কবিতায় স্বর্ণযুগে শিশির দাশগুপ্ত (গুচ্ছ কবিতা)

১| প্রলাপ

শ্বাস কমে এলে তুমি চিনে যাবে রঙ
দৃষ্টিহীনতায় বাড়ে যেমন প্রকৃত আন্দাজ
আসমানী রঙে যদি বুকে আঁকো ছবি
খোঁজো বন্ধু, তালাশ করো আকাশের চাবি
শ্বাস কমে এলে দেখো প্রস্তুতি সারে কারা?
দৃষ্টিহীন হলে অন্ধকারে ফুটে ওঠে তারা
এক,দুই,তিন ক্রমশঃ বাড়ে শহরের তাপ
জমির তলায় বাড়ে সহস্র উত্তাপ
শ্বাস কমে এলে, পা দুটি স্মৃতিপথে চলে
নজর কমে গেলে ধারণা প্রায়শই মেলে
শহরের ধোঁয়া হ্রাস পেলে হাল্কা হয় বুক
নেশা কেটে গেলে ফিরে আসে পুরানো অসুখ।

২| টারগেট

নিশানা ঠিক রেখে বাজী ধরে মন
শিয়রে স্বপ্নেরা গিজ্গিজ্ অনুক্ষণ
লকগেটে তখনো হিসেব, জল ছুঁইছুঁই
পাতালের উপদেশে, মাথা পেতে শুই
অথবা আন্দাজ করি সেকেন্ড, মিনিট ধরে
মন চড়ে রকেটে, চকিতে নিশানাও ছোটে
বেঁচে যায় বিমান, বেঁচে যায় জাহাজ,বেহিসাবি দরে
টাকা বাঁচে,বাঁচে দল, বাকি সব মরে হরেদরে।

৩| আগুন

ছুঁতে না ছুঁতেই হও বিদ্যুৎ অথবা
পোড়াও সমস্ত পাগড়ী
একটু সময় পরে, আবছায়া কেটে গেলে
থমথমে ভিজে ভিজে কালো রঙে মাটি হয়ে যেয়ে চাও জলে
ভয়ে ভয়ে শোকে দুখে ক’টা দিন মুখ বুজে
নিরামিষে সারি পূজা, তুমি অতিথি
হারানো গতি নিয়ে বাকবিতন্ডা শেষে
নরম ঘাসের নিচে লুকাতে লুকাতে ভাবি
আগুন সত্যিই হাঁটে বড় হেলেদুলে।

৪| একা একা

কোলাহল থেকে দূরে সরে আসি,খুঁজি
চমৎকার থাকার উপায়
হইহই চইচই থেকে শরীর ছুটি নেয়,
অবকাশে যায় মন, যায় দৃষ্টিসকল
সময়ের পান্ডুলিপি সাক্ষাতে হাসিমুখে কথা বলে ঝর্ণাজলের মতো
সূর্যের আহ্লাদে মেতে ওঠে মন, তার কূলে অপেক্ষায় শরীর
আঁচড়ের দাগ অক্ষত থাকে, আমি তবু হেঁটে চলি
অন্ধ যেভাবে চলে, যেভাবে বাঁক নেয় বাঁকে।

৫| পদচিহ্ন

ধীরলয়ে হেঁটে যায়, ঘুরেফিরে বেড়ায় দাপুটে ঈশ্বর ;
বাউলের আখড়ায় শব্দস্রোত
একতারায় গৃহীত হয়
শীতের তারাসকল ত্রাস ছড়ায়, লুকাতে লুকাতে
বরফ শরীর হয়ে, মাথায় জড়ো হয়
ভাবি শান্ত হলে, আলাপিত হবো, তাকাবো
গ্লাস তুলে দেবো আকাঙখিত ঠোঁটে
বাউল শরীর দোলালে, রসগাঁথায় তুড়ি মেশালে,
ঝড় ওঠে উপকূলে
তারাসকল ঝরে পড়ে টুপটাপ, টুপটাপ
কাচের গুড়োতে লাল রঙ্, তিক্ত ঠোঁট
আরো আছে, আরো থাকে, মৃত ঈশ্বরের পায়ের ছাপ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।