সম্পাদকীয়
অগোচরে বহমানা স্রোত
“চক্রবৎ পরিবর্তন্তে দুঃখানি চ সুখানি চ” এই কথাটিকে আপ্ত বাক্য ধরেই চলি আমরা। আমাদের মতো মানুষের কাছে সুখটা কখন আসে ঠিক বুঝতে পারি না, হয়তো আসে, ক্ষণিকের অতিথি হয়, আবার দুঃখ তার স্থান নেয়, আর আমরা হাপিত্যেশ করে বসে থাকি নেক্সট রাউন্ড সুখের আশায়। কর্মসূত্রে শিলচরে থাকাকালীন একজন কৃষকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। একথা সেকথার পর একটা খুব দামী কথা শুনলাম। উনি বললেন, “মানুষের দুটি মেয়ে সুখ ও দুঃখ, আমরা যখন সুখকে নিয়ে থাকি, তখন দুঃখ চারিদিকে ঘুরে বেড়ায়, আর যখন দুঃখকে নিয়ে থাকি তখন সুখ চারপাশে ঘোরে।” তাঁর এই উপলব্ধি যে কতটা সত্যি তা হয়তো আমরা সবাই মানবো। হঠাৎ মনে হলো পৃথিবীতে ভালো মানুষদের সাথে শুধু খারাপ হয় কেন? ওদিকে খারাপেরা তাদের অশুভ কর্মের ফল তো ভোগ করে না। তখন মনে হলো ভালো-মন্দ পৃথিবীর অনেকগুলি আপেক্ষিক বিষয়ের একটি। তাই ভালো মানুষের আশেপাশে যারা থাকছে, তারা সেই ভালো মানুষ অপেক্ষা কম ভালো। তাই তাদের তরফ থেকে শুধু খারাপ ব্যবহারই পাওয়া যায়। ওদিকে যে খারাপ, তার আশেপাশের মানুষেরা তার অপেক্ষা ভালো। তাই সেই খারাপ মানুষটি সবসময় অপেক্ষাকৃত ভালো মানুষ পরিবৃত থাকে। তবে ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখের এই আপেক্ষিক বিষয়টি রয়েছে বলেই কিন্তু ভালো থেকে মন্দ হওয়া বা মন্দ থেকে ভালো হওয়ার স্রোত কাজ করে। সুখ পেতে পেতে দুঃখ আসে, দুঃখী সুখের সন্ধান করে। আর তাই তো পৃথিবীটা চলে। যেমন উষ্ণতা ও শীতলতার আপেক্ষিক তারতম্যহেতু পৃথিবীতে সমুদ্রস্রোত, বায়ুপ্রবাহ কার্যকর। তীব্র গতিতে ঘুরে চলা অথচ আপাতভাবে স্থির দেখা এই পৃথিবীটা এভাবেই এগিয়ে চলেছে উন্নতির শীর্ষে… নাকি উন্নতির আড়ালে ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে? আসলে পুরোটাই সেই আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ।
সায়ন্তন ধর