সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী (পর্ব – ২)

“হস্তে গৃহীত্বা সহরামমচ্যুতং/নীত্বা স্ববাটং কৃতবত্যথোদয়ম // “শ্রীমদ্ভাগবতম // ২০ // (ঐশ্বর্যচূড়ামণি শ্রীকৃষ্ণও মা যশোদার মমতার অধীনে সামান্য শিশুমাত্র। মায়ের মমতা সর্ববশবর্তিনী)

সকাল সকাল কিছু না খেয়েই কলেজে বেরিয়ে পড়ল কৃষ্ণেন্দু। দেখেও না দেখার ভান করতে করতে সেই দৃশ্য দেখে ফেলল অলোকানন্দা। না দেখে উপায় কি। সারারাত ঘুম আসেনি তার। সরু রাস্তা ধরে ব্যাগ হাতে ছেলেটা হেঁটে যাচ্ছে। দু পাশে আকাশমণিগাছের সারি। দুই একটি সিপাহি শালিক অলোকানন্দার বুকের ভিতরের শূন্যতাকে নাড়িয়ে দিয়েই যেন চলে গেল। ভিতর থেকে অরিন্দমের মায়ের গোঙানির শব্দ ভেসে আসছে। সকালে গুমুত পরিষ্কার করতে হবে। তারপর নল দিয়ে লিকুইড খাবার। ভোর ভোর মুরগিদের পোলট্রিখানার উপর থেকে তেরপল সরিয়ে এসেছে সে। কলপাড়ে বাসনকোসন রয়েছে সামান্য। আর আছে রান্নাবাটি। দুটি মানুষ আজ। ছেলেটা তো অভিমান করে চলে গেল। কী হবে রান্না করে? ডাল সিদ্ধ আর গলা ভাত। ব্যাস।
অরিন্দম চলে গেছে আজ তিন বছর হয়ে গেল। কী হয়েছিল কে জানে? কেউ বলে ব্রেনস্ট্রোক। কেউ বলে মেরে দিয়েছে। কে মেরে দিল? কে জানে। বাসনে কয়লার গুল আর তার ঘসতে ঘসতে অলোকানন্দা ভাবে। শত্তুরের তো অভাব নেই গ্রামে। চার বিঘে জমি। অরিন্দম আর অলোক। দুই ভাই। ছোটভাইটাও তো গতবছর চলে গেল বিষ খেয়ে। এতো বিষ চারিদিকে। কেন বিষ খেল দেওর। সে তো নিপাট ভালোমানুষ । সাত চড়ে রা কাটে না। আলাদাই থাকত। কলকাতার দিকে। লোকে বলে খায়নি। খাইয়েছে। বৌ টা তেমন ভালো ছিল না নাকি ।হোটেলে গান করত শুনেছে সে। ভালোবাসাবাসি করে বিয়ে। অনেক পরপুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল নাকি। অলোক মরতেই এক মারোয়ারি ব্যবসাদারকে ধরে সিঙ্গাপুর চলে গেছে। একসঙ্গে একঘরে থাকে লোকটার সঙ্গে। বিয়ে করেনি। এমনি এমনিই থাকে। ভাবা যায়। এমনটা হয় বুঝি? ভাবতে ভাবতেই ভিতরে ভিতরে শিউরে ওঠে অলোকানন্দা। অরিন্দম ছাড়া আর কোনও পরপুরুষের কথা ভাবলেই কেমন যেন হয় তার মনের ভিতর। অথচ তান বছর অরিন্দম নেই। যখন ছিল, তখনও তো আসত দুই বছরে একবার। অলোকানন্দার তাতে মনেমনে কষ্ট হলেও বুঝতে পারত না। কৃষ্ণেন্দুকে পড়ার সময় গরম জল করে দেওয়া, কৃষ্ণেন্দুকে ঘুমোবার সময় বালিশ এগিয়ে দেওয়া, কৃষ্ণেন্দুকে আঁকার কাগজ গুছিয়ে দেওয়া। তখন সারাটা দিন শুধু কৃষ্ণেন্দু আর কৃষ্ণেন্দু। অলোকানন্দার জীবনে তখন বরং অরিন্দমই দ্বিতীয় পুরুষ। একটিবার মাত্র বৌকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি এসেছিল অলোক। কী যেন নাম মেয়েটার। মোনালিসা না কীই যেন। টানাটানা হরিণের মতো পটলচেড়া চোখ। মিষ্টি স্নিগ্ধ হাসি। অলোকানন্দাকে ঘরের কাজে সেদিন হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল নির্দ্বিধায়। আর সন্ধ্যায় গান শুনিয়েছিল। আহা। ভারি মিষ্টি গলা মেয়েটার। শুনলে মন জুড়িয়ে যায়। ও গান শুনলে বিশ্বাস হতে চায় না এই মেয়ে কারোকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলতে পারে!
