সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে শুভস্মিতা কাঞ্জী (পর্ব – ১)

কলিকাতা বিশ্বাবিদ্যালয় থেকে সম্মানিক ভূগোল নিয়ে পাশ করার পর, ওখান থেকেই ভূগোলে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শেষ করে এই মুহূর্তে নিজের এন.জিও, নাচ এবং লেখালিখি নিয়ে আছেন। 

বন্ধু

“ক্লাসে এলি না কেন?”
“মিটিং পড়ে গেল হঠাৎ!”
“হঠাৎ!! বলা গেল না ? তুই জানিস আজ স্যার কত প্রশ্ন করেছেন! কত কথা শুনিয়েছেন! না আগে এলি না ক্লাসে এলি! আমাকে বাধ্য হয়ে আজ ক্লাস করতে হল আর এসব!”
“কী বলেছে?”
“এই যে তুমি, সারাদিন পার্টি পলিটিক্স ধিঙ্গিপনা করলে হবে তো? পড়াশোনার তো ধারপাশ দিয়ে যাও না! দেখব কিভাবে পাশ করো!” আরও কত কী!
“তা বলিসনি যে আমি গত দু’বার ইউনিভার্সিটিতে প্রথম দশে ছিলাম”
“তর্ক করতে বিরক্ত লাগছিল! তোকে পেটাতে ইচ্ছা করছিল!”
“সেই রে! সব দোষ তো নন্দ ঘোষ!”
“তা মিটিং এ কী ঠিক হল?”
“এবার প্রেসিডেন্ট পদের জন্য আমি লড়ব…পড়াশোনা আমার আরও ডকে উঠল!”
“তা কেন? আমি আছি নোটস দিয়ে দেবো ঠিক উতরে যাবি!”
“আচ্ছা যাক গে…তারপর বল তোর বাপের মাথা দিয়ে বিয়ের ভূত নামল?”
“না..রবিবার আসবে দেখতে!”
“তা যা বিয়ে করে নে!”
“আর ইউ সিরিয়াস নবারুন! সবসময় মজা ভালো লাগে না!”
“আরে মজা কই করলাম! তোর বাপ বুড়ো দাদু ধরে আনছে মোটা মাইনের বিয়ে করে সুখী হ!”
“ধুর…”
কলেজের মাঠের ঘাসে দু’জনে পা ছড়িয়ে গল্প করছিল…পড়ন্ত বিকেলের রোদ ওদের চোখে মুখে পড়ছিল…. নবারুনের কথায় রাগ করে উঠতে যায় মালিনী.. নবারুন ওর হাত ধরে…
“ছাড় ভালো লাগে না”
“কিছু হবে না দেখিস! আর তুই তো আমার মাতঙ্গিনী হাজরা, কমরেড আমার তোর অমতে তোর বিয়ে দেয় কার সাধ্যি!”
“আর তুই?”
“আমি কী?? আমি তোর বন্ধু..বিয়ে না হলে এক কমরেড বিয়ে হলে গিলতে যাবো সেই‌ এক কমরেড হয়ে!”
“ধুর!”
“হাহা”…
মালিনী নবারুন কে দেখে আর ভাবে, এত বুদ্ধিদীপ্ত চোখ মুখ, এত বুদ্ধি ধরে যে ছেলেটি সে বোঝে না মালিনী ওকে ঠিক কতটা ভালোবাসে, কতটা আগলে রাখে? ঠারেঠোরে কবার বোঝাতে চেয়েছিল ঠিকই কিন্তু নবারুন ততবার বলে দিয়েছে ওরা বন্ধু, খুব ভালো বন্ধু…কমরেড, যার পাশে থাকা যায় কিন্তু তার চেয়ে বেশি নয়…মালিনী আর কিছু ভাঙায়নি, কিন্তু শেষ কমাস বাবা যেভাবে উঠে পড়ে লেগেছে তাতে নবারুনের থেকে একবার শুনতে চেয়েছিল যে ভালোবাসি, তাহলে সেই ভরসায় অন্তত বাবা কে বলা যাবে..কিন্তু কোথায় কী!
ওদের প্রায় তিনবছরের বন্ধুত্ব, একসাথে ইউনিয়ন ঘরে পোস্টার বানানো, মিটিং মিছিলে হাঁটা, যত্ন নেওয়া, নোটস দেওয়া, স্যার ম্যামের হাত থেকে বাঁচানো সবেতেই দু’জন, সবাই জানত ওরা প্রেম করছে, মালিনীও তাই চাইত কিন্তু নবারুন বলত, ” সবাই বলছে,ভাবছে আমাদের নিয়ে ভাবতে দে, আমরা তো জানি আমরা কী। আমরা বন্ধুই…” মালিনী এরপর কী বলবে ভেবে পেত না…
সেদিন বাড়ি ফেরে মনটা ঠিক ছিল না , এক ক্লাসে বকা তার উপর নবারুনের অমন উত্তর না দেওয়া… বাবা আবার এসে বিয়ের কথা বলায়, বলে দেয়,
“আমি আর নবারুন একে অপরকে ভালোবাসি, ওকেই বিয়ে করব আর কাউকে নয়…দু’জনে চাকরি পাই তারপর…”
“কী?? কাকে বিয়ে করবে???”
“নবারুনকে…”
“ওই চালচুলোহীন, সারাক্ষন পার্টি পার্টি করে মেতে থাকা ফিউচারহীন কমিউনিস্ট ছেলেটাকে বিয়ে করবে তুমি?”
“হ্যাঁ তাই…আর কে বলেছে ওর ফিউচার নেই? ও চাকরি করবে, দু’জনে একসাথে চাকরি করব সাথে এই সমাজকেও বদলাবো!”
“ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার! এসব বোকা বোকা কথা ছাড়ো…তুমি অজয়কেই বিয়ে করবে! এই বলে দিলাম..”
“না বাবা তা সম্ভব নয়!”
“তাই সম্ভব”… বলে বাবা চলে গেছিল…সেই রাতে রাগের চোটে বাড়ি ছেড়ে পালাতে চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি…ধরা পড়ে যায়, বাবা ভীষণ মারে মালিনী কে… ওকে মামাবাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়…

(চলবে)

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।