ক্যাফে ধারাবাহিক গল্পে সুবল দত্ত (পর্ব – ৪)

হন্যতে

ব্যাটারিচালিত করাত দিয়ে দশ মিনিটেই কাজ শেষ করে ফেলল। বডি বরফ সাদা হয়ে আছে। একটুও রক্ত বেরোয় নি। খুব শক্ত কালো পলিথিন প্যাকে ভরে ফেলল সে। সেটা আর একটা ব্যাগে ভরে কাঁধে ঝুলিয়ে নিলো। ফ্রিজে তালায় চাবি দিতে গিয়ে সেটা ছিটকে পড়ে গেল মেঝেতে। উল্লাস অনেকক্ষণ ধরে মোবাইল টর্চ জ্বালিয়ে খুঁজেলো কিন্তু কোথাও পেলনা। কিন্তু আর দেরি করা যাবে না। খোলা তালা ফ্রিজের ঢাকনায় ওমনি ঝুলিয়ে দেয় সে। রাত শেষ হতে দেরি নেই। জানোয়ারগুলো ক্ষুধার্ত হয়ে আছে। প্রায় দুবছর ধরে ওরা নরমাংস ভোজী হয়ে আছে। আর একটা। তারপর এই তল্লাট ছেড়ে চলে যাবে উল্লাস। এই শেষেরটা একেবারেই আলুভাতে। যা বলা হয় ও তাই করে। কোনো প্রতিবাদ নেই। বুদ্ধি কম। আর ও কত আনন্দ দেয়? রক্তের আনন্দ। রক্তের স্রোতে যৌনমিলন। আহা! ভাবা যায়না। ওকে খুব ভাল লেগেছে। তবে বেশিদিন খেলা যাবে কী? পাঁচ পেরলেই জে স্বর্গ অপেক্ষায়? স্বর্গ এবার তো তার হাতের মুঠোয়। এখন তো রোজই স্বপ্নে স্বর্গ আসে। স্বর্গের অপ্সরা রোজ তার সাথে স্বপ্নে কথা বলে।

এইসব ভাবতে ভাবতে উল্লাস ঘর ছেড়ে জঙ্গলে বড় শিরীষগাছের নিচে দাঁড়ায়।

সিঁথির সিঁদুরে চপার

ঘুম থেকে উঠতে আজও অনেক বেলা হয়ে গেল উত্পলার। রোজই ওঠার সময় মাথা ভার হয়ে থাকে। রুমের দরজা খোলা। বিছানার কাছে টেবিলে রাখা ব্রেড কাটলেট কফি জাগ আর ডিমসেদ্ধ। উল্লাস এইসব খুব যত্ন করে রেখে দিয়ে নিজের টেবিলে বসে কাজ করছে। উঠতে গিয়ে মাথা ঘুরে বসে পড়ল উত্‍পলা।আবার একটু শুয়ে পড়ল।পেটের নিচে অসাড় ভাব।ডায়াপার চেঞ্জ করতে হবে।কাল রাতে একটু বেশিই ব্লিডিং হয়েছে। উল্লাসকে বারণ করা যাচ্ছে না। কিন্তু এতো অমায়িক ভদ্র সুন্দর ছেলেটা রমণে এমন অসুরের মতো আচরণ করে কেন? অবশ্য উত্পলার কিছু করার নেই। বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে হাতে মাত্র কটা দিন। শমন এগিয়ে আসছে কাছে।

গ্র্য়াজুয়েশন শেষ হওয়ার মাত্র ছয়মাস বাকি, তখন একবার বাড়ি এসেছিল উত্‍পলা। এমনিতেই পড়াশোনা তখনও অবৈতনিক। থাকাখাওয়া টিউশনিতে ম্যানেজ হয়ে যেত। তাতেও তার প্রতি ঘরের লোকের কেন যে বিরূপ ভাব ভেবে পাচ্ছিল না। একদিন হঠাত্‍ খাবার খেতে গিয়ে বমি করে ফেলল। শুধু সে দিন নয়, পরপর তিনদিন। তলপেটে অসাড় ভাব। ডাক্তারের কাছে যেতেই সে প্রেগন্যাণ্ট ঘোষণা করে দিল। কোনো পুরুষের সাথে সহবাস না করেই কি করে এটা সম্ভব? কিন্তু ঘরের কেউই বুঝলোনা। গালিগালাজ ঘৃণা। শেষে একসময় উত্‍পলা আত্মহত্যার কথা ভেবে নিয়েছিল। এসময় ভাগ্যের চাকা এমন ঘুরে গেল, বি এস সি আইটির রেজাল্ট বেরনোর দুদিন পরই বম্বের এই চাকরিতে এপয়েণ্টমেন্ট। সেখানে যাবার একসপ্তাহের মধ্যেই এক সরকারি হাসপাতালের মহিলা ডাক্তার তাকে এত ভালবেসে ফেলল যে সঙ্গে সঙ্গে ট্রিটমেন্ট শুরু করে দিল। কিন্তু উত্পলার যা নিয়তি। সবরকম টেস্ট হওয়ার পর ডাক্তার বলে দিল তোমার পেটে একটা খুব খারাপ টিউমার বাড়ছে। রোগ ছড়িয়ে পড়ার মুখে। এটা অপারেশন করলে তুমি বাঁচবে না। এটা পেটে থাকলে বেশ কিছুদিন বেঁচে থাকতে পার। একটু কম বেশি ব্লিডিং সহ্য করে নাও।ওষুধ দিচ্ছি। আনন্দে থাকো। আর কোনও উপায় নেই। তুমি যখন তখন আমার কাছে আসতে পারো।

ঠিক সেই সময় উল্লাসের সাথে পরিচয়।অসম্ভব ট্যারা চোখের কুরূপা উত্‍পলা ভাবতেই পারেনি একটা সুদর্শন সুশীল যুবক তাকে একসাথে বাস করার অফার দেবে। তবে এখানে এসে একটা জিনিসই ওকে খুব ভাবায়। রোজ রাতে খাবার টেবিলে বসে স্ম্যাক নেওয়া। ধোঁয়ায় ভরে যায় ছোট্ট ডাইনিং রুম। অবশ্য এই ক দিন উত্‍পলাও প্রাণভরে ওই ধোঁয়া টানে। উত্‍পলা বইয়ে পড়েছে তার পেটে যে অমানুষিক যন্ত্রনা থেকে থেকে উঠছে তার উপশমের জন্য এই ড্র্যাগসের ধোঁয়া মহৌষধ। কিন্তু এই ধোঁয়া তাকে প্রায় অচৈতন্য করে দেয়। খাবার টেবিলেই সে টলে পড়ে। উল্লাস তাকে বিছানায় নিয়ে যায়,যা করবার তা করে, তারপর এই সকাল। ব্রেকফাস্ট এর পর থেকে দুপুর দুটো অব্দি কাজ। কখনো কখনো উল্লাস আসে একটু খুনসুটি করে। তারপর দুপুরের খাওয়াদাওয়ার পর উল্লাস অফিস চলে যায়। যাবার আগে মেন গেটে তালা মেরে যায়। উত্‍পলা ঘরবন্দী একা। কিন্তু একটা কথা উল্লাস জানেনা। ছাদে ওঠার জন্য মরচে পড়া অব্যবর্হিত লোহার গেটে মরচে ধরা তালা উত্‍পলা খুলতে পেরেছে। এবং রোজ উল্লাস বেরিয়ে যাবার পর সে ছাদে ওঠে।নামার পর তালা তেমনি ভাবে লটকে দেয়।

ক্রমশঃ

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।