শাশুড়িকে টিউবে ডালসিদ্ধ আর ওষুধ খাইয়ে অলোকানন্দা ভিতরের ঘরে কাঁথা সেলাইয়ের বাকি থাকা কাজটা সেরে নিচ্ছিল। ছুঁচ ফুটে যাচ্ছে আঙুলে বারবার। অসাবধানতায়? নাকি চোখের আলো কমে আসছে তার? হাসপাতালে গিয়ে একবার চোখটা দেখিয়ে এলে হয়। কিন্তু অরিন্দমের মাকে ঘরে একা ফেলে অলোকানন্দা যাবে কী করে? কৃষ্ণেন্দু এখন বড় হয়ে গেছে। তার কি আর সময় আছে! মুখ ভার করে এক বুক অভিমান নিয়ে অলোকানন্দা কাঁথা বুনে চলে।
বেলার দিকে সুকুমারী মাসি এল। গতরাতে তার নাইটডিউটি ছিল। আজ তাই ‘ডে অফ’।অলোকানন্দাকে দেখে সেও বুঝতে পারে যে তার মন ভালো নেই।
-কী হয়েছে বল দিকিনি?
-কিছু না।
-কিছু তো একটা হয়েছে।আমাকে ফাঁকি দিতে পারবিনি। আমি রোজ এতোগুলো বাচ্চা দেখছি। ছেলে কিছু বলেছে।
-না।
-তাহলে? খাসনি সারাদিন। তাইতো?
অলোকানন্দা চুপ করে রইল। সে সারাদিন যে একমুঠো অন্নও মুখে দেয়নি, একথা অক্ষরে অক্ষরে সত্যি।
-ছেলে না খেয়ে গেলে মা কি খেতে পারে দিদি?
-খায়নি কেন? মা বেটায় খুব ঝগড়া করেছিস বুঝি?
কাঁথা দেখতে লাগল সুকুমারী।
-কী সেলাই করেছিস দেখি!
কাঁথা উল্টে পাল্টে দেখতে থাকে সুকুমারী। ছোট্ট শ্রীকৃষ্ণর হাঁমুখের দিকে তাকিয়ে মা যশোদা আশ্চর্যচকিত হয়ে গেছেন। সারা বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড জগত সংসার, সবকিছুই যে এই ছোট্ট শিশুর মুখের ভিতর!
-ভারি সুন্দর আঁকিস তুই। তোর থেকে তোর ছেলেটা অমন সুন্দর আঁকার হাত পেয়েছে।
অলোকানন্দা বলে না কিছু। গোকুলঘরিয়া গ্রামের ভিতর এমন অমরাবতীর মতো নাম রাখল কে তার! দাদু বোধহয়। মা তো ছিল না। বাপ মরে যাবার আগে গল্প করত। দাদু পদাবলী লিখত। ওপার বাংলায় সুনাম ছিল অনেক। একটিবার তাকে দেখেছিলেন। দেখেই যেন দেবপ্রয়াগের মতো অশ্রু বর্ষিত হলো তার মনের ভিতর। বাপ বলেছিল। এ নাম তারই রাখা।
-কিছু বললি নে যে বড়।
-ছাড়ো দিদি ওসব কথা। একটা কথা কও দিকি। এই কাঁথা বেচে একটা ফোন কিনতে পারব আমি?
সুকুমারী মুচকি হাসে।
-কেন রে?নাগর ধরলি বুঝি?
