মার্গে অনন্য সম্মান সুচন্দ্রা বসু (সেরা)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার

সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা পর্ব – ১০২
বিষয় – আত্মীয়

স্বজনের স্বরূপ

শ্রীরামপুর এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ সুরেন বর্মা। শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাড়িতে কেউ না থাকায় তিনি চিকিৎসার জন্য একাই শ্রীরামপুর হাসপাতালে এসেছিলেন। সঙ্গে কেউ না থাকার জন্য তাকে ফেরত পাঠিয়ে দেয় ।

বিদেশে থাকতেন তিনি। সেখান থেকে উপার্জনের সব টাকা ভাইয়ের ঠিকানায় পাঠাতেন।
নিজে কষ্ট করে জীবন যাপন করতেন।নিজের সাধ আহ্লাদ কিছু পূরণ করতেন না। বন্ধুরা পার্টি বা পিকনিকে গেলে খরচের ভয়ে তিনি সেখানে যেতেন না।নিজের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য ভালো পোশাক আশাক কিনতেন না। গাড়িভাড়ার খরচ বাঁচিয়ে অনেকটা পথ হেঁটে কারখানায় যেতেন আসতেন।ভাবতেন এখানে কষ্ট সহ্য করি। দেশে ফিরে গিয়ে সব সুখ সাচ্ছন্দ্য ভোগ করব।কিন্তু তিনি জানতেন না তার ভাগ্যে শেষে কি লেখা আছে।তার আশা ছিল দেশে ফিরে বাড়িঘর নির্মাণ করে পছন্দের কাউকে বিয়ে করবেন। অনেক বছর পর দেশে ফিরে এসে দেখলেন ভাই সব গুছিয়ে নিয়েছে কিন্তু তার জন্য কিছুই নেই। তা দেখে তিনি বসতির একটা ঘর ভাড়া করে সেখানে তিনি একাই থাকতেন।এবার কিছু হালকা কাজের সন্ধান করতে থাকেন।বস্তিরই একটি ছেলে তাকে বলেছিল ড্রাইভারের কাজের কথা।বিদেশে
থাকাকালীন ড্রাইভিং শিখেছিল।ফিরে এসে এখানে লাইসেন্স বার করে নিয়েছিল।
ছেলেটির সাথে ব্যবসায়ীর কাছে গেলে সুরেনকে তিনি ড্রাইভার হিসেবে রাখলেন।একা ছিল বলে সুরেনকে ভরণপোষণ, মাসের শেষে বেতনও দিতেন। বয়স বাড়ায় নানান রোগ শরীরে বাসা বাঁধে।ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে যবুথবু হয়ে পড়ে সুরেন। স্বজন থেকেও জীবন সায়াহ্নে এসে এত যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে তাকে সে বুঝতে পারেনি।

সুরেন শ্রমজিবি হাসপাতালে গেলে সেখান থেকেও ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরিসেবা না পেয়ে তিনি কাছের এক আত্মীয়-বাড়িতে যান। সেখানেও তিনি উপেক্ষিত হলেন।তার জরাজীর্ণ অবস্থা দেখে আত্মীয়রা বাড়িতেই ঢুকতে দিল না।
বৃদ্ধ আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। আর চলার ক্ষমতা ছিল না। পাশেই জঙ্গলের মধ্যে, জলার ধারে পড়ে থাকেন।

সেদিন বৃষ্টি পড়ছিল। রাজুর বেশ রাত হয়েছিল টোট নিয়ে ফিরতে।
জলার ধারে টোটোর হেড লাইটের আলোয়
বৃদ্ধকে দেখতে পায় সে।টোটো থেকে নেমে কাছে গিয়ে দেখে বৃদ্ধ গোঙাচ্ছে।তখন সে তাকে টোটোয় তুলে নিয়ে হাসপাতালে যায়।

তবে আত্মীয় বলে কাকে? যিনি বিপদ-আপদে,
দুঃখ-সুখে পাশে থাকেন, সহ যোগীতা করেন, দয়া দেখান কল্যাণ কামনা করেন, যার উপর নির্ভর করা যায় তিনিই আত্মীয়।

আত্মীয় বলতে অনেকে বোঝে কারো শরীরে একই বংশের রক্ত প্রবাহিত হলে সে আত্মীয় । বংশের বা কুটুমের বাইরে জন্ম নিলে তাদের আত্মীয় মনে করে না। অথচ অনেক সময় আমরাই আত্মীয় স্বজন কথাটা বলে থাকি।
স্বজন মানে খুব কাছের মানুষ একান্ত আপনজনকে বুঝায়।

রাজু বৃদ্ধের স্বজন হয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তির
ব্যবস্থা করে।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।