকে বধ করেন। মেঘনাদের এমন বর ছিল যে, যে ব্যক্তি ১৪ বছর না খেয়ে, না ঘুমিয়ে ব্রহ্মচর্য্য পালন করবেন তিনি শুধু মেঘনাদকে বধ করতে পারবেন। বনবাসের সময় ১৪ বছর শ্রীরামের ভ্রাতা লক্ষণ এই মহা কঠিন কার্য্য ও শক্তি অর্জন করেন, ফলস্বরূপ তিনি রামায়ণের যুদ্ধে রাবণের পুত্র মেঘনাদকে বধ করেন।লক্ষ্মণ সীতার কনিষ্ঠা ভগিনী ঊর্মিলাকে বিবাহ করেছিলেন। তার দুই পুত্রের নাম ছিল অঙ্গদ ও ধর্মকেতু।কথিত আছে, লখনউ শহরটি বর্তমান উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের রাজধানী লক্ষ্মণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
টোটন,রমেন,বৃষ্টি ও আরও অনেকে নাকুদাদুর কাছে তরণীসেনের গল্প শুনেছিলাম।তরণীসেনের কাহিনী শুনে আমরা কেঁদে ফেলেছিলাম প্রথমে।নাকুদাদু বলেছিলেন, বিভীষণ লঙ্কাপুরী ত্যাগ করলেও তার স্ত্রী সরমা ও পুত্র তরণীসেন লঙ্কাপুরীতেই অবস্থান করেছিলেন৷তরণীসেনের বয়স তখন বারো বছর৷ তরণীসেনের কাছে সংবাদ গেল যুদ্ধে রাক্ষসবাহিনীর পরাজয়ের কথা,লঙ্কার বীরদের আত্মত্যাগের কথা৷ সে তখন রাবণের দরবারে উপস্থিত হয়ে যুদ্ধযাত্রার অনুমতি প্রার্থনা করে৷রাবণ বালক তরণীকে কোনোমতে এই ভয়ংকর যুদ্ধ তে যাওয়ার অনুমতি দিতে চাইলেন না৷ কিন্তু তরণীসেন রাবণকে রাজি করিয়ে যুদ্ধ যাত্রা করেন৷ তরণী ছিল পিতা বিভীষণের মতই ধার্মিক৷সে তার রথের চূড়ায় রামনাম খচিত পতাকায় শোভিত করল৷ নিজের সারা অঙ্গে রাম নাম লিখে নামাবলি গায়ে দিয়ে রথে উঠে বসল ৷ রথ ছুটে চলল যুদ্ধের ময়দানে ৷রাম তাকিয়ে দেখেন রামনাম খচিত ধ্বজাধারী রথের উপর দ্বাদশ বর্ষীয় বালক যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত৷ রাবণের এহেন বিবেচনা দেখে রাম বিস্মিত হলেন৷তার গায়ে রাম নামের নামাবলি জড়ানো৷রাম বিভীষণকে বললেন–ওহে মিত্র বিভীষণ !কে এই বালক?সর্বদা মুখে রাম নাম জপ করছে৷আমি কি করে এর প্রতি বাণ নিক্ষেপ করি৷তখন বিভীষণ তরণীর আসল পরিচয় রামকে বললেন না৷বিভীষণ বললেন এ দূরন্ত রাক্ষস৷হে প্রভু রাম এ রাক্ষসের প্রতি তুমি বৈষ্ণব অস্ত্র নিক্ষেপ কর৷তাহলেই এ রাক্ষসের মৃৃৃত্যু হবে৷তরণীসেনকে লক্ষ্য করে রাম বাণ নিক্ষেপ করলেন৷ তরণী জয় রাম জয় রাম বলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল৷ বিভীষণ তরণীর প্রাণহীন দেহ কোলে তুলে হা পুত্র তরণীসেন বলে কেঁদে উঠলেন৷ রাম বিভিষণকে ভৎসনা করলেন৷এবং তরণীকে আর্শীবাদ করলেন৷তরণী রাক্ষস দেহ পরিত্যাগ করে দিব্যদেহ ধারণ করে বৈকুন্ঠে চলে গেল৷ পূর্ববর্ধমান জেলার দশ বারোটা গ্রাম নিয়ে নবগ্রাম অঞ্চল।এইস্থানে আমাদের জীবন কাটে হাসি কান্নায়, সুখেদুঃখে। গ্রামে থাকলেও আমরা মধ্যবয়সে জাপান গেছিলাম বন্ধুদলের সকলে একত্রে ।