অলোকানন্দা কথা বলল না।রঙ্গরসিকতা করবার সময় তার নেই। সুকুমারী সে কথা বুঝতে পারল।
-কাঁথা তো এতো সুন্দর নকশা করে বুনিস। কিন্তু দেখে কয় জনা? বড়বাবুদের বাচ্চার গুমুত মুছে ফেলে দেয়। কলকাতার পার্টি ধরলে একটু লাভ বেশি ছিল। কিন্তু সেখানে মেড়োরা সেঁধিয়ে বসে আছে। তবু কিস্তিতে দিলে হয়ে যাবে। অতো ডেজাইন করিস নে। কেউ দেখবেনি। রান মেরে ছেড়ে দিবি।
-না দেখুক।
অলোকানন্দার চোখ দিয়ে টপটপ জল গড়িয়ে পড়ল কাঁথার উপর। সুকুমারী এবার তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।তারপর বুকের ওমের ওপর অলোকানন্দাকে টেনে আনে। অলোকানন্দা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। সুকুমারী দেখে তার চোখও টলমল করছে উজান জলে।
-কী হয়েছে বলবি আমায়?এতো অভিমান কার উপর?
-ছেলে আমার বড় হচ্ছে গো। ওর নাম কৃষ্ণেন্দু রেখিছি। তখন কি জানতাম একদিন কৃষ্ণ গোকুল ছেড়ে চলে গেলে একা আমি কী নিয়ে থাকব!
-কে বলল ও চলে যাবে? আগে থেকে সব ভেবে নেতে হয় সব!
-আমি জানি।
-হ্যাঁ। তুই সব জানিস।
মনে মনে ভাবে সুকুমারী। মেয়েটার ভিতর আকুল ভাব। মাহারা বরমরা মেয়ে। অদ্বৈত গোঁসাইয়ের আশ্রমে ওকে একবার নিয়ে গেলে বেশ হতো। ওখানে গেলেই যেন সব শান্ত হয়ে আসে ভিতর ভিতর। যখন সুর করে করে গোঁসাইঠাকুর গেয়ে যায়। আহা। কী গলা। শচীমাতার সঙ্গত। “সই,পিরিতি বিষম মানি।সুরের লাগিয়া পিরিতি করিনু শ্যাম বঁধুয়ার সনে।পরিণামে তত দুখ হবে কোন অভাগিনী জানে।।”অলোকানন্দাকে সান্ত্বনা দিতে দিতে সুকুমারী ভাবছিল।জড়জগতে মা যশোদার মতো শক্তিধর আর কে আছে?তার শক্তি তার মমতায়। মমতার বন্ধন বড় বিষম বন্ধন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণও যে তার বশবর্তী না হয়ে পারেন না। ভাবতে ভাবতেই হু হু করে ওঠে তার বুকের ভিতর।এই মেয়ে খুব চাপা স্বভাবের।তবু এই মেয়ের ভয়ের কারণ সে অনুভব করতে পারে। কী করছে আজ তার ছেলেটা কে জানে?কোথায় আছে?কী করছে?আছে তো?আছে হয়তো!

কাঁথা নিয়ে চলে যেতে যেতে সুকুমারী বলে,”ছেলে তোর কোথাও যাবে না রে।”
-একটা কথা বলবে সুকুমারীদি?
-বল না।
-তুমি নতুন গেরাম গেছ?
সুকুমারী খানিক ভেবে বলে।
-গেছি দু এক বার। একটা পার্টি ড্রেসিং করাত। কেন বল দিকি?
-না। ওখানে রেশন ডিলার। সনাতন কী যেন। কেমন লোক। বলতে পারো?খোঁজ নেবে?
-বেশ নেব। এখন খেয়ে নে। তোর ছেলেকে আমি বকে দেব। হয়েছে?

