সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সায়ন (পর্ব – ৮)

অমৃতায়ণ

পারিজাত এর মনের অবস্থাটা এমনভাবে পাল্টে যাবে ও কোনদিন ভাবেই নি। সম্পর্কের দিক থেকে ওর সঙ্গে আমার নেই নেই করে দশ বছর হয়ে গেল। বর্ণিত বিষয়, ঘটনা, বাস্তব কিংবা তাৎক্ষণিক মানসিক প্রতিফলন আমি সবটাই ওর সঙ্গে আলোচনা করেছি আজ-অবদি। আর অমৃতার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে অ-শরীরী পদ্ধতিতে । আরেহহ, ভয় পাবেন না – সাক্ষাৎ আমাদের বেশি হতো না তাই। আজ সব আমরা হাঁটতে হাঁটতে পিছন দিকে যেতে থাকবো, দেয়াল জুরে এখন অনেক সময়লেখা তৈরি হবে, অমৃতার হাতের ছোঁয়ায় কোনও দেওয়াল অপরিষ্কার নেই, এবং কোনও ছবি কিংবা পটচিত্র সাজানোর ইচ্ছে আমাদের হয় নি, তবে বিছানার ঠিক সামনে একটা ছবি আমার আর ওর – ব্যস।
আজ পরিজাত প্রথমবার আমাদের বাড়িতে এলো, মানে এই নির্জন আবাসে – আর আজ শুধু আমার ফরাসী নির্জন কবি পীযে়র রেভার্দির মুখটা দেখতে পাচ্ছি – যে মুখ আজ বসে আছে পারিজাতের মুখের উপর …..সেই মুখ যা ১৯২৭ সালে বিপ্লবীদের সঙ্গ ছেড়ে চলে যাওয়া পীযে়র বুকে গেঁথে নিলেন ক্যাথলিক ধর্ম, অন্তরীণ ও অন্তহীন এক লকডাউন হয়ে গেলেন খ্রিষ্টান মঠে – ১৯৬০ সালে পাওয়া গেল তার দেহ কতগুলো ভাষা হয়ে হারিয়ে গেছে পাতার মধ্যে।মানুষ তাহলে পাতা হয়ে যাওয়ার আগে এমন হয় , তার মুখে ঝোলে সুতোর মতো চূড়ান্ত জীবনের কটা লাইন –
– কিছুই থাকে না
বন্ধুরা সব মৃত
স্ত্রীলোকেরা তবু নিজের গরজে তাদের গরজে দেখতে যায়
তুমি এসেছো এ খেলায় একটি অশুভ চিহ্ন নিয়ে
অমৃতা শুনচ্ছে। আসলে অমৃতা সেই প্রথম দিন থেকেই শোনে। শুধু কয়েক টুকরো শব্দছিন্ন তুলে নিলো – তুমি এ খেলায়…… এসেছো …… একটি …..অ…শু..ভো চিহ্ন নিয়ে!
পারিজাত বললো – আমি? অশুভ! ….তবে এই লাইনগুলো আমার অনেকদিন আগের শোনা…
অমৃতার মুখে সন্ধ্যারাতের হাসি – তুমি না, মুহূর্ত , সময় । আমাদের এটা কিন্তু বাড়ি নয় শুধু !
– বাড়ি নয় মানে ! তাহ-
শেষ করতে না দিয়েই পাশে বসে ওর কাঁধে হাত রেখে বলাম – লাইনগুলো রেভার্দির , অনুবাদ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়! কলেজ ক্যন্টিন, একটা লাল খাতা , সামনে দুটো বই … একটা ছেলে এসে বসলো –
– ও হ্যাঁ আমিই তো
কানের মধ্যে হাত দিলাম, কেঁপে উঠলো পারিজাত , – মনে পড়ে একটা হান্স ইউরিখ ট্রিখেইলের কথা ।
– কে !!! সে কে ?
– সেই যে কন্টিন এ রাখা পাশের বই , খাতায় প্রতিটা শব্দ উঠে আসছিল – ” What struck Proffesor Keller about foundling 2307 in particular was the ” pronounced inward curvature of the helix.” He further noted ” the lack of protrusion of the helix in the region of the upper curve of the ears,” which depressed my parents , although they took it in without saying anything.
পারিজাত একমনে বলতে থাকে – এর পর সুলগ্না এলো, ঝুকে পড়ে হাতের লেখাটা দেখছিল, বলল – “এই সব লাইন লিখে কি করবি?” এর মানেও তো খুব জটিল, সেদিনটা ছিল ২০১০ সালের শেষ দিন, বাইরের বিকেল জুরে ছিল এক অজানা কালো ছায়ার মেঘ – শুধু এইটুকু মনে আছে , তুই দেখলি বোবার মতো টানা তিন মিনিট – চোখ বন্ধ করলি – আর বললি
– ঠিক দশ বছর পর একটা ঘটনা ঘটতে চলেছে, তার জন্য এই লেখার টুকরোগুলো তৈরি করছি। উপন্যাসটার নাম ছিল – Lost ।
হঠাৎ অমৃতা বলে উঠলো – আজ কত তারিখ গো?
– ৩১শে ডিসেম্বর, ২০২০
পারিজাত – কি ! মানে আজ বছরের শেষ দিন , মানে দশ বছর পেরিয়ে গেলো, ঘড়ির দিকে তাকায়, মাত্র তিন মিনিট বাকি বছর শেষ হতে!
আমি – এবং আজই চিঠিটা এলো, অর্থাৎ ঘটনা শুরু হবে আজ থেকেই। অমৃতা চিঠিটা দাও, আর আমার খাতাটা বার করো, ওহো আজ সারাদিন আমরা তো কিছুই খাই নি গো
– হ্যাঁ তাই তো রে…..
বুঝতেই পারি কখন অমৃতা আমাদের সামনে এক প্লেট কেক হাতে দাঁড়িয়ে, শুভেচ্ছা জানালো :
Happy New Year 2021
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।