T3 শারদ সংখ্যা ২০২২ || তব অচিন্ত্য রূপ || বিশেষ সংখ্যায় সোমা ধর ঘোষ

ভোর
বিকেল পাঁচটা নাগাদ শরণ্যা বোন সমাপিকাকে
নিয়ে শুশ্রূষা নাসিংহোমের তিনতলার মেটারনিটি ওয়ার্ডে প্রবেশ করল। আজ সকালে
ওদের মাসির দ্বিতীয় কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে।
শরণ্যা দশ নম্বর বেডের কাছে এল।ওদের দেখে মাসি বনানী কেঁদে ফেলল।
শরণ্যা ভুরুকুঁচকে বলল, মাসিমনি তুমি মেয়ে হয়েছে বলে কাঁদছ! এটা দুহাজার কুড়ি সাল!এখন মেয়েরা স্পেসে যাচ্ছে! প্লেন চালাচ্ছে! জাহাজ চালাচ্ছে! যুদ্ধবিমান চালাচ্ছে! এভারেস্টে চড়ছে! কি না করছে বল? আর তুমি মেয়ে হয়েছে বলে কাঁদছ! স্ট্রেঞ্জ! এই আমাকে দ্যাখো না আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছি।চাকরী করে পুরো পরিবারের দায়িত্ব নেব।
বনানী কান্না থামিয়ে বলল, আমি ভেবেছিলাম এবার ছেলে হবে! তোর মেসোর ব্যবসা সামলাবে। তা আর হল না!
—-এই ব্যাপার! কেন মেয়েই ব্যবসা সামলাবে! একজন মেয়ে যদি রাজ্য চালাতে পারে,আর একটা ব্যবসা চলাতে পারবে না!পুরুষতন্ত্রের বস্তাপচা নিয়মগুলো একটু পাল্টাতে হবে মাসিমনি! পুরুষরা যে কাজ ক’রে থাকে এবার থেকে সেই কাজ মেয়েরা করবে।কন্যাভ্রূণ হত্যা আর কন্যা সন্তানকে ডাস্টবিনে ফেলা বন্ধ হবে। লিঙ্গ বৈষম্য হবে দূর!
—-আমি তো এইভাবে ভেবে দেখিনি! তুই চোখ খুলে দিলি।
—-মাসিমনি তোমাদের কলেজের প্রিন্সিপ্যাল ছিলেন একজন মহিলা। মানসিকতা পাল্টাবার সময় এসেছে এবার। মনের মধ্যে সূর্যোদয় হলেই সংস্কারের অন্ধকার দূরে সরে যাবে।
কথোপকথনের মাঝে সিস্টার একটি ফুটফুটে শিশুকন্যাকে বনানীর কোলে দিয়ে গেল।
শরণ্যা শিশুকন্যার দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলল, আমার অংশুমালী! মাসিমনি ওর নাম দিলাম অংশুমালী।
সমাপিকা বলে উঠল, থ্রি চিয়ার্স ফর ওম্যান এমপাওয়ারমেন্ট!
নার্সিংহোমের জানালা দিয়ে সিঁদুররঙা সূর্য দেখা যাচ্ছে। সাতরঙের বর্ণালী ধরে সাতটি ঘোড়া নেমে আসছে মাটিতে।