সুকুমারীর সঙ্গে কথা বলে খানিক হাল্কা লাগছিল অলোকানন্দার।অলোকানন্দা সুকুমারীর মনের কষ্টর কথা জানে। সুকুমারীর একটা ছেলে ছিল। তার বর আগেই তাকে আর ছেলেকে থুইয়ে অন্য মেয়েমানুষের সঙ্গে চলে গিয়েছে। ছেলেটাকে বড় করবে, মানুষ করবে, অফিসার বানাবে। অনেক আশা ছিল তার। সেই আশাতেই গ্রামে রাখবে না বলে শহরের এক মিশনে রেখে পড়াশোনা করাতো সুকুমারী। মিশন পড়ালেখা খাওয়াপড়ার খরচ দিত। আর বাকি টুকটাক সুকুমারী দিত আয়ামাসির কাজ করে। কিন্তু সকলের কপালে যে সুখ লেখা থাকে না। সুকুমারীর কপালেও সে লিখন ছিল না। একদিন শহর থেকে ফোন এল তার মোবাইলে। তার ছেলে নিখোঁজ। পালিয়ে গেছে। বাপহারা পনেরো বছরের একটা ছেলে। কোথায় পালিয়ে যাবে! থানাপুলিশে লাভ হল না। নেতা ধরেও কিছু হিল্লে হলো না। অনেক ঘুরবার পর সুকুমারী হাল ছেড়ে দিল। অলোকানন্দার এইসব কথা মনে এলেই বুক দুড়দুড় করে। এমন ঘটনা তার সঙ্গে ঘটলে! কীই হতো! সে তো মরেই যেত। শ পাঁচেক টাকা দিয়ে গেছে আজ। সে টাকা দেরাজে রাখতে রাখতে আড়চোখে সে দেখতে পায়, বিছানার উপর কৃষ্ণেন্দুর দেওয়া মোবাইল ফোনটা অবহেলায় পড়ে আছে। দেখামাত্র মন কেঁদে ওঠে ভিতর ভিতর। আহা। এতো অল্প কারণে বড় কঠোর হয়েছে সে ছেলেটার উপর। অতোটা ঠিক হয়নিকো। আজ ফিরুক। পায়েস বানাবে সে। কনকচূড় চাল আনবে বদরির দোকান থেকে। ছেলেটা কতোদিন আশ ভরে খায়নি। যাবার সময় সুকুমারী বলে গেছে।কে জানে আজ জীইয়ে থাকলে তার ছেলেও হয়তো কৃষ্ণেন্দুর বয়সীই হতো। সুকুমারী বলেছে তাকে।
-উঠতি বয়সের ছেলেকে বেশি বকিসনি বাপু।
অলোকানন্দা মাথা নেড়েছে শুধু। মোবাইলের বা সহেলীর কথা কিছুই বলেনি। মা বেটার কথা। যতোই হোক সুকুমারী। সে তার ভিতর ঢুকবেনি।

মুরগিদের খাবার দিইয়ে বিকেলে এক গ্লাস জল খেয়ে তক্তপোশে শুয়ে পড়ল অলোকানন্দা। দূর থেকে ভেসে আসছে হরিনাম। তিনদিনের অনবরত সংকীর্তনের শেষ দিনে যেন কথকও ক্লান্ত। সুকুমারী একদিন কথায় কথায় তাকে বলছিল কৃষ্ণেন্দুর জগতকে চিনতে। যে ছোট্ট গোপালকে সে তিলতিল করে এতো বড় করে তুলেছে সে, তাকে আবার নতুন করে চিনতে কেমন ভিতরভিতর ভয় লাগে অলোকানন্দার। অদ্বৈত গোঁসাইয়ের বলা এই কথাকাহিনী সে প্রথম শুনেছে সুকুমারীর মুখে।একদিন মা যশোদা কৃষ্ণর মুখের ভিতর ব্রহ্মাণ্ড দেখে মূর্ছা গিয়েছিলেন।সেকথা সে কাঁথায় সেলাই করেছে তার নিজের মতো করে। এখন মাঝেমাঝে ভয় হয়।সেও যদি অমন মূর্ছা যায়!সে তো আর মা যশোদারাণী নয়।