শেষ থেকেই শুরু করি গল্পটা। আমাদের ছোটবেলার বন্ধু বিশু একবার জাপান , ঘোরার আবেদন করল বন্ধু কমিটিকে। রমেন বললো, খরচ অনেক। আদৃজা বললো, এক একজনের বিমানে আসা যাওয়া হাজার হাজার টাকার ব্যাপার। বিশু বললো, আমাদের বন্ধুদলের কোঅপরাটিভে অনেক টাকা জমেছে। পাঁচবছর কোথাও যাই নি আমরা। এবার টাকাগুলো একটা দেশ ভ্রমণে খরচ হবে আর বাকিটা দান করা হবে, গরীবদের, ফিরে এসে।বিশুর মুখের উপর আমরা কেউ কথা বলি না। তার কথাই ফাইনাল হলো। আদৃজা, রমেন, বিরাজুল, বিশু ও আমি দমদমে পৌঁছে গেলাম এক শুভদিন দেখে সকালবেলা। অবশ্য আগে থেকে ভ্রমণ সংক্রান্ত ভিসা সমস্যা ও আনুষঙ্গিক আইনি কাজ মিটিয়ে নিয়েছে বিশু। বিশু লাগেজগুলো একসঙ্গে বিমানবন্দরে ট্রলারে চাপিয়ে পৌঁছে গেল ওয়েটিং রুমে। চেকিং পর্ব সেরে আমরা নিশ্রাম নিচ্ছি। হঠাৎ গোপাল ভিন্ডার সঙ্গে দেখা। আমাদের রাজস্থানী বন্ধু। একসাথে আমরা মেসে ভাড়া থাকতাম কলকাতার আমহার্ষ্ট স্ট্রীটে। গলির ভেতরে ভাঙ্গাচোরা, স্যাঁতসেতে এক ভুতুড়ে বাড়িতে আমরা থাকতাম কয়েকজন বন্ধু। গোপাল বললো, ক্যায়সা হো তুমলোগ?
বিশু বললো, বাড়িয়া ভাইয়া। আপলোগ ঠিক হো তো।গোপাল ভিন্ডা, আমাদের সকলকে কফি খাওয়ালো। কফি পানের পরে বিদায়পর্ব। আমাদের বিমান ছাড়ার সময় হয়েছে। গোপাল এখানে কাজ করে। সে সবকিছু ঠিকমত বলে আমাদের অসুবিধা দূর করলো।বিমানে আদৃজা বিশুকে ভিসা সম্পর্কে কিছু তথ্য জানতে চাইলো। বিশু বললো,ভারতীয়দের ভিসা লাগে ইউরোপীয় দেশগুলো ভ্রমণের ক্ষেত্রে। আশা করি সবদেশেরই হয়ত লাগে। ভিসা-মুক্ত বা আগমনের পর ৪৯ টি দেশে ভিসা প্রাপ্তির ভিত্তিতে বৈশ্বিকভাবে ভ্রমণ স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান ভালো। ভারতীয়রা বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে পাড়ি জমায় বিশেষভাবে ইউরোপ-আমেরিকাতে, সেইজন্যে ভারতীয়দের ক্ষেত্রে ইউরোপ-আমেরিকা ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ করা আছে। ৮ আগস্ট ২০১৭ তারিখ থেকে ভারতীয় টুরিস্ট এবং ব্যবসায়ীরা বা চিকিৎসা সেবা নিতে ইচ্ছুক মানুষরা রাশিয়াতে ভিসা ছাড়াই যেতে পারবে। ভারতীয় ভ্রমণকারীদের ভূটান এবং নেপাল ছাড়া অন্য রাষ্ট্রে ভ্রমণকালে অপরিশোধযোগ্য কাজে লিপ্ত হতে হলে একটা ভিসা বা কাজের স্বীকৃতিপত্র নিতে হয়। রাজ্যের বাসিন্দা নয় এমন ভারতীয় নাগরিকদের জন্য এইসব রাজ্যে ভ্রমণকালে ইনার লাইন পারমিট (ILP) নিতে হয়। আইএলপি অনলাইন বা এইসব রাজ্যের বিমানবন্দর সমূহ থেকে সংগ্রহ করা যেতে পারে।বিরাজুল বললো, এত খুঁটিনাটি আমরা জানতে পারি না কেন?
