“গান ভালোবেসে গান” সংখ্যার গুচ্ছ কবিতায় সবর্ণা চট্টোপাধ্যায়

১। শোকের কাছে গান বেঁধেছি আমি

শোকের কাছে গান বেঁধেছি আমি
তানপুরাতে বাজাছে এক সুর
ভেতর জলে ঢেউ উঠেছে দুলে
মাঝদরিয়া, পাড় যে বহুদূর।
গানের বুক আঁকড়ে ধরি নখে
আঁচড়ে দিতে কষ্ট হয় বড়ো
ব্যথার স্রোত ভাসিয়ে দিলে পরে,
বুকের মাঝে জাপটে তাকে ধরো?
তখন তুমি নাইবা ডাকো নামে
বুঝতে বাকি থাকেনা কিছু আর
চুপ কথারা ভাসায় খড়কুটো
জল বেঁধেছে নদীর দুই পাড়
সুরের খেলা আকাশ জুড়ে চলে
খাঁচার পাখি যখন উড়ে যায়
দুই চোখেতে সাগর এসে মেশে
ঘরে ফেরার গান যে পাখি গায়
সে গান শোনার সময় রাত জানে
আধো আধো চোখ, বালিশে মুখ ঢাকা
গানের সে সুর ঘিরেছে কালো ছায়া
একলা শরীর সোঁদা গন্ধমাখা!

 

২।  ভিক্ষুক

ভিক্ষুকের দরজা ঠেলে বেরিয়ে আসছে গান
বাড়িয়েছ হাত, একমুঠো ভাতের জন্য?
গলার কাছে যে কাটা দাগ নিয়ে পেরিয়ে এসেছি
পঞ্চাশটা বসন্ত, তোমাকে ছাড়া সবই আকাল মনে হয়।
খরার যন্ত্রণায় ফাটে মাটি,
চোয়াল বেয়ে গড়িয়ে আসে কালো রক্ত।
দুবছর, যত কথা…
ফোনের দুপাশে সাক্ষী থেকেছে সময়।
ব্যথাদের ভাগাভাগি ধুনোর মতো ছেয়ে দিয়েছে
কঠিন বাস্তব।
ভিখারী ছাড়া আর কেই বা উজার করে এত গান?
খিদেতে ছটফট করে….
ভাত কিংবা শরীর।
চকমকি পাথরের মতো স্বপ্নেরা জ্বলে ওঠে
মৃত্যুর পরও কি আঁধার ঘিরে ধরে এত জোনাকি?

৩। গানের কাছে যেমন আশ্রয়

যতবার ভুলেছি বলি, পড়েছে যে ফিরে ফিরে মনে
মুঠোতে সুখের চাবি, আগলে রেখেছি অকারণে
গাছের ছায়ার নীচে, বইছে নদীর কালো জল
অভিনয় আসলে কী? জীবন মানে কি শুধু ছল?
পড়েনি তো প্রয়োজন, তবুও বাঁচিয়ে রাখো আজো
সবকিছু মুছে গেলে আলেয়ার পথটুকু খুঁজো।
যেমন যায় না ধরা শুধু এক মরীচিকা ভুলে
আলোর নেশাতে যায় হাজার হাজার পথ খুলে…
গানের ভেতরে জানো, এমনি যে নেশা এক আছে?
তোমাকে ছুঁয়েছি গানে, এসেছি আলোর আরো কাছে।
আগুনে পোড়াব যত ছাইয়ের নীচে চাপা শোক
দুজনের পথচলা এইভাবে একসাথে হোক।
আশ্রয় দিয়েছে সুর, আলো যেন জলকণা হয়ে
মুখের ওপরে জমে পদ্মর পাপড়িগুলো ছুঁয়ে
গড়িয়ে পড়লে জল পাতার শরীরে ওঠে ঢেউ
তুমি আমি বুঝি সব, সে ভাষা বোঝে না আর কেউ।
আমাদের ব্যথাগুলো গান হয়ে বাজে একসাথে
আলোরাও কথা বলে চুপিচুপি শুক্লপক্ষপাতে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।