এইসব ভাবতে ভাবতে অলোকানন্দা উঠে পড়ল। পাশের ঘর থেকে শাশুড়ি মায়ের বুকের ভিতর থেকে সাঁইসাঁই শব্দ আসছে। বসিয়ে দিতে হবে খাটে। বালিশ গোজ করে আধবসা করিয়ে তার মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে দিল অলোকানন্দা। আহা। দুই ছেলে এভাবে চলে গেল। এই দুঃখ তাদের অভাগা মা সইবে কীকরে? কথা বন্ধ হয়েছে আগেই। কিন্তু দুই চোখের কোণা দিয়ে চোখের জল পড়া বন্ধ হয়নি। সেই জল গোকুলঘরিয়ার উত্তর সীমানায় বয়ে যাওয়া শুকনো ময়নাসোঁতার মতো। তার চলন নিস্তব্ধ। কিন্তু তার সেই চলনকে উপেক্ষা করা যায় না কিছুতেই। মাকে বসিয়ে কি মনে হল অলোকানন্দার। মোবাইলটা ওভাবে খোলা ফেলে আসা ঠিক নয়।হাজার হোক কষ্টর পয়সায় কেনা।জীবনের প্রথম কামাই। আশপাশে চোর ছ্যাচোড়ের কমতি নেই। পাশেই ঘন বাঁশবন। সেটুকু টপকে এলেই অলোকানন্দাদের ঘর। আজকাল বেপাড়ার দু একটা ছেলে উৎপাত করছে খুব। মুরগি ছানা চুরি করতে আসে। অলোকানন্দা তাদের সঙ্গে একা পেড়ে ওঠে না। বুক ঢিবঢিব করে। জানলার কবাট তুলে ভিতর থেকে ‘কে রে কে রে’ হাঁক পাড়ে শুধু। মোবাইলটা ঢুকিয়ে রাখতে সে পাশের ঘরে এসে কৃষ্ণেন্দুর কাঠের দেরাজটা খুলে ফেলল। দেরাজের প্রথম খোপেই একটা বাক্স।সেই বাক্সে মোবাইলটা রেখে দিল সে।তারপর ছেলের জামা প্যান্টগুলো গুছিয়ে রাখতে রাখতে নাকের কাছে এনে গন্ধ নিতে লাগল। মনে হচ্ছিল এই কৃষ্ণেন্দু যেন সেই বাচ্চাবেলার দিনের মতোই তার মাতৃস্তনের জন্য কেঁদে চলেছে অনবরত। চোখ মুছে অলোকানন্দা নিচের তাকে কৃষ্ণেন্দুর আঁকা ক্যানভাস পেপারের শিটগুলো বিছানায় পেতে রাখল। এক এক করে পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে আবার তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছিল।ক্যানভাসপেপারের ছবিগুলো যেন তার সঙ্গে কথা বলছে। ওই তো পাশের বাঁশঝাড়ের গাছগুলো। তার সঙ্গে ফিসফিস করে বলছে কতোকিছু। তারপর কালিধরা রান্নাঘরের অ্যালুমিনিয়ামের হাড়িটা। কলপাড়ের পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ। দেখতে দেখতে হঠাৎ শিউরে উঠল অলোকানন্দা। প্রথম কাগজগুলোর নীচে কয়েকটা রাফ খসরা রয়েছে। সেখানে নানান ভঙ্গিতে বসে থাকা নারীশরীর। নগ্ন। কখনও দুই হাঁটুর ভিতর মাথা গুঁজে অপেক্ষারত। কখনও বা উদাস চোখে বাইরের ধানখেতের দিকে তাকিয়ে থাকা। পেনসিল স্কেচ। ছবিতে মেয়েগুলোর মুখাবয়ব একরকম। ভারি চতুর।রহস্য ভরা।অল্প বয়স। তবে কি এই মেয়েটিই সহেলী! বুকের ভিতর ঢিবঢিব করতে শুরু করে দিল তার। এ সে কীই দেখল! আর্টিস্ট বনতে গেলে এমন নির্লজ্জ বনতে হয় জানতোই না অলোকানন্দা। এই কথা সে এখন কাকে জানাবে! ভাবতে ভাবতে অলোকানন্দা তক্তপোশের একপাশে কোলের ভিতর মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে আবার কাঁদতে লাগল। সেই শব্দ গোকুলঘরিয়ার কেউই শুনতে পেল না।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।