বিশু বললো, জানতে হয় না হলে পিছিয়ে পড়তে হয়।
আমরা জাপানের টোকিও -র চিবা বিমানবন্দরে নেমে একটা গাড়িতে করে খোঁজ নিয়ে চলে এলাম হোটেলে। বিশাল হোটেল তেমনই তার সুব্যবস্থা। রমেন বলল উদীয়মান সূর্যের দেশে আমরা এলাম। এ আমার কল্পনার বাইরে ছিলো। বিরাজুল ও আদৃজা বললো, খুব ঘুরবো কয়েকদিন। আমি বললাম, জাপান দেশের বিবরণ কিছু দিতে পারবি। আসার আগে পড়াশুনা করেছিস কিছু। বিরাজুল বললো, জানি অল্প। তবে বিশু আছে। ও একাই একশ। আমরা সকলে বললাম, তা বটে তা বটে। একদম হককথা কইছে বিরাজুল। বিশু বললো, পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ রাষ্ট্র হল জাপান । এই দেশটি প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে জাপান সাগর, পূর্ব চীন সাগর, চীন, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও রাশিয়ার পূর্ব দিকে উত্তরে ওখোৎস্ক সাগর থেকে দক্ষিণ পূর্ব চীন সাগর ও তাইওয়ান পর্যন্ত প্রসারিত। যে কাঞ্জি অনুসারে জাপানের নামটি এসেছে, সেটির অর্থ “সূর্য উৎস”। জাপানকে প্রায়শই “উদীয়মান সূর্যের দেশ” বলে অভিহিত করা হয়।জাপান একটি যৌগিক আগ্নেয়গিরীয় দ্বীপমালা। এই দ্বীপমালাটি ৬,৮৫২টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। জাপানের বৃহত্তম চারটি দ্বীপ হল হোনশু, হোক্কাইদো, ক্যুশু ও শিকোকু। এই চারটি দ্বীপ জাপানের মোট ভূখণ্ডের ৯৭% এলাকা নিয়ে গঠিত। জাপানের জনসংখ্যা ১২৬ মিলিয়ন। জনসংখ্যার হিসেবে এটি বিশ্বের ১০ম বৃহত্তম রাষ্ট্র। জাপানের রাজধানী টোকিও শহরের জনসংখ্যা প্রায় ৯.১ মিলিয়ন। এই শহরটি অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার ২য় বৃহত্তম মূল শহর। টোকিও ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন রাজ্য নিয়ে গঠিত বৃহত্তর টোকিও অঞ্চলের জনসংখ্যা ৩৫ মিলিয়নেরও বেশি। এটি বিশ্বের বৃহত্তম মহানগরীয় অর্থনীতি।
আমি বললাম, প্রেমেন্দ্র মিত্রের ঘনাদা সাগালিন দ্বীপের কথা বলেছিলেন। মনে আছে তোর বিশু। বিশু বললো, জাপানের সাগালিন এবং ওহোতস্ক সমুদ্র দ্বারা সাখালিনটি ধুয়ে ফেলা হয়, এটি জাপান থেকে লা পেরুজের তলদেশে তাতার তীর দ্বারা মহাদেশ থেকে পৃথক হয়। সাখালিনের মোট এলাকা 76 হাজার বর্গ কিমি। এবং ফর্ম, এটি একটি মাছ অনুরূপ, এশিয়ার তীরে বরাবর প্রসারিত। দ্বীপটির দক্ষিণে, পাহাড়গুলি আয়ত্ত করে, উত্তরের কাছে, তাদের নিম্নভূমি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়, এবং শুধুমাত্র শ্মিট্ট উপদ্বীপে, সাখালিনের চূড়ান্ত উত্তর দিকটি হ’ল পাহাড়ের শিখরগুলি আবার দৃশ্যমান। যেমন একটি জটিল ত্রাণ, পাশাপাশি সমুদ্র এবং সমুদ্রের নিকটবর্তী, উদ্ভিদ এবং প্রাণী বিশ্বের মৌলিকত্ব নির্ধারিত।সাখালিন বৃহত্তম রাশিয়ান দ্বীপ। জাপানীরা এই দ্বীপটি করাফুতোকে উপভোগ করে, যার অর্থ “ঈশ্বরের ভূমি মুখ।” দ্বীপটি 1643 সালে ডাচম্যান দে ভ্রিসের আবিষ্কৃত হয়েছিল। এবং দীর্ঘদিন ধরে, সাখালিনকে উপদ্বীপ বলে মনে করা হয়েছিল। সম্ভাব্য কারণ দ্বীপটি মূল ভূখন্ড থেকে পৃথক হওয়ার স্রোত শীতে ঠান্ডা হয়।জাপানের সাগালিন এবং ওহোতস্ক সমুদ্র দ্বারা সাখালিনটি ধুয়ে ফেলা হয়, এটি জাপান থেকে লা পেরুজের তলদেশে তাতার তীর দ্বারা মহাদেশ থেকে পৃথক হয়।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।